মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী, পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : গতকাল বুধবার (১৯ মার্চ ২০২৫) রাত ১০টার দিকে পটিয়া থেকে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব-০৭) ও পুলিশের যৌথ অভিযানে আবিদ আমিরী (৪২) নামে এক গণমাধ্যমকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের হালিশহর থানায় নাশকতা, দ্রুত বিচার আইন, হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর এবং আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর মামলায় দেখানো হয়েছে।
মামলার বাদী হালিশহরের মুন্সী পাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাজ্জাদ আহমেদ (৩৬)। হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এজাহারভূক্ত আসামি হিসেবে যৌথ বাহিনী আবিদ আমিরীকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছেন।
আটক আবিদ আমিরী পটিয়া পৌরসদরের ৩নং ওযার্ডের উত্তর গোবিন্দারখীল এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীন আমিরীর ছেলে। তিনি দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় পটিয়া-কর্ণফুলী প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত এবং কর্ণফুলী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর দুপুর ২টার দিকে বাদীর বাসায় হামলা হয়।ওইদিন লাঠিসোটা নিয়ে বাদীর ছোট বোন নুসরাত আহমদ ও নাজমুন নাহার কে মারধর করে ১ ও ২ নম্বর আসামি। এতে তাঁরা গুরুতর আহত হন। মামলার ৩ থেকে ৫ নম্বর আসামি বাদীর দোকানঘর ভাঙ্ধসঢ়;চুর করে প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেন।এ ঘটনায় বাদীর চাচাতো ভাই খবর পেয়ে দোকানে গেলে ৬ থেকে ১০ নম্বর আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে তাঁকে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের মারধর করে। এরপর আসামিরা বাদীর বোনের স্বামীর দোকানের মালামাল পুড়িয়ে দেয়, যাঁর আনুমানিক মূল্য ৫ লাখ টাকা।
এরপর বাদী ও এলাকাবাসী আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে ১,২ ও ৩ নম্বর আসামি অন্যদের সঙ্গে নিয়ে বাদীর পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয়। একই বছরের ২২ নভেম্বর বাদী তাঁর বন্ধুদের নিয়ে হুমকির বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে ১১ থেকে ৩১ নম্বর আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে তাঁকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বলে, না হলে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেন।
২০২৪ সালের ২৫ জুলাই বাদীর বোনের স্বামী দোকান থেকে সিএনজিযোগে বাসায় ফেরার পথে ১,২ ও ৩ নম্বর আসামি দলবদ্ধ হয়ে সিএনজি থামিয়ে তাঁর কাছ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও মালামাল ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। চিৎকার শুনে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে আসামিরা পালিয়ে যায়।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট কোতোয়ালি থানাধীন সিআরবি তিন রাস্তার মোড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় বাদী ও তাঁর ফুফাতো ভাই সড়কে বের হলে ১ ও ২ নম্বর আসামি দলবদ্ধ হয়ে তাঁদের তাড়া করে। এক পর্যায়ে ১ নম্বর আসামির নির্দেশে ২,৩ ও ৪ নম্বর আসামি বাদীর দিকে গুলি চালালে তাঁর ফুফাতো ভাই রহিম গুলিবিদ্ধ হন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। মামলায় দন্ডবিধির৩২৩,৩২৪,৩৮৫,৩০৭,৪২৭,৪৫৯,৩৫৮,৪৪১,৫০৬(২) /৩৪ ধারায় অপরাধের উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া দ্রুত বিচার আইন, ২০০২-এর ৪ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
বাদী মামলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. ফারুক সিদ্দিক জুবায়ের, মো. সাইফুর রহমান পলাশ, মো. রফিক (কানা রফিক), মোহাম্মদ ইমরান, ইমন, মো. আসিফ মাহমুদ সুমন, দেলোয়া, মারুফ, রাশেদসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৩১ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করেন। যাঁর মধ্যে আবিদ আমেরীর নাম ২৯ নম্বরে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০০-২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ঘটনার সত্যতা ও গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আবিদ আমেরীর কতটা এ ঘটনায় জড়িত তাঁর সত্যতা ও তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি। যাঁর হালিশহর থানার মামলাটি (মামলা নম্বর ০২/১৩৭) নম্বর তদন্ত করছেন। এসআই সোহেল রানা।
এদিকে এ মামলার বাদী হালিশহরের মুন্সী পাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাজ্জাদ আহমেদ সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আটককৃত সাংবাদিক আবিদ আমেরীকে চিনেন না বলে জানান। ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, হালিশহর থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত আবিদ আমেরীকে যৌথ বাহিনী আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছে। তাঁকে বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হবে। এ দিকে সাংবাদিক আবেদ আমেরীর আটকের খবরে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন কর্ণফুলী প্রেস ক্লাবসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। তাঁরা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ মুক্তির দাবি জানান। একইসঙ্গে মুক্ত গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা রুখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।