শিরোনাম
◈ শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠনের ঘোষণা, রাজনীতিতে নানা আলোচনা ◈ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের সহযোদ্ধাদের হুমকি দিচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে: আখতার হোসেন (ভিডিও) ◈ ভারতের সাম্ভালে মুসলিম সংসদ সদস্যকে বিদ্যুৎ চুরির জন্যে ২ কোটি টাকা জরিমানা ◈ কেউ যেন জাতির মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে না পারে: মির্জা ফখরুল (ভিডিও) ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অসন্তোষ, ২০২৫ সালেই নির্বাচন চায় বিএনপি নেতারা ◈ পুলিশ ও জনগণ একে অপরের পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে কাজ করবে: সিটিটিসি প্রধান  ◈ বড়দিন উপলক্ষে নৌভ্রমণ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ৩৮ জনের প্রাণহানি ◈ বিএনপি অফিসে আ.লীগের হামলা, আহত ১০ ◈ ২৫ ক্যাডারের নতুন সংগঠন ◈ চলতি মাসের ২১ দিনে এক টাকাও রেমিট্যান্স আসেনি যে ১০ ব্যাংকে

প্রকাশিত : ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:৪১ দুপুর
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভয়ঙ্কর অপরাধ জোন ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর

আইজকে থিক্যা সব হিসাব কিতাব তুই দিবি, যদি না দ্যাস, তোরে কিন্তু একদম : চাপাতি হাতে সন্ত্রাসী

ইত্তেফাক প্রতিবেদন: চাপাতি হাতে সন্ত্রাসী: ওই ডিশের লাইন কার। জোরে ক। আমিন বলেন, ‘তোমগো তোমগো, তোমাগো।’ সন্ত্রাসী বলতে থাকে, ‘আইজকে থিক্যা সব হিসাব কিতাব তুই দিবি। আর যদি না দ্যাস, বুজিস। আর যদি না দ্যাস, তাইলে বুজিস, তোরে কিন্তু একদম----। সব বিল দিবি।’

রাজধানীর আজিমপুরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন। সম্প্রতি একটি ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, আমিনকে দুই হাত দুই ব্যক্তি ধরে রেখেছে। মাথার চুল একজন টেনে ধরছে। একজন ব্যক্তি তার গলায় চকচকে চাপাতি ধরছে। জবাই করার ভঙ্গিতে চাপাতি চালানোর পূর্ব মূহুর্তে আরেকজন আরেকটি চকচকে চাপাতি দিয়ে হুমকি দিচ্ছে। সেই ভিডিও ফুটেজে সন্ত্রাসীদের হুমকি ও আমিনের সঙ্গে কথোপকথন তুলে ধরা হল।

আরেক সন্ত্রাসী চাপাতি নিয়ে এভাবে হুমকি দিতে থাকে। বলতে শোনা যায়, ‘তোরে কিন্তু কথা কওয়ায় দিচ্ছিলাম। তোরে কিন্তু সম্মান দিচ্ছিলাম। একটা জাগায় আনছিলাম। দাম দ্যাস নাই।’

আমিন বলেন, ‘কেডা দাম দেয় নাই? আমার লগে কোনো সম্পর্ক নাই।’ এই সময় আমিনের চুলের মুঠি ধরে মাথা নিচে শোয়াতে থাকে। একজন চাপাতি তার গলার কাছে ঠেকিয়ে বলে, ‘তুই নাম দ্যাস নাই। যুদি পিচ্চির এইহানে, যুদি পিঠ থাকে পিচ্চির লগে, এই অঞ্চল ছাইড়া মোহাম্মদপুর যাইবি।’

ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী প্রকাশ্যে অস্ত্র দিয়ে এমন হুমকি দেয়া ব্যক্তিরা  সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ওরফে ইমন বাহিনীর অস্ত্রধারী ক্যাডার। 

মোহাম্মদপুরের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের শেল্টারে আমিন আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেওয়ায় ব্যবহৃত বাঁশ ও চাটাই সরবরাহের ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণে নেয়। পিচ্চি হেলালের শেল্টারে আমিন আজিমপুর এলাকার চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণে নেয় বলে ইমন বাহিনীর লোকজন তাকে অপহরণ করে অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেয়। এরপর থেকে আমিনও ইমন বাহিনীর কাছে চাঁদা দেয়। ইমন বাহিনীতে এখন হেজাজ, কিলার কামাল, মেহেদি হাসান অনিক ওরফে অনিক, পারভেজ, প্রিন্স, জিটুসহ ২০ জনের একটি ক্যাডার বাহিনী কাজ করে।

ইমনের ক্যাডার বাহিনী ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ, সুলতানগঞ্জ, জিগাতলা, ট্যানারি মোড়, রায়েরবাজার, বেরিবাঁধ, শঙ্কর, সেন্ট্রাল রোড, গ্রিন রোড ও পশ্চিম ধানমন্ডি এলাকায় এখন প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। গত ১ ডিসেম্বর সুলতানগঞ্জের হেডওয়ে রাজকমল নামে একটি অ্যাপার্টমেন্টে ইমনের ক্যাডার বাহিনীর বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে অংশ নিতে এসে মোটরসাইকেলে করে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে কিলার কামালের গ্রুপ।

প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া: ২ ডিসেম্বর ইমন বাহিনীর ক্যাডার গ্রুপ হাজারীবাগের ট্যানারি ব্যবসায়ী হেলাল, দুলাল ও বাদল নামে তিন ব্যবসায়ীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। বেরিবাঁধের সড়কের পাশে একটি চায়ের দোকানে তারা তিন ব্যবসায়ীকে নামিয়ে হুমকি দেয়। তাদের তিন জনের কাছ ৫ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করে। পরদিন এই তিন ব্যবসায়ী কিলার কামাল, অনিক, হেজাজ ও পারভেজের কাছে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দেয়।

গত ৮ ডিসেম্বর হাজারীবাগের বেরিবাধ এলাকায় একটি ফলের মার্কেটে আনুমানিক ২০ টি মোটরসাইকেল এসে থামে। প্রতিটি মোটরসাইকেলে চালকসহ তিন জন করে আরোহী ছিলেন। এদের অনেকের হাতে পিস্তল ও চাপাতি দেখা যায়। হাজারীবাগ থানা বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান মজুর মালিকানাধীন ফলের মার্কেটে তারা প্রবেশ করে। ওই মার্কেট থেকে মাসে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তারা মজুকে হুমকি দিয়ে চলে যায়।

গত ১৩ ডিসেম্বর হাজারীবাগের লুনা ট্যানারির স্পিরিট চামড়া ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ইমন বাহিনীর ক্যাডার বাহিনী। একটি টং ঘরে আটকে রাখে ওই ব্যবসায়ীকে। তার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে ব্যবসায়ী তাদেরকে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে রাজি হওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনার পর ওই ব্যবসায়ী বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা করেন। 

ইমন ক্যাডার বাহিনীর নাম ব্যবহার করে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী চাঁদার দাবিতে ধানমন্ডির ১০/এ নম্বর রোডে পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্সের কার্যালয়ে ঢুকে সেখানে অবস্থানরত প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের ওপর হামলা চালায় এবং ব্যাপক ভাংচুর করে। তারা ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স থেকে অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দিয়েছে পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ। পুলিশ ভিডিও ফুটেজটি বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয় যে, মতিঝিল থানা যুবদলের সচিব ফারুক এবং ওয়ারী থানা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ডেভিড এই হামলা ও চাঁদাবাজিতে মদদ দিয়েছে। চাঁদা দাবি করার সময় নয়নের নেতৃত্বে যুবদল কর্মী সাজিদ, রাজ, মমিন ব্যাপারী সঙ্গে ছিল। 

রাজধানীর জিগাতলার জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালের পাশে একটি নবনির্মিত বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের বেশ কয়েকটি ফ্লোরের মালিকদের কাছ থেকে ইমন বাহিনী চাঁদা দাবি করেছে। এক মাস আগে একজন ফ্লোর মালিক তার ফ্লোরের কিছু অংশ  (স্পেস) বিক্রি করতে চাইলে ইমন বাহিনী চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে ওই বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রি করা যাবে না। এই হুমকি অন্যান্য ফ্লোর মালিকদের কাছেও দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত ওই বাণিজ্যিক ভবনের ফ্লোরগুলো বিক্রি করতে পারেননি মালিকরা।

পিচ্চি হেলালের নিয়ন্ত্রণে মোহাম্মদপুর: ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জেল থেকে অন্যান্য শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে পিচ্চি হেলালও জামিনে মুক্ত হন। জেল থেকে বেরিয়ে তার পুরান সাম্রাজ্য ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। গত ২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজারে সাদেক খান আড়তের সামনে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশের ধারণা ওই দুই যুবক বিগত আওয়ামী সরকারের সময় কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফের অনুসারী ছিলেন। এ কারণে জেল থেকে পিচ্চি হেলাল মুক্তি পেয়েই জোসেফের দুই অনুসারীকে হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে পিচ্চি হেলাল রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর, আদাবর, রিং রোড, শ্যামলী, তাজমহল রোড, টাউন হল বাজার, লালমাটিয়া, কৃষি মার্কেট, শিয়া মসজিদ এলাকা ও সাত মসজিদ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
 
তবে পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এলাকার দখল নিতে সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের বিরোধ থেকে জোড়া খুনের ওই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর পিচ্চি হেলালকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক নারী অভিযোগ করেন, তার স্বামী মো. সুমন মিয়াকে সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে নির্যাতন করিয়েছে। জেল থেকে বেরিয়ে পিচ্চি হেলাল মোহাম্মদপুর এলাকায় শালিস বৈঠক বসিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছে। 

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসীরা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, এমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। পুরোনো সহযোগীদের সংগঠিত করে অবৈধভাবে অর্থ সংগ্রহের জন্য এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার ও ভয়ের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন তারা। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকে পরিস্থিতি বুঝে এখন রাজনৈতিকভাবে পরিচিতি পাওয়ার চেষ্টা করেন। এ কারণে রাজনৈতিক দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স শাখার উপকমিশনার মো. তালেবুর রহমান বলেন, সন্ত্রাসী যেই হোক, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আগস্ট পরবর্তী দিনগুলোতে সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানের চেয়ে বর্তমানে আরও জোরদার হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানমন্ডি, জিগাতলা ও মোহাম্মদপুর এলাকার বেশ কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে পুলিশের কোনো ছাড় নেই। তাদেরকে পাওয়া মাত্র গ্রেফতার করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়