শিরোনাম
◈ চাঁনখারপুল গণহত্যা : সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ◈ এবার ব্যাংক হিসাব তলব মডেল মেঘনা আলমের ◈ করফাঁকির কারণে ২০২৩ সালে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার: সিপিডি ◈ দেশে তিন স্তরে কমছে ইন্টারনেটের দাম ◈ অবৈধ অভিবাসীদের সহায়তাকারীদের মার্কিন দূতাবাসের হুঁশিয়ারি ◈ সতর্ক সংকেত জারি, আজ বজ্রপাতে মৃত্যুর ঝুঁকি খুবই বেশি ◈ পলাতক সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা যুক্তরাজ্যে আ.লীগ নেতার ছেলের বিয়েতে  ◈ বিএনপির নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ: বাম দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা ◈ হাথুরুসিংহে ও তার দুই সহকারী ‘নাসুমকে চড় মারা’ প্রসঙ্গে যা বললেন ◈ অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সমর্থন গাজার প্রতি, ইসরায়েলি হামলাকে বললেন ‘গণকবরের মতো ধ্বংসযজ্ঞ’

প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:৪০ বিকাল
আপডেট : ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঠাকুরগাঁওয়ে গায়েবী মাদ্রাসায় দুদকের অভিযান, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের বসানো হলো মাদরাসায়

জাকির হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের নতুনপাড়ায় বোরো জমির ওপর গড়ে ওঠা একটি ‘গায়েবি’ মাদরাসার খোঁজে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

রোববার (২০ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুদকের ঠাকুরগাঁও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন।

এদিকে দুদকের অভিযানের খবর পেয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূর থেকে চকলেট খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।

অভিযান শেষে দুদকের ঠাকুরগাঁও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আজমির শরিফ মারজী জানান, বাস্তবে অস্তিত্বহীন একটি মাদরাসা কীভাবে ইবতেদায়ী নিবন্ধনের তালিকায় এলো, এমনকি এমপিওভুক্ত করারও চেষ্টা চালানো হচ্ছে— এসব জানতে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম আজ এই অভিযান পরিচালনা করে। দুদক আসার খবর পেয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূর থেকে একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের চকলেটের লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। বাস্তবে এই প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষা কার্যক্রম চালু নেই। শিক্ষার্থীরাও জানিয়েছে, তাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে- দুদক আসার ৩০ মিনিট আগে শিক্ষা অফিসকে জানানো হয়। ধারণা করছি, তারা খবরটি জানিয়ে দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগামীকাল দুদক কার্যালয়ে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৮১ সালে কয়েকজন ব্যক্তির মাধ্যমে ‘নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা’ প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৯৯ সালে এটি দাখিল পর্যন্ত একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে এবং ২০০২ সালে ইবতেদায়ী ও দাখিল শাখা একত্রিত হয়ে এমপিওভুক্ত হয়। সেই সময় ইবতেদায়ী শিক্ষক আবুল বাশার, নুরনবী ও বেলী আক্তার পরবর্তীতে দাখিল শাখায় শিক্ষকতা করেন। তবে দাখিলের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে প্রতিষ্ঠানটি কাগজে-কলমে নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা নামেই থেকে যায়।

নতুনপাড়া ইবতেদায়ী শাখার প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম দুদক কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ৫০০ মিটার দূরে নতুন এই প্রতিষ্ঠানটি নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার নাম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানে এখনো তারা কর্মরত আছেন।

সহকারী শিক্ষক নুর ইসলাম বলেন, সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে একটি চক্র এই গায়েবি প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা একেবারেই বেআইনি।

একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা কৃষ্ণ রানী বইস্য বলেন, আমাদের ইবতেদায়ী শাখাতেই শিক্ষার্থী সংকট। তারপরেও মাত্র ৫০০ মিটার দূরে কী করে একই নাম ব্যবহার করে আরেকটি প্রতিষ্ঠান তারা গড়ে তোলে?

এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গত ৬ এপ্রিল জেলা শিক্ষা অফিসার শাহীন আকতার সরেজমিনে মাদরাসায় গিয়ে তদন্ত করেন। পরদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেন, ‘নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা’ নামে কোনো বাস্তব কাঠামোর অস্তিত্ব নেই এবং সেখানে কোনো শিক্ষা কার্যক্রমও পরিচালিত হয় না।

প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে দাবি করা শাহিনুর আলম প্রতিষ্ঠাকালীন কোনো কাগজপত্র, শিক্ষক নিয়োগের রেজুলেশন বা মাদরাসার কার্যক্রম সংক্রান্ত কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি। তদন্তকালে বর্তমান মাদরাসার জায়গায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয়রা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন এবং একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তারা অবিলম্বে এই মাদরাসার জাতীয়করণ বা এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানান।

এ বিষয়ে নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার প্রধান মো. শাহানুর আলম  বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮১ সালে স্থাপিত হয়। এর আগে যারা এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতা করেছেন তারা নিয়মিত বেতন ভাতা পেতেন। তারা অন্যত্রে চলে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা এলাকার কয়েকজন মিলে পুনরায় প্রতিষ্ঠান চালু করি।

তিনি আরও বলেন, এলাকার কিছু  ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে লেগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। যা সত্য নয়। আজ হঠাৎ করে দুদক অভিযান পরিচালনা করে। তারা যেসমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েছে তা আমরা ওনাদের সামনে তুলে ধরবো।

মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে ৫০ জন শিক্ষার্থী, পাঁচজন শিক্ষক ও একজন অফিস সহায়ক রয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়