এম.ইউছুপ রেজা, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। ছুটির দিনে বইপ্রেমী মানুষের ঢল নামে, বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার মেলায় উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। লেখক, পাঠক, সংস্কৃতিকর্মীসহ নানা বয়সী মানুষ বইমেলার আবহ উপভোগ করছেন।
বিকেলের পর স্টলগুলোর সামনে দীর্ঘ সারি, লেখকদের সঙ্গে আড্ডা, অটোগ্রাফ সংগ্রহ, সেলফি এবং মুখরোচক খাবারের স্টল মেলাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এবারের বইমেলায় শিশুদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। মা-বাবা বা শিক্ষকদের সঙ্গে ছোট্ট সোনামণিরা বইয়ের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে হাজির হচ্ছে। শিশুতোষ বইয়ের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, পাশাপাশি গল্প-উপন্যাসের বইও পাঠকদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে। কবিতার বইয়ের চাহিদা তুলনামূলক কম হলেও সাহিত্যানুরাগীরা স্টল ঘুরে নিজেদের পছন্দের বই সংগ্রহ
করছেন।
চট্টগ্রামের এই বইমেলায় মোট ১৪১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্য, ইউপিএল, কথাপ্রকাশ, অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, ঝিনুক, গ্রন্থরাজ্য, অ্যাডর্ন, শিখা, সিয়ান, জ্ঞানকোষ, বেঙ্গল বুকস, পাঞ্জেরী, মনন, বিদ্যানন্দ, তৃতীয় চোখ, রোদেলা, আদর্শ, জলধি, কিংবদন্তীসহ দেশবরেণ্য অনেক প্রকাশনা সংস্থা। ইসলামিক বইয়ের মধ্যে তরজুমান, দ্বীন দুনিয়া, মাইজভাণ্ডারী, আলোকধারা, রাহনুমা, মাকতুবাতুল আসলাফ, রুহানা, আয জিহান ইত্যাদির স্টলে ভক্তদের প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রকাশনা সংস্থাগুলোর মধ্যে স্বাধীন, খড়িমাটি, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র, জিয়া স্মৃতি পাঠাগার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
প্রকাশকদের মতে, এ বছর মেলায় নতুন লেখকদের বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ বেড়েছে। তরুণ লেখকদের আত্মজীবনী, সমকালীন রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও ইতিহাসভিত্তিক বই ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি জনপ্রিয় লেখকদের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে পাঠকদের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সেলিনা হোসেন, হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে
বিশেষ আয়োজন পাঠকদের আকৃষ্ট করছে। চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি ও মেলা কমিটির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন হাসান বাবু জানান, প্রতিদিনই পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে এবং বিশেষ করে ছুটির দিনে স্টলগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।
পাঠকদের মধ্যে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, গবেষণা, শিশুতোষ, ক্যারিয়ার ও মোটিভেশনাল বইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রকাশকরা আশানুরূপ বিক্রিতে সন্তুষ্ট। গত ১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় ও সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সহযোগিতায় অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিকরা। এক লাখ বর্গফুটজুড়ে বিস্তৃত এ বইমেলা চট্টগ্রামের সংস্কৃতিপ্রেমীদের জন্য এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন মেলায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকছে, যেখানে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বইমেলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শনিবার গুলএজার সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, আলকরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সিটি কর্পোরেশন কমার্স কলেজের শিক্ষার্থীরা চমৎকার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপহার দিয়েছে।
বইমেলা ঘিরে পাঠক-দর্শনার্থীদের উৎসাহ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রিয় লেখকদের বই সংগ্রহের পাশাপাশি বইপ্রেমীরা তাদের জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছেন। আয়োজকদের প্রত্যাশা, সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি পাঠক-দর্শনার্থীর উপস্থিতি দেখা যাবে। ছবির ক্যাপশন: ছুটির দিনে শুক্রবার মেলায় বিভিন্ন স্টলে ভিড় করেছেন পাঠকরা।
আপনার মতামত লিখুন :