ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে চলছে বিক্ষোভ কর্মসূচি। সোমবার (৭ এপ্রিল) ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ নামে কর্মসূচির সাথে সংহতি জানিয়ে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মিছিল-সমাবেশ করলেও জেলা শহরের ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। সেখানে কর্মসূচি পালন তো দূরের কথা, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন কড়া নোটিশ জারি করে কলেজের শিক্ষকদের কলেজে বাধ্যতামূলক অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার (৬ এপ্রিল) এ নোটিশ জারি করা হয়।
নির্ধারিত সময়ে শিক্ষকরা কলেজে উপস্থিত থাকতে গিয়ে ফিলিস্তিনের সংহতি কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি।
কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ অধ্যক্ষের নোটিশ জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘নোটিশ জারি করায় আমরা কলেজে গিয়েছি। তবে কোনো ক্লাস নিইনি। শিক্ষার্থীরাও কলেজে ছিল। তারা কোনো কর্মসূচিতে যেতে পারেনি।’
কলেজের একটি সূত্র জানায়, কলেজ এমনিতেই খোলা ছিল। এখানে হাঠাৎ করে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা নাগাদ কলেজে অবস্থান করার নোটিশ দেয়ার প্রয়োজন ছিল না। তিনি মূলত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি কর্মসূচিতে কলেজের কেউ যেন অংশ না নিতে পারে, এজন্যই এ নোটিশ জারি করেছেন।
কলেজের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘ইসরাইলের বর্বরতার পক্ষে অবস্থান নিযে অধ্যক্ষের এ নোটিশ জারি শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারে বাধা দিয়েছেন। বিষয়টি সবার অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। এর তদন্ত হওয়া উচিত।’
শনিবার (৫ এপ্রিল) প্রথম এই কর্মসূচি আহ্বান করা হয় ‘ট্রান্সলেটিং ফালাস্তিন’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে। অ্যাকাউন্টটি গাজায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কনটেন্ট পোস্ট করে থাকে। শনিবার তারা একটি ছবি পোস্ট করে যাতে ফিলিস্তিনের পতাকাসহ লেখা থাকে ‘দ্য ওয়ার্লড স্টপস ফর গাজা। নো ওয়ার্ক, নো স্কুল। আনটিল দ্য জেনোসাইড স্টপস।’
সংহতি জানিয়ে সেই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই জানান, তারা নিজ নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখবেন এবং কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশেও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘দ্য ওয়ার্লড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির সাথে সংহতি জানায়।
এ কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে সোমবার কিশোরগঞ্জের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস হয়নি। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিছিল সমাবেশ হয়েছে। কিন্তু ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: আব্দুল্লাহ আল মামুনের স্বাক্ষরে ৬ এপ্রিল জারি করা নোটিশের কারণে শিক্ষকরা কলেজে যেতে বাধ্য হন। তারা কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতেও পারেননি।
এ নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে পুরো কিশোরগঞ্জ শহর। নেটিজেনরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধ্যক্ষের তীব্র সমালোচনা করছেন। এই অধ্যক্ষের পদত্যাগও দাবি করেছেন অনেকে। তারা তাকে মুসলিম বিদ্বেষী ও ইসরাইলপন্থী লোক হিসেবে চিহ্নিত করে বিচার দাবি করছেন।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে কথা বলতে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।