সালেহ ইমরান: [২] চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের মধ্যে বৈধপন্থায় রেমিট্যান্স না পাঠানোর প্রচারণায় রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরণের অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে জুলাই মাসে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহে মন্দার মধ্যে এই প্রচারণা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
[৩] অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে রাজনৈতিক সুস্থিরতা ফিরিয়ে আনতে না পারলে একদিকে রেমিট্যান্স আয় যেমন বাড়বে, অন্যদিকে বিদেশ থেকে মুদ্রা পাচারের বড় আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। মূলত সহিংস আন্দোলনের জের ধরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যাংক বন্ধ ও কারফিউ জারির কারণে রেমিট্যান্স আয় ব্যাপকভাবে কমে যায়। সহিংসতার সময় ১৯ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অথচ মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিনের রেমিট্যান্স আয় ছিলো ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার।বিবিসি বাংলা
[৪] সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে ১৯ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম কার্যত বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা সম্ভব ছিলো না। এর মধ্যে ১৯ জুলাইয়ের থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৈধপথে রেমিট্যান্স না পাঠাতে ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়। তাদের এই প্রচারণায় বিভ্রান্ত হন প্রবাসীরা।
[৫] প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ গ্রহণে শীর্ষ একটি ব্যাংক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম বলেন, প্রবাসী আয় নিয়ে এখনি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। ইন্টারনেট বন্ধে ব্যাংকিং লেনদেন না হওয়ায় এমনটি হয়েছে। তবে প্রবাসীদের মধ্যে প্রচারণাটার একটা নেতিবাচক প্রভাব তো থাকবেই। যায়যায়দিন
[৬] এদিকে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, রাজনৈতিক সংকটের সমাধান না হলে এবং আস্থার পরিবেশ পরিবেশ না ফিরলে রেমিট্যান্স যেমন কমবে তেমনি হুন্ডির মতো নন ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশ থেকে অর্থপাচারের আশঙ্কা বাড়বে।
[৭] সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশ থেকে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠাতে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনানুষ্ঠানকভাবে ব্যাংকগুলোকে বেশি মুনাফার অফার দিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
[৮] রেমিট্যান্স খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো হুন্ডি। সংকটের রাজনৈতিক সমাধান না হলে এর মাধ্যমে টাকা পাচার বেড়ে যেতে পারে। রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে টাকা পাচার বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে যারা অবৈধ পন্থায় টাকা কামিয়েছেন তারাও সে টাকা দ্রুত দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
[৯] নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য একটি ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, সরলমনা প্রবাসীরা নেতিবাচক প্রচারণায় বিভ্রান্ত হবেন এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে এই নেতিবাচক প্রচারণার প্রভাব বুঝতে সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে। এটা বিভিন্ন দেশের হুণ্ডি চক্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদশের সরকারবিরোধীদের ক্যাম্পেইনও হতে পারে।
[১০] উল্লেখ্য জুন মাসে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ ২৫৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। এটি আগের বছরের জুন মাসের রেমিট্যান্স আয়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্পাদনা: কামরুজ্জামান
এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :