শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৯ জুলাই, ২০২৪, ০৮:০৫ রাত
আপডেট : ১৯ অক্টোবর, ২০২৪, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পেঁয়াজের বাজারে ফের অস্থিরতা, দাম কমানোর পথ খুঁজছে সরকার

মনজুর এ আজিজ: [২] বাজারে দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। আর দেড় মাসের ব্যবধানে হয়েছে দ্বিগুণ। বাংলাদেশে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার ঘটনা গত কয়েক বছর ধরেই ঘটছে। ২০১৯ সালে ঘাটতি দেখা দিলে কার্গো বিমানে জরুরিভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানি করেও সুফল আসেনি। তখন ২৫০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনে খেয়েছে মানুষ।

[৩] আমদানিকারক আবদুল মাজেদ জানান, মিশর, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ এনে ব্যবসায়ীরা ২০১৯ সালে কোটি কোটি টাকা লোকসান করেছেন। এক কোটি টাকার পেঁয়াজ ২০ লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়নি। পচে নষ্ট হয়েছে। সে ঝুঁকি এবার কেউ নেবে না। 

[৪] ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের দাম এবার স্থিতিশীল থাকবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। দাম আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে, যদি সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হয়। আগে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লে ভারত থেকে আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল করা হতো। এবার ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছে। যে কারণে সে দেশেও পেঁয়াজের দাম বেশি। বছরের শুরু থেকেই উৎপাদন কম হওয়ার কারণ দেখিয়ে প্রথমে দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে গত মে মাসে আমদানির অনুমতি দিলেও শুল্ক বাড়িয়ে দেয়।

[৫] ভারতে পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (এমইপি) এখন টনপ্রতি ৫৫০ মার্কিন ডলার। যা আমদানি করতে আরও প্রায় ৪০ শতাংশ শুল্ক-কর রয়েছে। এতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে কেজিপ্রতি খরচ পড়ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯০ টাকা। যে কারণে এখন খুব বেশি পেঁয়াজ আমদানি করছেন না বাংলাদেশের আমদানিকারকরা।

[৬] কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। এর এক-তৃতীয়াংশ আমদানি করে মেটাতে হয়। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৪ লাখ টন। তার আগের বছর পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ৩৫ লাখ টন। অর্থাৎ চাহিদার চেয়েও দেশে এখন বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। সে হিসাবে বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।

[৭] তবে এ পরিসংখ্যান যে ভুল সেটা প্রমাণ হয় আমদানির তথ্য ও বাজার সংশ্লিষ্টদের তথ্যে। কারণ দেশে প্রতি বছর ৭ থেকে ৮ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম, তারপরেও চাহিদা বেশি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়ে ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। 

[৮] ব্যবসায়ীরা বলছেন, মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা বাড়ার কারণে পেঁয়াজের ব্যবহার আরও বেড়েছে। দেশে প্রায় ৪০ লাখ টন পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে এ চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। এ কারণে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে।

[৯] বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলা গবেষণা কেন্দ্র। এ সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সাধারণত পেঁয়াজের সবচেয়ে বেশি ঘাটতি থাকে। এবার এখনই পেঁয়াজের বাজার চড়া। ওই সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

[১০] পেঁয়াজের দাম কমানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব মালেকা খায়রুন্নেছা গণমাধ্যমকে বলেন, এখনো কিছু চূড়ান্ত নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও কিভাবে পেঁয়াজের দাম কমানো যায় সে পথ খুঁজছে। আমরা আলোচনার মধ্যে আছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব

এসবি২

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়