চট্টগ্রামের এক নারী নিরাপত্তা চেয়ে থানায় মামলা করেছেন; তার দাবি, আলোচিত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে তিনি পুলিশকে 'সহায়তা' করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার নগরীর পাঁচলাইশ থানায় তিনি ওই মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) আরিফ হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মামলায় ওই নারী বলেছেন, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সাজ্জাদের স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাসহ অন্তত ১১ জনকে তিনি আসামি করেছেন।”
আট ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি সাজ্জাদ খান, হাবিব খান, রায়হান, হেলাল, হাসান, আরমান ওরফে ডবল হাজারি, ইমন, বোরহান, রাজু, মোহাম্মদ ও দিদারের নাম আছে আসামির তালিকায়।
নিজেকে নগরীর গোলপাহাড় এলাকার একটি বিউটি পার্লার ও বুটিক শপের মালিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন মামলার বাদী।
তিনি দাবি করেছেন, গত ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা শপিং মল থেকে ছোট সাজ্জাদকে ধরতে সহায়তা করেছিলেন তিনি।
বিষয়টি জানতে পেরে সাজ্জাদের স্ত্রী শারমিন এখন ‘হত্যার হুমকি’ দিচ্ছে বলে ওই নারীর অভিযোগ।
এজাহারে তিনি বলেছেন, গত ১৭ মার্চ সাজ্জাদ ভারতীয় একটি নম্বর থেকে ফোন করে তার কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে তিনি ‘ব্যবসা করতে পারবেন না’ বলে হুমকি দেন।
পরদিন অন্য আসামিরা সশরীরে গিয়ে আবারো এক কোটি টাকা দাবি করে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা না দিলে পরিবারের সদস্যদের ‘হত্যা করার হুমকি’ দেয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
গত বছরের ২১ অক্টোবর বিকালে চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া এলাকায় দোকানে বসে চা পানের সময় তাহসিন নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে কালো রঙের একটি গাড়িতে করে আসা লোকজন।
ওই ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় তাহসিনের বাবার করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয় পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে।
তার আগে অনন্যা আবাসিক এলাকায় জোড়া খুনের ঘটনায়ও আসে সাজ্জাদের নাম।
হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের জামালের ছেলে সাজ্জাদ নগরীর বায়েজিদ, অক্সিজেন, চান্দগাঁও এলাকায় পরিচিত ‘ছোটসাজ্জাদ’ বা ‘বুড়ির নাতি’ হিসেবে।
দুই যুগ আগে চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়কে দিনের বেলায় আড়াআড়ি বাস রেখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীবাহী মাইক্রোবাস আটকে গুলি চালিয়ে আটজনকে হত্যার আসামি ছিলেন বড় সাজ্জাদ। তার অনুসারী হিসেবে তার পক্ষে ছোট সাজ্জাদ বায়েজিদ ও চান্দগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি করতেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
গত ৪ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ অভিযানে গেলে সাজ্জাদ তাদের দিকে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান। এ সময় তার গুলিতে দুইজন সাধারণ মানুষ আহত হন।
আত্মগোপনে থাকা সাজ্জাদ গত ২৮ জানুয়ারি রাতে ফেইসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফ হোসেনকে পেটানোর হুমকি দেন।
এরপর ৩০ জানুয়ারি সাজ্জাদের সন্ধান চেয়ে ‘উপযু্ক্ত’ পুরস্কার ঘোষণা করে সিএমপি।
গত ১৫ মার্চ রাতে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিংমল থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামে নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন তার স্ত্রী শারিমন আক্তার তামান্নার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে তিনি ‘কাড়ি কাড়ি’ টাকা খরচ করে সাজ্জাদকে জামিনে বের করে আনার কথা বলেন। পাশাপাশি তার বিরোধী পক্ষকে হুমকি দিয়ে বলেন, “এখন তোমাদের পলাতক থাকার পালা।”
ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, “আমার জামাই আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে আমার কাছে আসবে। তখন খেলা শুরু হবে। খেলা মাত্র শুরু করেছ তোমরা, শেষ করব আমরা। ঠিক আছে?” বিডিনিউজ২৪