মাসুদ আলম: [২] সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হলে পিএসসি সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে আমরা কাউকে ছাড় দেবো না।
[৩] মঙ্গলবার দুপুরে পিএসসি ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
[৪] এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের ঘটনায় সোমবার রাতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পিএসসি।
[৫] তিনি আরও বলেন, বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস যে হয়নি বা হতে পারে না, তা শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যায় না। লটারিতে কোন সেট আসবে, সেটা তো শুধু সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ বলতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে প্রশ্নফাঁস খুবই কঠিন। তবে প্রশ্নফাঁস যে হয়নি আমি এটুকু বলবো, এটা (প্রশ্নফাঁস) করা ভীষণ ভীষণ কঠিন।
[৬] সোহরাব হোসাইন বলেন, পিএসসি অধীনে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলে এ পরীক্ষা বাতিল করা হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের বিষয়ে ইতিমধ্যে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।
[৭] তিনি আরও বলেন, পিএসসির অধীনে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যিনি তৈরি করেন, তার পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন থাকে। অনেক সময় তারা প্রশ্নপত্র তৈরি করে সরাসরি, অনেক সময় ডাকযোগে পিএসসিতে পাঠান। সেটা সিলগালা করা থাকে। ১০ জনের কাছ থেকে প্রশ্ন পাওয়ার পর একদিন আমরা প্রশ্নপত্র মডারেশনের জন্য বৈঠক ডাকি। গোপন কক্ষে সিলগালা করা সেই প্রশ্ন খোলা হয়। সেখানে মডারেশনের কাজ শেষে আবারও সিলগালা করে বের করা হয়। সেখান থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় প্রশ্ন প্রেসে যায়। প্রেস থেকে আসার পর পুলিশ প্রহরায় একটি কক্ষে তালাবদ্ধ রাখা হয়।
[৮] চেয়ারম্যান বলেন, যেদিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, সেদিন দুজন বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে এখানে (পিএসসি) লটারি হয়। সকাল ১০টায় পরীক্ষা হলে ৯টা ২০ মিনিট থেকে ৯টা ২৫ মিনিটে লটারি করে ৯টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রে জানাতে হয়। বিসিএসের ক্ষেত্রে ছয় সেট থেকে একটি সেট লটারির মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয়। আর নন-ক্যাডার বা দশম গ্রেড ও তার পরের গ্রেডগুলোর জন্য চারটি সেট থাকে, সেখান থেকে লটারিতে একটি নেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রশ্নফাঁস করাটা কঠিন।
[৯] ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এটা দিয়ে প্রশ্নফাঁস প্রমাণ হয় না। আপনারা যে কেউ একটা মোবাইল ফোন আমাকে দেন। পাঁচদিন আগে একটা ছবি আপনি পোস্ট করেছেন, সেটা আমি আজ অনুষ্ঠিত একটা পরীক্ষার প্রশ্ন দিয়ে বদলে দিতে পারবো। মনে হবে পরীক্ষার পাঁচদিন আগে এ প্রশ্নপত্রটা পোস্ট করা হয়েছে। এটা করা সম্ভব হবে। এ ধরনের ঘটনা দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, প্রমাণ করা যায় না।
[১০] রেলওয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা চাকরি প্রত্যাশী ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সরকারি কর্ম কমিশনের সামনে বিক্ষোভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা ১০ জন আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওদের আমি বুঝিয়ে বলেছি। আমাদের ওপর প্রচুর পরীক্ষার চাপ। নন ক্যাডারের ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে কোনো একটা ডিপার্টমেন্টে ১২০ ধরনেরও পদ রয়েছে। ১২০ ধরনের পরীক্ষা নেওয়াটা আমরা কমিশনে বসে সহজিকরণ করেছি।
[১১] সাধারণত পরীক্ষাগুলো নিয়ে সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগের জন্য। এখন আপনাদের এখান থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে অভিযোগ এসেছে, সেটা যদি সত্য হয় তাহলে ওই নামগুলো দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চাকরি থেকে অব্যাহতি সুপারিশ করবেন কিনা জানতে চাইলে বিপিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, এটা খুব কঠিন প্রশ্ন। এই মুহূর্তে আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ না করে বা কোনো বিধি-বিধান না দেখে এর উত্তর দেওয়া সম্ভব না। সম্পাদনা: ইকবাল খান
এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :