কিবরিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ) : ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন নবীগঞ্জের আজমদ আলী। আজমতের মৃত্যুর পর থেকেই পরিবারটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। আজমতের স্ত্রী হন স্বামী হারা ও তিন সন্তান পিতৃহারা। ২০২৪ সালে ৫ আগষ্টের এর পর থেকে তাদের পরিবারের সব আনন্দ যেন ধুলোয় মিশে গেছে। আর দুইএক দিন বাদে ঈদ হলেও তাদের পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ।
অন্যদিকে সম্প্রতি পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে শহীদ আজমদ আলীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ইফতার সামগ্রী ক্রয় করার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগীতা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রুহুল আমিন। ৫ই আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণকারী আজমত আলীর স্কুল পড়–য়া মেয়ে নাহিদা আক্তার সাংবাদিকদের কাছে বাবার স্মৃতি বণর্না করে বারবার কাঁদছিলেন।
৪ আগষ্ট তার বাবার সাথে শেষবার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিল হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ ম্যাপল স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী নাহিদা আক্তারের। শহীদ আজমত আলীর স্কুল পড়–য়া মেয়ে নাহিদা আক্তার জানান- ‘জীবিকার তাগিদে বিগত ৫ বছর ধরে তার পিতা আজমত আলী ঢাকায় বসবাস করে সেখানে মাছের ব্যবসা করে আসছিলেন। তিনি মাসে মাসে পরিবারের খরচ ও তাদের লেখা পড়ার খরচ পাঠাতেন। তা দিয়েই চলতো পরিবার। তার বোরকা পুরাতন হয়ে যাওয়ায় বাবাকে নতুন একটি বোরকা কিনে দেয়ার আবদার জানিয়েছিল, তখন তার পিতা আজমত আলী ফোনে জানিয়েছিলেন ঢাকায় এখন আন্দোলন চলছে সব কিছু বন্ধ। তিনি বাড়িতে আসবেন নয়তো দোকানপাঠ খুললেই ১ সপ্তাহের মধ্যেই বিকাশে বোরকার টাকা পাঠিয়ে দিবেন। কিন্তু পরের দিনই তার বাবার মৃত্যুর খবর আসে।’ শহীদ আজমত আলীর পরিবারে রয়েছেন- তার দুই ছেলে মাহফুজ আলম মাহিদ (১৮), মাহিনুর আলম মাহিন (১২) ও এক মেয়ে নাদিয়া আক্তার (১৫) এবং অসুস্থ
স্ত্রী রবিরুন বেগম। আজমত আলী হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর গ্রামের মজর আলীর ছেলে।
শহীদ আজমত আলীর ছেলে মাহফুজ আলম মাহিদ বলেন, এই ঈদটা আমাদের এক সঙ্গে করার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বাবা আজ নেই। বাবাকে ছাড়া আমাদের পরিবারে কখনো ঈদের আনন্দ আসবে না। যারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুত্থান ২০২৪এ শহীদদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। গত ১৫
জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এটি প্রকাশ করেছে। সরকারি এ গেজেট অনুযায়ী, ওই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা ৮৩৪। এর মধ্যে আজমত আলী রয়েছেন ৪৭৬ নম্বরে। গেজেট অনুযায়ী তার মেডিকেল কেস আইডি ২২৫৩৮।
সরেজমিনে নবীগঞ্জ পৌর এলাকায় গেলে স্থানীয়রা জানান, আজমত আলী স্থানীয় বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। অভাব অনটনে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো আজমত আলীর। তাই বিগত ৫ বছর পূর্বে জীবন জীবিকার তাগিদে আজমত আলী রাজধানী ঢাকায় চলে যান। সেখানে গিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় মাছের ব্যবসা করতেন। ঢাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ই আগষ্ট ঢাকা যাত্রাবাড়ী এলাকায় মিছিলে যোগ দেন আজমত আলী। ওই সময় পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন আজমত আলী। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে কান্নার রুল পড়ে ওই পরিবারসহ গ্রামবাসীর মাঝে।
অবুঝ সন্তানদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে। সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন শহীদ আজমত আলীর স্ত্রী। স্থানীয়রা জানান, অভাব অনটনের মাঝে ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে অতিকষ্টে জীবন যাপন করছেন আজমত আলীর স্ত্রী রবিরুন বেগম। তারা এখনও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সহায়তা পাননি। পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করেন এলাকাবাসী।