ধর্ষণ ও হত্যার শিকার মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার আট বছরের সেই শিশুর মা তার বড় মেয়েকে আর শশুর বাড়িতে যেতে দেবেন না। এ ব্যাপারে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন সবাই একমত হয়েছেন। এক মেয়েকে হারিয়ে তিনি শোকের সাগরে ভাসছেন। এখন বড় মেয়েকে হারাতে চান না।
নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য-সহযোগিতা এলেও মনের মধ্যে শান্তি নেই। দুইদিন আগে তার প্রতিবন্ধী স্বামী ফেরদৌস শেখকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিবাহিত বড় মেয়ে ও ছোট দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন বাড়িতে দিন কাটছে তার।
শনিবার দুপুরে শিশুটির বাড়িতে দেখা যায়, এখনও তাদের শোক কাটেনি। কথা প্রসঙ্গে শিশুটির মা জানান, এসএসসির গণ্ডি পার হওয়ার আগেই বড় মেয়েকে মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালি গ্রামে বিয়ে দেন। মেজ মেয়ে স্থানীয় স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। একই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো ধর্ষণের শিকার হয়ে প্রাণ হারানো তার মেয়েটি।
শিশুটির মা জানান, সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার স্বামী মানসিক প্রতিবন্ধী। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। এক সময় উপার্জনের ভ্যানটি চুরি হয়ে যায়। পরে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আবারও ভ্যান কেনেন। তবে নিজের চিকিৎসার জন্য ভ্যানটি পরে বিক্রি করে দিতে হয়। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নেন। ওই টাকা মেয়ের বিয়ে ও সংসারের খরচ চালাতে শেষ হয়ে যায়। বাড়িভিটার মাত্র ৭ শতক জমিই কেবল সম্বল।
গত ৬ মার্চ বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় তার ময়ে। আট দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শেষ পর্যন্ত ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যায়। ঘটনার পর আরও অসহায় হয়ে পড়ে শিশুটির পরিবার।
শিশুটির মা আর্তনাদ করে বলেন, ‘আমি আমার সন্তানকে বাঁচাতে পারলাম না। যারা আমার সন্তানকে কষ্ট দিয়ে মেরেছে আমি তাদের তাদের ফাঁসি চাই।’
তিনি জানান, মাগুরার জেলা প্রশাসক অহিদুল ইসলাম ও শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাখি ব্যানার্জি খোঁজ খবর নিচ্ছেন। টাকা-পয়সাও দিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকেও জামা-কাপড়, খাদ্যসামগ্রীসহ উপহার এসেছে। জামায়াত-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সহায়তা পাঠিয়েছেন।