শিরোনাম
◈ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ আইজিপির ◈ আমরা এমন কিছু পদক্ষেপ নেবো বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে, কমবে না: প্রেস সচিব ◈ প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ◈ বিদেশ ভ্রমণে সরকারি কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশনা ◈ পহেলা বৈশাখে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি নির্দেশনা মাউশির ◈ ইসরায়েলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানালো বাংলাদেশ ◈ ঐকমত্য কমিশনের সাথে কাল আলোচনায় বসবে এবি পার্টি ◈ ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ   ◈ রেস্টুরেন্টে ইসরায়েলি কোমল পানীয় রাখার অভিযোগে ভাঙচুর ◈ পাল্টা শুল্ক তিন মাস স্থগিতের অনুরোধ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:২৪ বিকাল
আপডেট : ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হালের গরু আর রিক্সা বিক্রি করেও বাঁচানো গেলো না জুলাই বিপ্লবে গুলিবিদ্ধ হৃদয়কে

নিনা আফরিন,পটুয়াখালী : অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে সন্তানকে ধাবিত হতে দেখেও কিছুই করতে পারছিলেন না রিক্সা চালক বাবা। এনজিও থেকে ঋন নিয়ে কেনা নিজের শেষ সম্বল হালের গরু আর উর্পাজনের একমাত্র অবলম্বন রিক্সাটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন প্রিয় সন্তানকে বাঁচাতে। কিন্তু সব কিছু ব্যর্থ করে দিয়ে শুক্রবার দুপুরে অনন্তলোকে পাড়ি জমান জুলাই বিপ্লবে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত আশিকুর রহমান হৃদয়(১৭)। নিহত হৃদয় উপজেলার পশ্চিম যৌতা গ্রামের রিক্সা চালক আনসার হাওলাদারের চার ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট।

নিহত হৃদয়ের বড় ভাই আনিস হাওলাদার(৩৬) জানান, ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে হৃদয়। বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর পড়ালেখা করা হয়ে উঠেনি হৃদয়ের। বড় দুই ভাইয়ের সাথে ঢাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। নিজে নির্মান শ্রমিক হলেও দেশের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। যাত্রাবাড়ি এলাকার যুবকদের সাথে জড়িয়ে পড়েন জুলাই বিপ্লবে। ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ি মোড়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। তার মাথায় তিনটি গুলি লাগে। এছাড়া মুখে অসংখ্য গুলি তার চেহারা বিকৃত করে দেয়। আনিস জানান, ঐ সময় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের হয়রানির ভয়ে হাসপাতালে ভর্তি না করে বাসায় লুকিয়ে চিকিৎসা করান।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা মেডিকেলে তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তার মাথা থেকে দুটি গুলি বের করতে পারলেও আশঙ্কাজনক হওয়ায় একটি গুলি বের করতে পারেনি। এতে পুরোপুরি সুস্থ্য হতে পারেনি হৃদয়। ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়েছিলেন উন্নত চিকিৎসার। কিন্তু আর্থিক সংগতি না থাকায় তাকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়নি। আক্ষেপ করে আনিস জানান,তিনি একাধীকবার জুলাই ফাউন্ডেশনে গিয়েছিলেন হৃদয়ের জন্য সাহায্যের আবেদন করতে। কিন্তু শ্রমিক হওয়ায় তার কথা নেতৃবৃন্দের কাছে পৌছাতে পারেন নি। হৃদয়ের মৃত্যুর আগে বাউফলের সন্তান ঢাকা মহানগর জামাতের সেক্রেটারী ডক্টর শফিকুল ইসলাম মাসুদ তাদের পাঁচ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য করেছিলেন। এর বাইরে সরকারি বা বেসরকারি কোন সহয়তা তারা পায়নি বলে দাবী করেন তিনি। তিনি আরো বলেন হৃদয়ের মৃত্যুর পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা দেয়া

হয়েছে দাফন কাফনের জন্য। জীবিত থাকতে চিকিৎসায় টাকা না দিয়ে মরনের পর দাফনের জন্য এ টাকা দিয়ে কি লাভ সে প্রশ্ন করেন তিনি। নিহত হৃদয়ের চার ভাইয়ের একমাত্র বোন আসমা আক্তার হনুফা(৩২)। তিনি জানান,ভাই হলেও হৃদয়কে সন্তানের মতো আদর যত্নে মানুষ করেছেন তাঁকে। দেশের জন্য সবাইকে ফাকি দিয়ে এভাবে সে চলে যাবে তা কেউ বুঝতে পারেনি। তিনি এ হত্যা কান্ডের বিচার দাবী করেন।

ছেলের মৃত্যুর পর এখোনা বিলাপ করে চলছেন মা মোর্শেদা বেগম। তিনি জানান,বড় দুই ছেলে ঢাকা থেকে ১৮ জাুলাই ফোন করে জানায় যে হৃদয় গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আশা এনজিও থেকে সত্তুর হাজার টাকা ঋন নিয়ে কেনা রিক্সা আর একটি গরু বিক্রি করে সে টাকা নিয়ে ঢাকায় চলে যাই। ছেলের জন্য নিজের যা ছিলো সব কিছু দিয়ে চেষ্টা করেছি। ডাক্তার বলেছিরো উন্নত চিকিৎসা করাতে। কিন্তু সেটা তো করাতে পারিনি। বিদেশ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে আমার ছেলে বেঁচে থাকতো। পক্ষাঘাতগ্রস্থ হৃদয়ের বাবা আনসার হাওলাদার চোখের পানিত বুক ভাসালেও মুখে কিছুই বলতে পারেন না। সবার দিকে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন।

রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত আরেফিন হৃদয়ের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের জানান,সরকারিভাবে পটুয়াখালীতে যে আহতদের তালিকা করা হয়েছে সে তালিকায় আশিকুর রহমান হৃদয়ের নাম ছিলো না। কি কারনে তারা নাম লিপিবদ্ধ করান নি সেটা কেউ বলতে পারে নি। তারপরও হৃদয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা পাঠানো হয়েছে।

এখন থেকে এ পরিবারটিকে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো জানান যাতে পারিবারটি স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারে তার জন্য আজকেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হৃদয়ের বাবাকে একটি রিক্সা ক্রয় করে দেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়