ফেনীর পরশুরামে নিজকালিকাপুর সীমান্তে সোমবার রাতে লাইট বন্ধ করে কয়েকটি বাঙ্কার খনন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। অন্যদিকে মুহুরী নদী সংলগ্ন বল্লারমুখার বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সোমবার রাতে সীমান্তে লাগানো লাইট বন্ধ করে ৫/৬টি বাঙ্কার খনন করেছে বিএসএফ। বল্লামুখার বাঁধের ৭০ মিটার অংশের ৩০ মিটার নো ম্যানস ল্যান্ডে রয়েছে, এমন দাবি করে বিএসএফ বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণের শুরু থেকেই বার বার বাধা দিয়ে আসছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারতের ঈশানচন্দ্র নগর ও বাংলাদেশের নিজ কালিকাপুর ক্যাম্পের বিজিবি-বিএসএফ’র মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। দুপুরে বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে সীমান্তে ওই জায়গাটি কয়েকবার পরিমাপ করা হয়। বিজিবির পক্ষে মজুমদার হাট কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আবদুর রশিদের নেতৃত্বে সেখানে বিজিবি সদস্যরা শক্ত অবস্থান নেয়।
এ সময় তিনি বলেন, আমাদের শক্তি আগেই নষ্ট করে দিয়েছে। ১৫ বছর আগের শক্তি থাকলে তারা কাছে আসতে পারত না। আমি সিলেট থাকা অবস্থায় আমার হাতে অস্ত্র ছিল না। শুধু লাঠি ছিল তারপরেও বিএসএফ ভয়ে আমার কাছে আসত না। সীমান্তের মিটিংয়ে অস্ত্র আনা আর্ন্তজাতিক নিয়মের পরিপন্থী। আমরা খালি হাতে যাই। কিন্তু তারা অস্ত্র নিয়ে আসে। সীমানা রক্ষায় বিন্দু পরিমাণ ছাড় নেই।
সরেজমিনে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশের অভ্যন্তরে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনী জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদরসহ বৃহত্তর নোয়াখালী ৯০ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। স্মরণকালের ভয়াবহ ওই বন্যায় জেলার কয়েক লাখ মানুষ ঘরবাড়ি, ফসল ও সম্পদ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়। বন্যায় মুহুরী কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১০২টি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। যার মধ্যে মেরামত কাজ সম্পন্ন হয় ৯৬টির। এতে ব্যয় হয় ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
এছাড়াও মেরামত কাজ চলমান রয়েছে বল্লামুখার দুটিতে। পানির তোড়ে নদী তীরবর্তী নিজ কালিকাপুর সীমান্তের বল্লারমুখা বেড়িবাঁধের তিনটি স্থানে প্রায় ৫শ মিটার বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে এখানের বাঁধ পুননির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। এক মাস ধরে বাঁধগুলো পুনঃনির্মাণের কাজ করে আসছে ঠিকাদার।
এর আগে ৩০ জানুয়ারি বল্লামুখার বাঁধ নির্মাণে বাধা প্রদান করে বিএসএফ। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনানুযায়ী শূন্যরেখা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। তবে সেই বাধা উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যেতে ঠিকাদারদের নির্দেশ দিয়েছে বিজিবি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, বিএসএফ সীমান্তে সোমবার রাতে বাতি বন্ধ করে ৫/৬ টি বাঙ্কার খনন করেছে। সকালে বল্লামুখার বেড়িবাঁধ নির্মাণ চলাকালীন ইস্কেভেটর বন্ধ করে দিয়েছে, কাজ বন্ধ করতে বলেছে।
এ বিষয়ে জানতে বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। উৎস: দেশ রুপান্তর।
আপনার মতামত লিখুন :