হত্যা, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ ১৭ মামলার আসামি বগুড়ার আলোচিত তুফান সরকার আদালতের নারী হাজতখানায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। পুরুষ হাজতি হয়ে নারী হাজতখানায় যাওয়ার ঘটনায় আদালত পুলিশের সহকারী টাউন উপপরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও তুফানের স্ত্রী-শাশুড়িসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। খবর: নিউজ২৪
সোমবার (৩ মার্চ) বিকেলে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, তুফান সরকার বগুড়া শহর যুব শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সস্পাদক। তিনি বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার মজিবর সরকারের ছেলে। দুদকের এক মামলার ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি তুফানের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ আরও ১৭টি মামলা রয়েছে। সোমবার বিকেলে কারাগার থেকে হাজিরার জন্য আদালতে নেওয়া হয় তুফান সরকারকে। হাজিরা শেষে পুরুষ হাজতখানায় না রেখে রাখা হয় নারী হাজতখানায়। সে সময় আদালতে পুলিশের সহযোগিতায় নারী হাজতখানায় তার স্ত্রী আইরিন আক্তার সোনালী, শ্যালক নয়ন, শ্বাশুড়ি তাসলিমা বেগম, স্ত্রীর বড় বোন আশা বেগম এবং একজন আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশীদ দেখা করেন।
বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আনা হয়। দুপুরের মধ্যেই কারাগার থেকে আনা সকল হাজতিকে প্রিজনভ্যানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হাজতখানার চাবি এটিএসআই জয়নাল আবেদিনের কাছে থাকে। তুফান সরকারকে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ করে দেন জয়নাল আবেদিন। আদালতের সবার অগচোরে ঘটনাটি ঘটে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান জানান, হাজিরার পরে তুফান সরকারকে যে পুরুষ হাজতখানায় রাখার কথা সেখানে না রেখে নারী হাজতখানায় রাখা হয়। সেখানে তার সাথে তার স্ত্রী, স্ত্রীর বড় বোন, শাশুড়ি এবং একজন অ্যাডভোকেটের সহকারীকে আমরা একসঙ্গে পাই। তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কীভাবে তারা নারী হাজতে ঢুকলো এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। সঠিকভাবে তদন্ত শেষে আমরা বিস্তারিত জানাতে পারব। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে এতে পুলিশের গাফিলতি রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এক কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে তুফান সরকার। পরে শালিস ডেকে ধর্ষিতা ও তার মা’কে চরিত্রহীনা উল্লেখ করে তাদের মারধর করে এবং মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকার। সেই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় একজন দর্শনার্থীর মাধ্যমে স্যালাইন পাইপ দিয়ে ফেন্সিডিল সেবন করতে গিয়ে কারারক্ষীদের হাতে ধরা পড়ে সেই দর্শনার্থী। সেই ঘটনাতেও আলোচনায় আসে তুফান সরকার। তুফান সরকারের নামে ১৭টি মামলা রয়েছে। পাঁচ আগস্টের পর আত্মগোপণে থাকা অবস্থায় গত অক্টোবর মাসে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।