চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে 'সচেতনতামূলক' মাইকিং করেছে পুলিশ।
আজ সোমবার দুপুরে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় এবং গত রাতে জেলার রাউজানে তাকে নিয়ে দুই দফায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় রিমান্ডে থাকা এই সন্ত্রাসীকে রাস্তায় হাঁটিয়ে মাইকিং করা হয়।
তবে তার কোনো সহযোগীকে গ্রেপ্তার কিংবা অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
এই ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, রিমান্ডে থাকা আসামিকে এনে প্রকাশ্যে মাইকে ঘোষণা দিয়ে তার সহযোগীদের ধরা কিংবা অস্ত্র উদ্ধার বা অস্ত্র ভাণ্ডারের সন্ধান করা হাস্যকর ঘটনা! মাইকিংয়ের ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, চান্দগাও থানা পুলিশ এবং পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেররিজমের সোয়াট সদস্যরা সাজ্জাদকে ঘিরে হাঁটছেন। হাতকড়া পরা 'ছোট সাজ্জাদের' গায়ে ভেস্ট ও মাথায় হেলমেট।
এক পুলিশ সদস্য হান্ডমাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন, 'সন্ত্রাসী ও ত্রাস ছোট সাজ্জাদকে সিএমপি কমিশনার স্যারের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাষ্ট্রের কাছে কোনো সন্ত্রাসের জায়গা হবে না। আপনাদের এলাকায় যদি কোনো সন্ত্রাসী পুনরায় কেউ নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে, তাহলে ছোট সাজ্জাদের মতো তাদের পরিণতি হবে।'
রিমান্ডের আসামিকে নিয়ে মাইকিং করার বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপির উত্তর বিভাগের উপকমিশনার আমিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চান্দগাও থানার মামলায় রিমান্ডে আনার পর জানতে পারি সাজ্জাদের দুই সহযোগী সন্ত্রাসী রায়হান ও হাসান সেখানে রয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালালেও তাদের সেখানে পাওয়া যায়নি, অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি।'
'অভিযান অন্য বিষয়, মাইকিং আরেক বিষয়, দুটি বিষয় আলাদা,' বলেন তিনি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে আসামিকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটনের জন্য যেমন, কার কাছে অস্ত্র আছে, কে অর্থ দেয়, নেপথ্যে কে কে ইত্যাদি জানার বিষয় আছে। তবে, মাইকিং করে আসামিকে প্রদর্শন—এমন নজির নেই।
গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেয় লোকজন। এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ।
আগের দিন সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফেসবুক লাইভে এসে পেটানোর হুমকি দেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও অস্ত্রসহ ১৭টি মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর সাজ্জাদকে চান্দগাও থানার ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসিন হত্যা মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তবে রিমান্ডে নিয়ে তার কাছ থেকে কোনো তথ্য আদায় কিংবা অস্ত্র উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়।
দ্বিতীয় দফায় রোববার একই মামলায় তাকে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। এরপর তাকে নিয়ে সহযোগীদের ধরতে এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে যায় পুলিশ।
গত বছরের ২১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও শমসেরপাড়া এলাকায় ইট-বালু ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিনকে গুলি করা হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছোট সাজ্জাদ ও তার সহযোগীরা নগরীর বায়েজিদ বোস্তমী, হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি পাহাড়ি এলাকায় গা ঢাকা দিয়েছে।
ঢাকায় ধরা পড়ার আগে সাজ্জাদ রাউজানের পাহাড়ি এলাকায় লুকিয়ে ছিলেন। তার দলের কাছে একাধিক দেশীয় প্রযুক্তিতে বানানো অস্ত্র এবং বিদেশি অস্ত্র ও গুলি আছে, যা দিয়ে তারা ত্রাস সৃষ্টি করছে।
সর্বশেষ পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে এবং বায়েজিদ বোস্তামি-হাটহাজারী এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে সাজ্জাদের সহযোগীরা গত ৩০ মার্চ নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডে চলন্ত গাড়িতে হামলা চালালে সেখানে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার আরেক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন বাবলার সঙ্গে সাজ্জাদের বিরোধ রয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান সারোয়ার। তার বিরুদ্ধে ১৬টি হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। সেই বিরোধের সূত্র ধরেই প্রাইভেটকারে হামলায় জোড়া খুনের ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম শান্তু দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ছোট সাজ্জাদের সহযোগীরা রাউজান ও আশপাশের রাবার বাগান এলাকায় আত্মগোপনে থাকে। তারা নানা অস্ত্র ব্যবহার করেন। অভিযান গেলে পুলিশের ওপর হামলার ইতিহাস আছে। ওই পাহাড়ি এলাকায় সমন্বিত অভিযান দরকার। উৎস: ডেইলি স্টার ও আরটিভি।