সনত চক্র বর্ত্তী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের সালথায় পেঁয়াজের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকেরা। নতুন পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু হলেও ন্যায্যমূল্য হতে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে পেঁয়াজের দাম কম। ভরা সৃজনে পেঁয়াজের দাম আরো কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছে চাষিরা। ফলে বড় ধরণের লোকসানের সম্মুখীন হতে পারে তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরে চাষিরা পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়ায় এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক (১২ হাজার হেক্টর) জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছে। যা থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের চাষি ওহিদ মোল্যা ও গট্টি ইউনিয়নের চাষি জসিম মোল্যা জানান, পেঁয়াজ চাষে বিঘা (৫২ শতাংশ) প্রতি খরচ ৭০ হাজার থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হলে বিঘা প্রতি ৭০-৮০ মণ ফলন হয়। আর বর্তমান বাজারে পেঁয়াজ প্রতিমন বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০৫০ টাকা। যা খরচের তুলনায় কম। প্রতিমণ পেঁয়াজের মূল্য অন্তত ২ হাজার টাকা হলে কৃষকরা কিছুটা লাভবান হতো বলে এই কৃষক জানান।
উপজেলার রায়হান শেখ নামে এক বর্গা চাষি বলেন, নিজস্ব জমিতে এবছর প্রতিমণ পেঁয়াজ উৎপাদনে যদি ১১শ' থেকে ১২শ" টাকা খরচ হয়, তাহলে বর্গা চাষিদের দেড়গুন খরচ হবে। তাতে প্রতিমণ পেঁয়াজ উৎপাদণে খরচ পড়বে ১৭শ' টাকা থেকে ১৮শ' টাকা। সর্বনিম্নে বাজারে ২ হাজার টাকা পেঁয়াজের দাম হলে চাষিরা দু-মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁচতে পারতাম। পেঁয়াজের ন্যায্যমুল্যে না পেলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে সাধারণ চাষিরা। ফলে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নাই। অনেক কৃষক অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে, এনজিও হতে ঋণ নিয়ে এবং সমস্ত জমানো টাকা এই পেঁয়াজ ক্ষেতে বিনিয়োগ করেছে। এখন ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তাদের ভেতর এক ধরনের নিরব হাহাকার কাজ করছে।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সুদীপ বিশ্বাস বলেন, এবছর পেয়াজের বীজের দাম বেশি থাকায় এবং অধিক সেচের প্রয়োজন হওয়ার উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজস্ব জমিতে উৎপাদন ব্যয় মন প্রতি ৯শ টাকার কাছাকাছি এবং লিজ/বর্গা জমিতে ১৩শ টাকার কাছাকাছি। মৌসুমের শুরুতে দাম কম থাকলেও আশা করা যায় পরবর্তীতে দাম বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো বলেন, সরকার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষকদের নিকট হতে ন্যায্যমূল্য পেয়াজ ক্রয়ের উদ্যোগ নিবে বলে আমরা আশাবাদী।