সালেহ ইমরান: [২.১] শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংস পরিস্থিতি এবং তার জেরে কারফিউয়ের কারণে এক সপ্তাহ বন্ধ ছিলো দেশের অর্থনীতির চাকা। পুরো তিনদিন বন্ধ ছিলো কলকারখানা। তবে অর্থনীতি সচল রাখতে গত সপ্তাহের বুধবার থেকে চালু করা হয় সব কারখানা।
[২.২] কিন্তু গ্যাস সংকটে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। বিশেষ করে পোশাকশিল্পগুলো গ্যাস সংকটে ভয়াবহ সমস্যায় পড়েছে। বেশিরভাগ কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই (প্রতি ঘন ইঞ্চি) থাকার কথা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪ পিএসআই। জনকণ্ঠ
[৩] বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে বাধ্য হয়ে কিছু পোশাক কারখানা ডিজেল বা অন্য কোনো বিকল্প উপায়ে উৎপাদন চালু রাখলেও অনেক কারখানায় ঘুরছে না চাকা।
[৪] সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় রোমেলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে আমদানিকরা তরলীকৃত গ্যাসের একটি টার্মিনাল। সিঙ্গাপুরে মেরামতে শেষে ১৪ জুলাই দেশে এলেও প্রতিস্থাপনের সময় এর যন্ত্রাংশে পাওয়া যায় ত্রুটি। এই যন্ত্রাংশটি এসে পৌঁছালেও সাগর উত্তাল থাকায় প্রতিস্থাপন করা যায়নি। সাগর শান্ত না হওয়া পর্যন্ত সেটি প্রতিস্থাপন সম্ভব নয় বলে জানা গেছে। ফলে কবে নাগাদ গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে সে ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি কেউ। বিডিনিউজ
[৫] গত ২৭ মে সাগরে ভাসতে থাকা একটি পল্টুনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের ব্যালাস্ট ট্যাংক। এই টার্মিনাল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ এমসিএফপিডি (মিলিয়ন কিউবিক ফিট পার ডে) গ্যাস চাহিদা পূরণ করতে পারছে না টার্মিনালটি।
[৬] ভাসমান টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গ্রাস সংকট আবার বেড়ে গেছে। যেখানে ১৫ পিএসআই চাপের বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র আড়াই থেকে ৪ পিএসআই। অথচ কারখানা চালাতে গেলে কমপক্ষে ৬ পিএসআই চাপ লাগে। সেই চাপ না থাকায় ঘুরছে না কারখানার চাকা। সময় টিভি
[৭] বাংলাদেশ নিচওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, তিনিদিন কারখানা বন্ধ থাকার পর যখন কারখানা আবার চালু করা হলো তখন থেকে আমরা মারাত্মক সমস্যা মোকাবিলা করছি। আমাদের কিছু যন্ত্রপাতি পুরনো থাকায় ডিজেল দিয়েও চালানো যায়, কিন্তু যাদের সেই সুবিধা নেই তারা কী করবেন? এমনিতেই সহিংস আন্দোলনের কারণে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। বিকেএমইএ
[৮] আমদানিকরা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য দেশে দুটি টার্মিনাল রয়েছে। এর একটি পরিচালনার দায়িত্বে আছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি সামিট গ্রুপ। অন্যটি মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী টার্মিনাল দু’টির প্রতিটির ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার। আর দুটি এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন (তরল গ্যাস থেকে বায়ু গ্যাসে রূপান্তর) টার্মিনালের ক্ষমতা এক হাজার ১০০ ঘনফুট। জাস্টনিউজ
[৯ ] পেট্রোবাংলা বলছে, সামিটের টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় এখন শুধু এক্সিলারেটের টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। অভ্যন্তরীণ কূপগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে আরো ২ হাজার ঘনফুট গ্যাস। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ১০০ ঘনফুট গ্যাসের। ফলে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকছে। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
[৯] পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন এ্যাান্ড মাইনস) কামরুজ্জামান খান বলেন, সামিটের টার্মিনালটির কারণে গ্যাসের সংকট তো রয়েছেই। তবে আশা করা হচ্ছে মাসখানেকের মধ্যে সাগর শান্ত হয়ে এলে টার্মিনালটি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে। তখন সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী
এসসি/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :