শিরোনাম
◈ সরকারি খরচে কেউ হজ করতে পারবেন না ◈ তিনবার বিসিএসের নিয়ম অযৌক্তিক, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ◈ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে খুশি, কিন্তু বিএনপিকে নিষিদ্ধ করলে আমরা কী করব: গয়েশ্বর ◈ ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে নৌকায় ভাসছে ১৪০ রোহিঙ্গা ◈ ফুটবল ফেডারেশনের লোগো নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করা যাবে না ◈ বাংলাদেশকে হারিয়ে ১০ বছর পর উপমহাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের খরা কাটলো: মার্করাম ◈ লড়াই করতে পারলো না, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সহজেই মিরপুর টেস্ট হেরে গেলো বাংলাদেশ ◈ সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন গ্রেপ্তার  ◈ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ◈ ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব: কলকাতা বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা, ২০০ ট্রেনের যাত্রা বাতিল

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০২৪, ১২:২৮ দুপুর
আপডেট : ১৭ অক্টোবর, ২০২৪, ০১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আসামী ডিউটি করতাছে, টাকা নিতাছে ঘুমাইতেছে আর আমি ঘুমাইতে পারছি না : ইমাম হাসানের মা

একদল পুলিশের সামনে নিরস্ত্র দুজন তরুণ। বন্দুক তাক করে একজন গুলি ছুড়ছে। আর সামনে গুলিবিদ্ধ একজনকে টেনে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন যুবক। শেষ পর্যন্ত না পেরে ওই যুবক দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। আহত পড়ে থাকে অপরজন।

জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলির এই ভিডিও ফেইসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে ঘটনাটি ছিল বিশে জুলাইয়ের। ভিডিওটিতে যে ছেলেটি পড়ে ছিল সেদিনই তার মৃত্যু হয়। ছেলেটির নাম ইমাম হাসান ভুঁইয়া তাইম। সে ছিল নারায়ণগঞ্জের একটি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর তার বাবা হলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা যার নাম ময়নাল হোসেন।

নিরস্ত্র ছাত্র ইমাম হাসানকে শুধু গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। তাকে হাসপাতালে নিতেও বাধা দেয়া হয়েছিল। ঢাকা মেডিকেলে ছেলের মরদেহে গুলি দেখার পর মোবাইলে একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এই পুলিশ সদস্যই জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘একজনকে মারতে কতগুলো গুলি লাগে স্যার’। ময়নাল হোসেনের এই বক্তব্যকে শিরোনাম করে বাংলাদেশের জাতীয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন বেশ সাড়া ফেলেছিল।

পুলিশের গুলির প্রত্যক্ষদর্শী এবং ঘটনার ভিডিও চিত্র থাকার কারণে যিনি গুলি করেছিলেন তাকে চিহ্নিত করে মামলা দায়ের করেছে পরিবারটি। যাত্রাবাড়ী থানার আওতায় ঘটনা ঘটলেও আদালতের নির্দেশে ডেমরা থানায় এজাহারভুক্ত হয় তাদের মামলা। তবে এ মামলা থানায় এজাহারভুক্ত করতে দুইদিন সিএমএম আদালতে ঘুরেছেন ইমাম হাসানের স্বজনরা।

ইমাম হাসানের মা পারভীন আক্তারের অভিযোগ প্রথমদিন আদালতে শুনানির পর মামলাটি পিবিআইকে দিয়ে তদন্তের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু পরদিন ছাত্র প্রতিনিধি এবং পরিবারের সদস্যরা আদালতে গিয়ে এক প্রকার অবস্থান নেয়ার পর মামলা ডেমরা থানায় এজাহারভুক্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। পরে থানায় গিয়ে মামলাটি এজাহারভুক্ত করতেও টালবাহানা করে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে বলে জানায় পরিবারটি।

পারভীন আক্তার প্রশ্ন রেখে বলেন, “আসামী ডিউটি করতাছে, টাকা নিতাছে ঘুমাইতেছে একমাস হইয়া গেছে আর আমি ঘুমাইতে পারছি না। এইডা কেমন কথা। দেশের মধ্যে কী বিচার? আমি পুলিশের বউ হইয়াও বিচার পাচ্ছি না তাইলে সাধারণ মানুষ কি বিচার পাইবো?’

থানায় প্রিয়’র মায়ের ১২ ঘণ্টার অপেক্ষা
রংপুর থেকে মামলা করতে ঢাকায় এসেছেন তাহির জামান প্রিয়র মা সামছি আরা জামান। রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে সংঘর্ষ চলাকালীন ১৯শে জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তাহির জামান প্রিয়।

পুত্র হত্যার বিচারের জন্য মামলা করতে ভোগান্তি ও হয়রানির অভিযোগ করেন মিজ জামান । মামলা রুজু করতে নিউমার্কেট থানায় অবস্থান নিয়ে ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হন তিনি এবং প্রিয়’র বন্ধুরা।

প্রিয়র মা সামছি আরা জামান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপিসহ নিউমার্কেট থানার দুজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।

নিউমার্কেট থানায় মঙ্গলবার বেলা এগারোটা থেকে বসে থেকে রাত বারোটার দিকে মামলা এজাহারভুক্ত করে থানা ত্যাগ করেন।

ওইদিন থানায় গিয়ে দেখা যায় প্রিয়র মা এবং কয়েকজন বন্ধু থানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন। বিবিসিকে তিনি বলেছিলেন, যতক্ষণ মামলা না নেয়া হবে থানায় অবস্থান করবেন।

“আমরা যে মামলাটা করেছি মামলায় এই থানার (নিউমার্কেট) দায়িত্বে যিনি আছেন মেইন ওনারও নাম দেয়া হয়েছে এর আগে যিনি ছিলেন ওনারও নাম দেয়া হয়েছে। দেশতো স্বাধীন বলতে দুর্নীতি বৈষম্য দূর করার জন্য এই স্বাধীন। এই স্বাধীন হলেও থানাগুলো যে এখনো পরাধীন আছে সেটা আজকে এসে বুঝতে পারলাম।”

মামলা দুর্বল হচ্ছে !
ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের পক্ষে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের শত শত আসামি দিয়ে যেভাবে মামলা হচ্ছে তাতে করে মামলা অনেকক্ষেত্রে দুর্বল হচ্ছে বলে মনে করেন আইনজীবীরা।

সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া শুরুর দিকে একটি মামলা দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “ঘটনার বর্ণনাগুলো এতটা শ্যালো কোনো কোনো জায়গায়। ঢাকার একটা মামলা যেটা আদালতে মামলাটা করা হয়েছে। সেটা এফআইআর হিসেবে ট্রিট করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।''

''এফআইআরটা দেখে আমার কাছে খুব একটা জুৎসই মনে হয়নি। এফআইআর-এ সুস্পষ্ট না করলেই একটা মামলা দুর্বল হয়ে যাবে আমি সেটা বলছি না। এটা তদন্তের মধ্যেই অনেক কিছু চলে আসতে পারে। ”

মি. বড়ুয়া বলছেন সমস্যাটা এখানেই কারণ তদন্ত কে করবে।

“পুলিশ গুলি করলো এখন পুলিশই তদন্ত করবে। কাকে দিয়ে করাবেন এখানেতো সব বাহিনী সংশ্লিষ্ট ছিল।”

“বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে যেভাবে বিভিন্ন থানার হত্যা মামলাতে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে এটাতো হাস্যকর। আপনি কমন রেসপনসিবিলিটি যদি আনতে হয় সেটার একটা যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা তো আপনার ওখানে থাকতে হবে।''

''মোহাম্মদপুর থানার একটা শিক্ষার্থীর হত্যা মামলাতে কোনো একজন রাজনৈতিক নেতাকে ধরলেন সেখানে যদি আপনি স্ট্যাবলিশ করতে না পারেন তিনি তো ফাঁকগলে বেরিয়ে যাবেন। অথচ দেখা যাচ্ছে কি সেই ব্যক্তির একাধিক অপরাধ আছে যেগুলোর কারণে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়ে তাকে বিচারের মুখোমুখী করাটা জরুরি। রাষ্ট্রের সার্থেই জরুরি এদেশের মানুষের স্বার্থেই জরুরি,”বলছিলেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। সূত্র : বিবিসিবাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়