মো:আদনান হোসেন ধামরাই ঢাকা থেকে : বিগত ১৭টি বছর মানুষ তাদের ভোটের অধিকার হারিয়ে ছিল। জনগণের সেই ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ায় বিএনপির লক্ষ। আজ সোমবার (২৪ফেব্রুয়ারী) ধামরাই পৌরশহরের যাত্রাবাড়ী মাঠে ঢাকা জেলা বিএনপির আয়োজনে মহা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মোঃ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বিগত ১৫টি বছর আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করেছে। তারা আমাদের নেতাকর্মীদের খুন, হত্যাসহ অসংখ্য গায়েবী মামলা দিয়ে বাড়ীতে ঘুমাতে দেয়নি। আমরা কোন মিছিল মিটিং করতে পারি নাই।
তিনি আরও বলেন, আপনারা সংস্কারের কথা বলছেন, সংস্কার করেন, কিন্তু জনগণের চাওয়া নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করে চুরান্ত তারিখ ঘোষনা করেন। ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের পতন হলেও কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয় নি। শেখ হাসিনা ভারত বসে দেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের নেতাকর্মীরা অক্যবদ্ধ থেকে সে ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি সুন্দর নির্বাচন চাই। ১৫টি বছর হাসিনা সরকার আমাদের উপর যে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে একটি গণতান্ত্রিক দলের উপর এতো নির্যাতন কেউ করেনি।
আমাদের নেতাকর্মীদের থানায় নিয়ে গুলি করে মেরেছে পঙ্গু করে ফেলেছে। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুম করে মেরে ফে ফেলেছে। এরপর তারা ক্ষান্ত থাকেনি আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ৬বছর জেল কাটিয়েছে।
ফখরুল ইসলাম বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবিতে, অবনতিশীল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির দাবিতে, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষনার দাবিতে এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবি পূরণ করতে হবে। জনগণকে ভয় দেখিয়ে নয় তাদের কাছে গিয়ে ভালোবাসা দিয়ে নিজেদের কাছে আনতে হবে। তারেক জিয়ার ৩১ দফা পাড়া মহল্লায় জনগণের দোড় গুড়ায় পৌছাতে হবে।
এই সময় তিনি আরো বলেন, তারেক জিয়ার নামে ৮৬ টি মামলা দিয়েছিল। আমরা এখনো আদালতে হাজিরা দিতে হয়। আমরা কি ত্যাগ স্বীকার করেছি তা বুঝতে হবে। বার বার বিএনপিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নি। এমনকি আলেম উলামাদেরকেও নির্যাতন করতে কুন্ঠিত হয়নি। শাপলা চত্বরের কথা বুলে যায় নি। একটি মাত্র দল আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করেছে। ভোটের অধিকার ছিল না। ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনের নামে করছে প্রহসন। তামাশা দেখিয়েছে আমাদের এই ফ্যাসিষ্ট হাসিনা।
তিনি আরো বলেন, একদিন ফেইসবুক এ দেখেছি ৩২ নম্বরের বাড়িটি কেন ভাঙা হলো আমার কি অপরাধ। কিন্তু তিনি এখনো জানে না তার কি অপরাধ। দেশটাকে বিক্রি করে ফেলেছে। সে দিন সেনাবাহিনী একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশের নেতাকর্মীদের রেখে দেশ ফেলে পালিয়ে গেছে। ফ্যাসিষ্ট হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে। আজ দেশে আওয়ামী লীগের লোকজন কোথায়। আজ ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। কারণ তারা দেশে লুটপাট চালিয়েছে। জনগণ তার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।
হাসিনা সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জনগণের সাথে প্রহসনের নির্বাচন করেছে। নির্বাচনের আগেই তারা নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছে। একটি ভোট কেন্দ্রেও মানুষ ভোট দিতে পারে নি। রাতেই সব শেষ। এমন ফ্যাসিষ্ট সরকার তার প্রমাণ পেয়েছে আজ পালিয়ে গিয়ে ভারত অবস্থান করছে। দেশের উন্নয়ন জনগণের উন্নয়নে নয় নিজেদের জন্য কাজ করেছে। লুটপাট করেছে। আবার ভারত বসে উস্কানিমূলক কথা বলে। বর্তমানে দেশের মানুষ সচেতন আর কোন ছাড় দিবে না।
তিনি ড. ইউনুস সম্পর্কে বলেন, আমরা একজন যোগ্য ব্যক্তিকে দেশের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তিনি একজন নোবেল জয়ী। যে ছাত্ররা আন্দোলন করে সরকারের পতন হয়েছে তারা হাসিনার আমলে ভোট দিতে পারে নি। কিছু কিছু দল চায় আগে স্থানীয় নির্বাচন। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচন দিয়ে দেশে যেন নৈরাজ্য সৃষ্টি না করা হয়। বর্তমান সরকারকে অনুরোধ করি দেশকে আর নৈরাজ্যের দিকে ফেলে দিবেন না।
জিয়াউর রহমান দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তত্বাবধায়ন সরকারের বিধান বিএনপি দিয়েছিল। ২০৩০ সালে বিএনপি কি করবেন তারও দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তারেক জিয়ার ৩১ দফার মধ্যে সকল সংষ্কার রয়েছে। বিএনপিকে ইচ্ছে করলেই কখনো শেষ করা যায়না। হাসিনা ও এরশাদ বিএনপিকে কিছু করতে পারেনি।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম নিয়ে আজ আমরা চিন্তাগ্রস্ত। চাল ৮০ টাকা কেজি। বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে গেলে সুশৃঙ্খল থাকতে হবে। মানুষকে ভয় দেখিয়ে নয় ভালোবাসা দিয়ে কাছে আনতে হবে। অনেকেই মনে করেন বিএনপি চাঁদাবাজি করছে। মিথ্যে কথা। আওয়ামী লীগ এই মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। বিএনপির মধ্যে কোন চাঁদাবাজি নেই। ভোটের দিন মানুষ যেন বলতে পারে আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দিবে। বিএনপিকে কোনঠাসা করার জন্য ফ্যাসিবাদরা একনো চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু পারবে না। যা ১৬ বছরে পারে নি। এদেশের ছাত্র জনতা হাসিনা সরকারকে তার উপযুক্ত জবাব দিয়ে দিয়েছে।
সমাবেশ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বিএনপির মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহম্মেদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব তমিজ উদ্দিন।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ খন্দকার আবু আশফাক এর সভাপতিত্বে, বিএনপির মহা সমাবেশে প্রধান অথিতি হিসাবে বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইদুল আলম বাবুল।
বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখবেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম আজাদ।