আজিজুল ইসলাম : অনুকূল অবহাওয়া, কম পরিশ্রমে বেশি ফসল, কম পুঁজি, ঝুঁকিহীন, সেচ ও সার প্রয়োগের সুবিধা থাকায় প্রতিবছর বাঘারপাড়ায় ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। বাঘারপাড়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলায় ৩৮ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলতি মৌসুমে ব্যাপক আকারে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। অল্প দিনে কম খরচে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় ভুট্টা চাষের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কম পুঁজি, ঝুঁকিহীন, সেচ ও সার প্রয়োগের সুবিধা থাকায় কৃষকদের মধ্যে ভুট্টা চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরেজমিনে বাঘারপাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেখা যায়, কৃষকরা ভুট্টা ক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ভুট্টার ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। এসব স্থানে সবাই কম বেশি আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন।
কৃষকেরা জানান, গত বছর স্থানীয় বাজারে ভুট্টার দাম ভালো ছিল। ফলনও ভালো হয়েছিল। তা ছাড়া ভুট্টা চাষে খরচ কম। এ কারণে তাঁরা এবার ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভুট্টা চাষের জন্য ভালো রয়েছে । যে কারণে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ একেবারেই কম হয়েছে। ফলনও তাঁরা ভালো পাচ্ছেন। বাজারে দামও এবার ভালো। দাম ও ফলনে তারা খুশি।
প্রথমবারের মতো ভুট্টা চাষ করেছেন উপজেলার খানপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য হুসাইন আমিন। তিনি এক একর পঞ্চাশ শতক জমিতে জীত- ৩৫৫৫ জাতের ভুট্টার চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা।তিনি ভুট্টা নিয়ে খুবই আশাবাদি। লক্ষাধিক টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। একই গ্রামের টগর বিশ্বাস ৫০ শতক,আশিক বিশ্বাস ২০ শতক, আক্তার মোল্যা ৪৬ শতক, রিপন মোল্যা ১০ শতক, নুর আলম মন্ডল ৫০ শতক ও রফিকুজ্জামান খান ১৫ শতক এবং সদুল্যপুরের মতিয়ার রহমান ২৩ শতক, চন্ডিচরণ মন্ডল ২০ শতক ও বারিক মিয়া ১৫ শতক জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। সবাই ভালো ফলনের আশা করছেন। অনেকের গাছে মোচা এসেছে আবার অনেকের সম্পূর্ণ ফল এসেছে। কোন কোন চাষির ভুট্টা পেকে গেছে।
ক্ষেত্রপালা গ্রামের ভুট্টা চাষী রেজোয়ান বিশ্বাস ২৩ শতক জমিতে ভূট্টা চাষ করছেন। তিনি আমাদের নতুন সময় কে জানান, ভুট্টা চাষ চাষিদের মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে। তিনি জানান, ভুট্টার জমিতে কখনও মাটি শুকাতে দেওয়া যাবে না। সার ও পানি ঠিক মতো দিতে পারলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। ভুট্টা চাষে কোনো ক্ষতি নেই, পুরোটাই লাভ। তাছাড়া ভুট্টার পাতা গো-খাদ্যের সংকট দূর করে ডাটা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় কৃষক ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে আবাদ করছেন।
নুর আলম মন্ডল জানান, গত বছর প্রতি বিঘাতে তার ৭০-৮০মণ হারে ভুট্টা হয়। প্রতি বিঘাতে (৩৩ শতাংশ) জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা । বাজারে ভুট্টা ৮শ- ১২শ টাকা মণ দরে বিক্রি হয় । এবার ভুট্টার ফলন আরও বেশি হবে বলে আশা করছেন তিন। বাঘারপাড়া উপজেলার বাঘারপাড়া গ্রামের কৃষক কুতুব উদ্দিন এবার ৩৩ শতক জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে ২ কেজি বীজ ও ৬৫ কেজি সার পেয়েছেন। তাঁর জমিতেও ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, যশোর কার্যালয়ের এক উপপরিচালক বলেন, ভুট্টা চাষে রোগবালাই কম। খরচ কম হয়। দেশে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গমের সঙ্গে ভুট্টা মিশিয়ে রুটি তৈরি করে খাওয়া যায়। গোখাদ্য হিসেবেও ভুট্টা ব্যবহৃত হয়। এবার আবহাওয়া ভালো ছিল। রোগবালাই হয়নি বললেই চলে। ভুট্টা মাড়াই শুরু হয়েছে। ফলন বেশ ভালো হচ্ছে। বাজারে ভুট্টার দামও ভালো।
বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দা নাসরিন জাহান আমাদের নতুন সময় কে বলেন, গত বছর উপজেলায় আশানুরূপ ভুট্টার চাষ করা হয়েছিল। তিনি জানান ২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলায় ৪৩ হেক্টর জমিতে বুট্টা চাষ হয়েছে। সরকারিভাবে ১০ জন কৃষক কে প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। কম খরচে বেশি মুনাফা অর্জনের ফলে দিন দিন এর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।