শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৭ মার্চ, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চিলমারী নদী বন্দরের দু'টি ভাসমান ডিপোতে তেল নেই ৫ বছর

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের চর-দ্বীপচরসহ বিভিন্ন জেলায় জালানী তেল নিশ্চিত করতে চিলমারীতে ১৯৮৯ সালে স্থাপিত হয় যমুনা ও মেঘনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড নামে দুটি ভাসমান তেল ডিপো। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও লালমনিরহাট জেলার কয়েকটি উপজেলায় কোম্পানি দুটি নিয়মিত ভাবে জ্বালানী তেল সরবরাহ করে আসছিল।

ভাসমান ডিপো দুটিতে ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ও একই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারিতে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের তেলের মজুত শেষ হয়। ডিপো দু’টির অনুমোদিত ২০জন ডিলার সরকারী দামে জ্বালানী তেল ক্রয় করে খুচরা বিক্রেতাদের নিকট সরবরাহ করতেন।  কিন্তু দুঃখজনক হলেও প্রায় ১০লাখ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই বার্জ দুটি প্রায় ৫ বছর ধরে তেল শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ভাসমান ডিপো দু’টি তেল শুন্য হওয়ার এর সাথে জড়িত শতশত স্থানীয় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। যার প্রভাবে খুচরা বাজারে বেশি দামে তেল কিনতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।

চিলমারীর রমনা এলাকার স্স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চার জেলার বিভিন্ন এলাকায় সেচ মৌসুম এবং ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীতে নৌকা,ড্রেজার মেশিন, ট্রাক্টর, নারেটর,মাহেন্দ্রগাড়ী, নছিম-করিমনসহ বিভিন্ন তেল দিয়ে চালিত মেশিন,মটর এবং যন্ত্রের জন্য প্রতিদিন গড়ে তেলের চাহিদা প্রায় ৮শ থেকে ৮৫০লিটার ব্যারেল বা দু’লাখ থেকে সোয়া দু’লাখ লিটার। এই বিপুল পরিমাণ তেলের চাহিদা এই এলাকা গুলোতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বায়িত্ব  অবহেলার কারণে বছরের পর বছর ধরে তেল ডিপো দুটি অবহেলা ও অবজ্ঞায় পতিত হয়ে বন্ধ রয়েছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারীর ভাসমান ডিপোতে ডিজেল না থাকায় চার জেলার় কৃষক,সাধারণ মানুষ ও নৌ চালকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। সরকারি মূল্যের চেয়ে খোলা বাজার হতে মুনাফাকারীদের খপ্পরে পড়ে বেশি দামে ডিজেল কেনায় সংশ্লিষ্টদের উৎপাদন খরচ বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে মেঘনা ডিপোর ইনচার্জ মহসিন আলী বলেন,ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা হ্রাসের কারণে তেল ভর্তি জাহাজ আসতে না পারায় তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে একই সমস্যাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিপো ইনচার্জ মোঃ শরিফুল ইসলাম। তবে ডিপো দুটি স্থায়ী করনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিয়েছে।

এছাড়া অতি সম্প্রতি ভাসমান ডিপো দুটি বিপিসির একটি উচ্চপর্যায়ের টিম পরিদর্শনা করে গেছেন। ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা হ্রাসের কারণে তেল ভর্তি জাহাজ আসতে পারছে না বলে তারাও উল্লেখ করেন।

ভাসমান তেল ডিপোর শ্রমিকরা জানান, কর্তৃপক্ষ ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ৫ বছর ধরে তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। ডিপোতে তেল না আসার কারণ বলতে পারেন না তারা। তবে দৃশ্যত ডিপোকে ঘিরে স্থানীয় প্রায় তিনশতাধিক শ্রমিক এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। 

ডিলার হযরত আলী জানান,ভাসমান ডিপোতে তেল না থাকায় ডিলাররা নিরুপায় হয়ে পার্বতীপুর,রংপুর ডিপো থেকে তেল কিনে স্থানীয় চাহিদা পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাহির থেকে তেল আনতে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ, ঘাটতি ও শ্রমিক খরচ দিয়ে প্রতি লিটারে প্রায় ২টাকা বেশী পড়ছে। এভাবে ডিলার থেকে খুচরা বিক্রেতার হাত বদল হয়ে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ৪/৫ টাকা বেশি দরে। ফলে বাড়তি দামে তেল কেনায় কৃষকের উৎপাদন খরচ সহ অন্যান্য খাতে গিয়ে এর কু-প্রভাব পড়ছে। 

এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, চিলমারীর ভাসমান ডিপো দু'টিতে তেল না থাকার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যা সমাধান হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়