ডেস্ক রিপোর্ট : কিশোরগঞ্জের ইটনায় এবার খাদ্যবান্ধব কমর্সূচির ডিলার নিয়োগের জন্য এলআর বাবদ ১ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে ‘সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া’ নামের আইডি থেকে কল রেকর্ডটি ছাড়ার পর সেটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
রাত ৮টা ২৫ মিনিটে ফেসবুকে কল রেকর্ডটি শেয়ার দিয়ে সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া লেখেন, ‘ইটনা উপজেলা সাবেক ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমান এসিল্যান্ড আবু বক্কর সিদ্দিকের আপাদমস্তক কুকর্ম:-চালের ডিলার, তারুণ্যের মেলা ও বিভিন্ন ইজারার প্রলোভন দেখিয়ে দুই চামচা পটল ও ফরহাদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর একটা কল রেকর্ড নিম্নে উপস্থাপন করা হলো। অতিদ্রুত দুর্নীতিবাজ সাবেক ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিকসহ তার সহযোগীদের তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক গত বছরের ২০ নভেম্বর ইটনা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৫ এপ্রিল সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদানের আগ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাস আবু বকর সিদ্দিক ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর দায়িত্বপালনকালে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১৮টি বিক্রয়কেন্দ্রে সরকার নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ১৮ জন খাদ্যবান্ধব ডিলার নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
এদিকে ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডটির এক প্রান্তে উপজেলা প্রশাসনের উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফজলুর রহমান পটল ও অপর প্রান্তে মিজানুর রহমান মজনু নামের একজন ডিলার লাইসেন্সপ্রত্যাশী রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফাঁস হওয়া ৫ মিনিট ৯ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে ফজলুর রহমান পটলকে বলতে শোনা যায়, ‘এখন মেসেজটা দেওয়ার লাইগাই ফোন দিছিলাম। লাইসেন্সটা এই সপ্তাহে ফাইনাল অইবো বিষ্যুদবারের মধ্যে প্রকাশ অইব। বুঝতেই তো আছেন, খুব কম্পিটিশান চলছে, বিভিন্ন ভাবে। এহন আপনের এইটা তো আমরা গেছিলাম সরেজমিন, আপনের সাথে একটা পরিচিতিও আছে। কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, যতটুক করতে পারি। এখন অফিসকে একটা এলআর বলছিলাম না! একটা এলআর দিতে হবে। আপনে দিতেও রাজি আছেন বলছিলেন-হ্যাঁ ঠিক আছে জানায়েন। এহন এক লক্ষ টাকা এলআর অফিসকে এলআর বাবদ এক লক্ষ টাকা দিতে হবে আর কি।’
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এলআর দিতে সম্মতি জানানোর পর ফজলুর রহমান পটল বলেন, ‘কিন্তু এইটা কালকের মধ্যে পেইড কইরা দিতে অইবো। কালকে সন্ধ্যা।’ তখন লাইসেন্সপ্রত্যাশী বলেন, ‘কালকের মধ্যে তো ঝামেলা।’ তখন ফজলুর রহমান আরেকজন লাইসেন্সপ্রত্যাশীর নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘সুধীর চৌধুরী তো কিছু বলে নাই। পরে তো সে আউট অইয়া যাইবো গা।’
ফাঁস হওয়া ফোনালাপটির কথোপকথন শুনে ধারণা করা যায়, এটি গত ২৫ মার্চ রাতের। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা মিজানুর রহমান মজনু উপজেলার রায়টুটী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তিনিও এটি ২৫ মার্চ রাতের ফোনালাপ বলে নিশ্চিত করেছেন। মিজানুর রহমান মজনু বলেন, ‘মো. ফজলুর রহমান পটল ভারপ্রাপ্ত ইউএনওর মেসেজের কথা বলে লাইসেন্সের জন্য ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন। অডিও রেকর্ডটি যে কেউ শুনলেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। উনার চাহিদামাফিক আমি ২৬ মার্চে ঘুষের ১ লাখ টাকা দিতে পারিনি। এর ফলে ২৭ মার্চ ডিলারের তালিকায় আমার নাম রাখা হয়নি।’
তবে অডিও রেকর্ডের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফজলুর রহমান পটল বলেন, ‘রেকর্ডটি শুনেছি। এটি সম্পূর্ণ এডিট করা। এ ধরনের কোনো কথা কারও সঙ্গে হয়নি। প্রশাসনের বিরুদ্ধে এটি একটি চক্রান্ত।’
এ ব্যাপারে সদ্য যোগ দেওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, এর আগে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের লাভের অংশ থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক নেতার কাছে জিলাপি খাওয়ার টাকা চেয়েছিলেন ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেন। ওই কল রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়।
সুত্র: যায়যায়দিন