শিরোনাম
◈ কেম্যান আইল্যান্ডস ও পাঁচ দেশে শেখ হাসিনার সম্পদের সন্ধান মিলেছে ◈ আইপিএল থেকে সরে দাঁড়িয়ে নিষেধাজ্ঞার মুখে ইংল্যান্ডের হ্যারি ব্রুক ◈ ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী, তাই আমি তাকে বলি: আসুন, আমাদের সঙ্গে চুক্তি করুন, গার্ডিয়ানকে ড. ইউনূস ◈ রোজার ঈদে এবার পাওয়া যাবে না নতুন টাকা ◈ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়েজক হয়েও পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে পাকিস্তানের প্রতিনিধি ছিলো না ◈ খেলোয়াড়দের বছরে বেতনবাবদ পিএসজির ব্যয় ৮ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা  ◈ অপরাধে জড়াচ্ছে সমন্বয়করা, ভুয়া সমন্বয়ক পরিচয়ে অপরাধ করছে অনেকে ◈ রমজান মাসে ভারতের গুলমার্গে ফ্যাশন শো! বিধানসভায় নিন্দা ◈ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ◈ গণবিজ্ঞপ্তি জারি, নতুন দলের নিবন্ধন পেতে ২০ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন

প্রকাশিত : ১০ মার্চ, ২০২৫, ১০:০৭ দুপুর
আপডেট : ১০ মার্চ, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এস আলমের পিএস থেকে ডিএমডি হওয়া আকিজের হিসাবে ১২৬৬ কোটি টাকা

নয়া দিগন্ত: আকিজ উদ্দিন ও তার বেনামি ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে এ পর্যন্ত স্থিতি রয়েছে এক হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এছাড়া সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা। একটি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

স্বৈরাচার সরকারের শেষ আমলে ব্যাংকিংখাত অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংকগুলোতে ছিল আকিজ উদ্দিন এক আতঙ্কের নাম। ছিলেন শীর্ষ ব্যাংক লুটেরা এস আলমের পিএস। এ সময় চোখে পড়ে যায় পতিত সরকারের শীর্ষ মহলের। আর তারই নির্দেশে পলাতক বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বেসরকারি খাতের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি পদে বসানোর আয়োজন করে দেন। আকিজ উদ্দিনই একমাত্র সৌভাগ্যবান ডিএমডি যিনি নিয়োগপত্র বুঝে নেন পতিত সরকারের পলাতক গভর্নরের হাত থেকে। এরপর তার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গভর্নরের বাসায় নিয়মিত আড্ডায় মেতে থাকতেন এই আকিজ উদ্দিন। এস আলমের দখলকৃত ৮টি ব্যাংক থেকে নানা কায়দায় অর্থ বের করে এস আলম ও পতিত সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদেরকে যেমন সরবরাহ করতেন, তেমনি নিজেও কিছু অর্থ হাতিয়ে নিতেন। আর এ সুবাদেই আকিজ উদ্দিন ও তার বেনামি ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে এ পর্যন্ত স্থিতি রয়েছে এক হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এছাড়া সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা। একটি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

যেভাবে অনুসন্ধানের সূত্রপাত : সোনালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ শাখার গ্রাহক ‘আলম ট্রেডিং এন্ড বিজনেস হাউস’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে (নং-১০১৫৭-২০০১১৫৯) অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। ওই হিসেবের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নামেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ট্রেড লাইসেন্স অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি রড, সিমেন্ট ও সিআই শীট বিক্রেতা। হিসাব খোলার ফরম অনুযায়ী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের পিএস এবং ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আকিজ উদ্দিনের সাথে পরিচিতির সূত্র ধরে স্থায়ী আমানত করার উদ্দেশ্যে হিসাবটি খোলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে গ্রাহকের সাথে যোগাযোগের জন্য আকিজ উদ্দিনের ফোন নম্বর (নং- ০১৯৮৫৫০৮০০০) ব্যবহার করা হয়েছে। আকিজ উদ্দিনকে হিসাবধারীর ব্যবসায়িক বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হিসাবটি মো: আকিজ উদ্দিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেনামি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধরে নেয়ায় পরবর্তীতে আকিজ উদ্দিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়। অনুসন্ধানে আকিজ উদ্দিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে তফসিলি ব্যাংকসমূহে বেশকিছু হিসাব পরিচালিত হওয়ার নজির পাওয়া যায়। আকিজ উদ্দিন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের পি.এস ও ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি হওয়ায় তার পদ-পদবি ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ব্যাংক হতে অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে বিনিয়োগ গ্রহণ, করপোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি বা সিএসআরের অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন উপায়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়ায় প্রমাণ পাওয়া যায়।

তদন্ত টিমের অনুসন্ধানে আকিজ উদ্দিনের নিজ নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৩টি এবং তার স্ত্রী রোকসানা খানমের নামে তিনটি হিসাব পাওয়া যায়। এছাড়াও আকিজের মা রাবিয়া খাতুনের নামে তফসিলি ব্যাংকে ৬টি হিসাব পাওয়া যায়। আকিজের বোন হোসনে আরা বেগমের স্বামী নজরুল ইসলামের নামে ব্যাংকসমূহে মোট ৪৬টি হিসাব পাওয়া যায়। আকিজ উদ্দিনের অপর এক বোন শারমিন আকতারের (শামীম) স্বামী নাছির উদ্দিনের ২৮টি ও তার ভাই মুহাম্মদ সাইফু উদ্দীনের নামে ৯০টি হিসাব পাওয়া যায়। আকিজ উদ্দিনের পিএস মো: সাদ্দাম হোসেন ও তার স্ত্রী মর্জিনা আক্তারের নামে তফসিলি ব্যাংকসমূহে মোট ৪৩টি হিসাব পাওয়া যায়। এসব ব্যাংক হিসাবগুলোতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে আকিজ উদ্দিনের ফোন (নং- ০১৯৮৫৫০৮০০০) নম্বার দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও তদন্ত টিম কতিপয় ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত হিসাবে যোগাযোগের জন্য আফিতা উদ্দিনের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে, আলোচ্য হিসাবসমূহ আকিজ উদ্দিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেনামি হিসাব বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, আকিজ উদ্দিনের বেনামি অ্যাকাউন্ট নূরুল আলম, মুহাম্মদ মুশতাক মিঞা, নজরুল ইসলাম ও জিয়াউর রহমান সংশ্লিষ্ট হিসাবে জমা হয়েছে ৩৮৬ কোটি ২ লাখ টাকা, আকিজ উদ্দিন ও তার স্ত্রী রোকসানা খানম সংশ্লিষ্ট হিসাবে স্থিতি রয়েছে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আকিজ উদ্দিনের পিএস সাদ্দাম হোসেন ও তার স্ত্রী মর্জিনা বেগম সংশ্লিষ্ট হিসেবে স্থিতি রয়েছে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা , আলমাস আলী ও বেদারুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট হিসেবে স্থিতি রয়েছে ৮০০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সাইফু উদ্দিন, গোলামুর রহমান ও রাবেয়া খাতুন সংশ্লিষ্ট হিসাবগুলোতে স্থিতি রয়েছে ৭৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

জানা গেছে, এসব অ্যাকাউন্টগুলোতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে আকিজ উদ্দিনের ব্যাক্তিগত মোবাইল নম্বার। ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নানা কৌশলে অর্থ বের করে এস আলমকে সরবরাহ করা হয়। একই সাথে পতিত সরকারের বিভিন্ন মহলসহ শীর্ষ মহলকে সরবরাহ করার পাশাপাশি নিজেও কিছু অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। আর এতেই তার ব্যাংক হিসাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

তদন্তে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নিবন্ধিত ‘আলম ট্রেডিং এন্ড বিজনেস হাউস’ নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক নুরুল আলম। ট্রেড লাইসেন্স অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি রড, সিমেন্ট ও সি.আই শিট বিক্রেতা এবং প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা গোলসেন পার্ক (৪ ৩/এ, রাজা মহাজন লেন, আছাদগঞ্জ, চট্টগ্রাম সোনালী ব্যাংক পিএলসির পাঁচলাইশ শাখার প্রতিষ্ঠানটির নামে খোলা হিসাবের ফরমে যোগাযোগের জন্য আকিজ উদ্দিনের ফোন নম্বর (০১৯৮৫৫০৮০০০) ব্যবহার করা প্রতিষ্ঠানটি আকিজ উদ্দিনের বেনামি প্রতিষ্ঠান। হিসাব খোলার ফরম অনুযায়ী নুরুল আলম একজন ব্যবসায়ী এবং তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে অবস্থিত হলেও প্রতিষ্ঠানটির নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের করপোরেট শাখা ও গুলশান শাখা এবং ইসলামী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য করপোরেট শাখায় হিসাব খুলে লেনদেন পরিচালনা করার নজির পরিলক্ষিত হয়, যা অস্বাভাবিক মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নিবন্ধিত ‘নজরুল এন্টারপ্রাইজ’ নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক মো: নজরুল ইসলাম যিনি আকিজ উদ্দিনের বোন হোসনে আরা বেগমের স্বামী। ট্রেড লাইসেন্স অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং এর ব্যবসায়িক ঠিকানা ২/সি, পুরানা পল্টন, শাওন টাওয়ার (১১ তলা) ঢাকা। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা ঢাকা হলেও বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন শাখায় হিসাব খুলে লেনদেন পরিচালনা করার নজির পরিলক্ষিত হয়, যা অস্বাভাবিক মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। রূপালী ব্যাংকের ও আর নিজাম রোড শাখায় রক্ষিত প্রতিষ্ঠানটির হিসাব (নং-১৫৫২০২০০০৬৯৬৯) খোলার ফরমে গ্রাহকের সাথে যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর ০১৮৩৫২৬৬১৫৫ উল্লেখ করা হয়েছে। পরিচিতি সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার ট্রু কলার এবং অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ফোন নম্বরটি আকিজ উদ্দিনের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর। ফলে, প্রতিষ্ঠানটি আকিজ উদ্দিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে আকিজ উদ্দিনের বক্তব্য জানতে মোবাইল নম্বারে (০১৯৮৫৫০৮০০০) যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কয়েকবার রিং হলেও তা কেউ রিসিভ করেননি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়