শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৭ মার্চ, ২০২৫, ০২:২৮ রাত
আপডেট : ০৭ মার্চ, ২০২৫, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সালথায় খাম ছাড়া চিঠি দেওয়ায় মহিলা কর্মকর্তাকে ধমকালেন জামায়াত কর্মী!

সনত চক্র বর্ত্তী,ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের সালথায় খাম ছাড়া চিঠি দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে ধমকিয়েছেন ওয়ালি উজ জামান নামের জামায়াতের এক কর্মী। উপজেলা জামায়াতের আমির ও সাধারণ সম্পাদককে খাম ছাড়া চিঠি দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইলে ফোন দিয়ে ধমকের সুরে নানা ধরনের কথা বলেন ওই জামায়াত কর্মী।
 
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ডলির ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে এমন কাণ্ড ঘটান ওয়ালি উজ জামান।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওয়ালি উজ জামান সালথা উপজেলা জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। এছাড়া তিনি সালথা বাজারের ব্যবসায়ী ও স্কয়ার প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। ৮ মার্চ নারী দিবস উপলক্ষে খাম ছাড়া চিঠি দেওয়াকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটে।
 
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ডলি বলেন, ‘নারী দিবস উপলক্ষে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের চিঠি পাঠানো হয়। জামায়াতের নেতাদের চিঠিটি ইউএনও অফিসের অফিস সহকারী নিতাইয়ের মাধ্যমে জামান সাহেবের দোকানে পাঠানো হয়। আমার অফিসে লোকবল সংকট রয়েছে। তাছাড়া ব্যস্ততার কারণে চিঠিটির খাম দেওয়া হয়নি। খাম না দেওয়ায় ওই অফিস সহকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে হেনস্তা করা হয়। পরে আমার মোবাইলে কল দিয়ে খাম ছাড়া চিঠি কেন দিলাম—এ বলে ধমকান।
 
তাদের কথাপোকথনের একটি কলরেকর্ড  হাতে এসেছে। কলরেকর্ডটিতে খামা ছাড়া চিঠি দেওয়ায় জামায়াতকর্মীকে উচ্চস্বরে কথা বলতে শোনা যায়। ওই জামায়াতকর্মী জানতে চান, কেন খাম ছাড়া চিঠি দেওয়া হয়েছে। একপর্যায়ে বলেন, ‘কোথায় কী জিনিস পাঠাইতে হয়, কেমনে চিঠিপত্র পাঠাতে হয় বুঝতে পারেন না? রাজনৈতিক নেতাকে চিঠি দিতে হলে খামে ভরে দিতে হয়। খামের টাকা নাই? বরাদ্দের টাকা কোথায় যায়? আরও বলেন, ‘টাকা, বিল-ভাউচার ভালো করে খাইয়েন। এতদিন যা খাইছেন এখন বুইজ্যাশুইন্যা খাইয়েন।
 
তখন মহিলা কর্মকর্তা বলেন, আপনি এসব কী বলছেন? এর উত্তরে জামায়াতকর্মী বলেন, ‘যা বলছি ভালো করেই বলছি। ভদ্রলোকের মতো চিঠি পাঠাবেন। আপনি ইউএনওকে কমপ্লেইন করেন যে, জামান ভাই ফোন দিয়ে এই কথা বলছে। মহিলা কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে ওই জামায়াতকর্মীকে আরও বলতে শোনা যায়, আপনি সংশোধন হয়ে যান। আওয়ামী লীগের সময় অনেক খাইছেন। আওয়ামী লীগের ভয় দেখিয়ে অনেক মানুষকে ল্যাংঠা করছেন আপনি। চেয়ারম্যানদের পর্যন্ত ল্যাংঠা করছেন। আপনি এখন থেকে ভালো হয়ে যান।
 
এসময় তিনি ওই মহিলা কর্মকর্তাকে সালথা ছাড়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, সম্ভব না হলে সালথা ছাড়েন। তখন ওই নারী কর্মকর্তা বলেন, ডিপার্টমেন্টের ইচ্ছায় আমি সালথা থাকতেছি। তখন ওই কর্মী বলেন, ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের, ডিপার্টমেন্ট আপনার বাজানের না।
 
এ বিষয়ে জামায়াতকর্মী ওয়ালি উজ জামান বলেন, ‘আমি কোনো দলের না। আমার দোকানে উপজেলা জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারিকে চিঠি দেওয়ার জন্য এসেছিল। ওই চিঠিতে কোনো খাম ছিল না। পরে আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম, এটা ধমক হইলো কীভাবে? কারণ, উনি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করেছেন। তাছাড়া এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের দোসর। আওয়ামী লীগের সময় ক্ষমতা দেখিয়েছে, প্রতিদিন দুপুর ২টার পর অফিস করতো।’
 
জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির আবুল ফজল মুরাদ বলেন, ‘ঘটনাটি ইউএনও আমাকে জানিয়েছেন। উনাকে ধমকায়নি, জানতে চেয়েছিল। তারপরও বিষয়টি নিয়ে বসা হবে। তবে চিঠি দেওয়ার একটি ন্যূনতম কার্টেসি থাকা উচিত ছিল।’
 
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিছুর রহমান বালি বলেন, ঘটনাটি আমাকে ওই কর্মকর্তা মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়