অনুজ দেব বাপু, চট্টগ্রাম : ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তাল ছিল চট্টগ্রাম। নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও পদযাত্রায় অংশ নেন বিভিন্ন দল, সংগঠন ও স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল থেকে নগরীর কেএফসি, পিজ্জাহাট, জামান ও পিউমা নামের চারটি রেস্তোরাঁ ও আন্দরকিল্লা এলাকায় একটি বাটার শোরুমে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বিক্ষুব্ধদের ইট-পাটকেলের আঘাতে রেস্তোরাঁগুলোর সামনের দিকের কাঁচ ভেঙে যায়।
সোমবার সকালে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যেগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে গাজার নির্যাতিতদের পক্ষে প্রতীকী জিহাদের অঙ্গীকার হিসেবে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর একটি কুশপুত্তলিকা তৈরি করে সেটাতে জুতা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
দুপুরে নগরীর ওয়াসার জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। বিক্ষোভ মিছিলটি ওয়াসা থেকে নগরীর দামপাড়ার নার্সারি মোড় গিয়ে শেষ হয়। এ সময় সংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘ইহুদিদের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’, ‘ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ কর’, বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়ো, ফিলিস্তিন স্বাধীন করো’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুনিবাদী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আজ আমাদের মা-বোনদের ওপর নির্যাতন করছে, মানুষ মারছে। পুরো গাজাকে আজ তছনছ করে দিয়েছে। আল আকসাকে ধ্বংস করার জন্য ওরা বারবার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে বিশ্বের সকল মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রয়োজনে আমরা সবাই ফিলিস্তিনে জিহাদে যাব। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মুসলমানকে জিহাদে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আমরা আহবান জানাচ্ছি। আমরা মার্কিনীদের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বয়কট করছি।
বিকেল চারটার দিকে নগরীর দুই নম্বর গেইট বিপ্লব উদ্যানের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যেগে ‘মার্চ ফর গাজা’ ব্যানারে পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। খন্ড খন্ড মিছিলগুলো জিইসি মোড় থেকে ঘুরে আবার দুই নম্বর গেইট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এ সময় মিছিল পরবর্তী সমাবেশ থেকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয় এবং সবাইকে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের জন্য আহবান জানানো হয়।
সকালে নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি মাদরাসা প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে মুরাদপুর মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গাজা অঞ্চল ধুলিস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য ইহুদিরা গভীর ষড়যন্ত্র করছে। তারা নির্মমভাবে বর্বরোচিত হামলা করছে। বাংলাদেশ প্রশাসনের কাছে আমরা আহবান রাখছি, ফিলিস্তিনে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ তৈরি আছে। অতি শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে মুজাহিদ বাহিনী ফিলিস্তিনে যাওয়ার জন্যে, মুসলমানদের পক্ষে জিহাদ করতে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে করে দেওয়া হয়।