শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য বিভ্রান্তিকর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ◈ ভুল চিকিৎসায় যুবকের মৃত্যু, ৪ লাখ টাকায় রফাদফা, চুক্তিপত্র ভাইরাল ◈ বাণিজ্য উপদেষ্টার প্রশংসা করে যা বললেন হাসনাত ◈ গাজীপুরে শ্রমিক নিহতের জেরে মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের ৬ সদস্য আহত ◈ বিশ্বকাপ বাছাই, ব্রজিলের বিরুদ্ধে মেসিকে ছাড়াই  দল ঘোষণা আর্জেন্টিনার ◈ করমুক্ত ও নগদ প্রণোদনার সুযোগ নিয়ে এক ব্যবসায়ী ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন: এনবিআর চেয়ারম্যান ◈ হামজা চৌধুরী ৮ নম্বর জার্সি পরে বাংলাদেশের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে চান ◈ আদিতমারীতে দোকানের সামনে মাটি ফেলে দোকান দখলের চেষ্টা বিএনপি নেতার ◈ রাজশাহীতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ লাখ লাখ রোহিঙ্গার চোখে এখন স্বদেশে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন

প্রকাশিত : ১৭ মার্চ, ২০২৫, ০৮:৪৩ রাত
আপডেট : ১৮ মার্চ, ২০২৫, ০১:০২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লাখ লাখ রোহিঙ্গার চোখে এখন স্বদেশে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন

কক্সবাজারের আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গার চোখে এখন স্বদেশে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন। জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাসে মিয়ানমারে ফেরার স্বপ্ন বুনছেন তারা। আশা করছেন, ২০২৬ সালে ঈদের আগেই স্বদেশে ফিরে রোজা রাখবেন এবং ঈদ উদযাপন। তার আগ পর্যন্ত যে কদিন ক্যাম্পে থাকবেন ততদিন পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে জাতিসংঘ। খবর: সময় নিউজ।

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। মিয়ানমারে গণহত্যা, ধর্ষণ, এবং সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা জানান, তাদের দেশ ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কিন্তু তাদের মনে চিরকালীন একটি স্বপ্ন রয়েছে- তারা ফিরে যেতে চান। তবে এই ফেরত প্রক্রিয়া জটিল, যেখানে রয়েছে বহু আন্তর্জাতিক এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। তবে এবার জাতিসংঘের আশ্বাসে স্বদেশে ফেরার স্বপ্ন কী এবার সত্যি হতে যাচ্ছে?

শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের তৈরি নানা হস্তশিল্প ও দৈনন্দিন ব্যবহারের পণ্য দেখেন এবং লার্নিং সেন্টারের শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। একই সঙ্গে বৈঠক করেন রোহিঙ্গা কমিউনিটি, ধর্মীয় নেতা, নারী ও যুবকদের সঙ্গে। এসময় রোহিঙ্গাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে জাতিসংঘ সব করবে বলে আশ্বাস দেন জাতিসংঘের মহাসচিব।

এরপর বর্ধিত ২০ নম্বর ক্যাম্পে যান মহাসচিব। তার সঙ্গে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। দুজনই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং লাখো রোহিঙ্গা সঙ্গে ইফতার করেন। এসময় রোহিঙ্গারা আগামী ঈদ নিজ দেশে করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার আশ্রয়শিবির সফর, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক এবং তাদের বক্তব্যে শুনে স্বদেশ মিয়ানমারে ফেরার স্বপ্ন বুনছেন আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গা।

উখিয়ার ক্যাম্প ৪ এর বাসিন্দা মোহাম্মদ জিকির (৩৩) বলেন,
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ক্যাম্পে এসেছে, খুশি হয়েছি। উনি বলেছেন, আমরা সবাই দেশে ফিরে যেতে পারব- এটা জন্য আরও বেশি খুশি হয়েছি। আমরা ৮ বছর পরদেশে থাকছি, এখন আমাদের দেশে যেতে পারলে খুব খুশি। কারণ আমাদের মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজনের কবর মিয়ানমারে। এখন যেতে পারলে কবর জিয়ারত করতে পারব, মসজিদ-মাদ্রাসায় নামাজ আদায় করতে পারব।

একই ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ সৈয়দ (৬৫) বলেন, এ বছর তো চলে যাচ্ছে, আগামী বছর মিয়ানমারে রমজানে আমাদের সঙ্গে ইফতার করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের দুজনের কথা আমরা বিশ্বাস করেছি।

ক্যাম্প ৫ এর বাসিন্দা হোসেন জোহার (৪৫) বলেন, তারা যদি সত্যি সত্যি আমাদেরকে ফেরত পাঠাতে কাজ করেন তাহলে আমরা মিয়ানমারে যেতে পারব, এটা অবশ্যই বিশ্বাস করি।

দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও স্বদেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে পহেলা এপ্রিল থেকে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তায় খরচের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমাচ্ছে ডব্লিউএফপি। কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব করবে এমন আশ্বাসে দারুণ খুশি রোহিঙ্গারা।

বর্ধিত ক্যাম্প ৪ এর বাসিন্দা নুর কামাল (৫৫) বলেন,
ক্যাম্পে ভালো করে চলবেন, চারদিক থেকে যাতে ভালো করে চলতে পারেন এই ব্যবস্থা আমরা করে দিব। রেশনের ব্যাপারে এই কথা বলেছে জাতিসংঘের মহাসচিব। আমরা তার শোকরিয়া আদায় করছি এবং বেশি খুশি হয়েছি।

ক্যাম্প ৪ এর বাসিন্দা মোহাম্মদ সিরাজ (৩৫) বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছে, তোমাদের যে খাদ্য সহায়তা কমে যাচ্ছে সেটা আমরা ভেবে দেখছি এবং তোমাদের কথা বেশি করে ভাবছি। যেন তোমাদের খাদ্য সহায়তা না কমে সেটার চেষ্টা করছি এবং বিশ্ববাসীকে সহায়তার অনুরোধ করেছি। জাতিসংঘের মহাসচিবের এমন বক্তব্য আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে আমাদের খাদ্য সহায়তা কমবে না।

এদিকে রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা মনে করছেন, জাতিসংঘ চাইলেই রাখাইনে নিরাপদ জোন করলে স্বদেশে ফেরা সম্ভব হবে।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ক্যাম্পে এসেছেন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। রোহিঙ্গাদের মতামতের সঙ্গে তাদের দুজনের মতামতের মিল রয়েছে। রোহিঙ্গারা এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছে একদিকে খাদ্য কমিয়েছে আর অন্যদিকে ক্যাম্পে ৮ বছর জীবনযাপন করছে। এসব বিষয় দুজনকে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের দেশে আমরা এখন চলে যাব, আরাকানের মধ্যে সরকার নেই। আমাদেরকে কেউ প্রত্যাবাসন করতে পারবে না। শুধুমাত্র জাতিসংঘ আমাদেরকে নিরাপদ জোন করে দিয়ে পাঠিয়ে দিলে ২০২৬ সালের রমজান, ঈদ, কোরবানি আরাকানে করতে পারব।

মোহাম্মদ জোবায়ের আরও বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা যেটা কমে গেছে সেটা আমরা ব্যবস্থা করছি এবং যতটুকু লাগে ততটুকু দেয়া হবে। এই জন্য ধন্যবাদ।

সরকারের হিসেবে, দেশে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সহিংসতার সময় পালিয়ে আসে। গত বছরও প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়