বিল্লাল হোসেন, কালীগঞ্জ, গাজীপুর : গাজীপুরের কালীগঞ্জে ছিনতাই, মারধর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, হত্যার হুমকি ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে। হামলার ঘটনায় তিন জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১৭/১৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইউনিয়ন এলপিজি অটোগ্যাস রিফুয়েলিং স্টেশনের সত্বাধিকারী উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের মৈশাইর গ্রামের জামিল ওয়াহেদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এজাহারে সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদীর গাজীপুর-ইটাখোলা ভায়া আজমতপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে মৈশাইর এলাকায় ‘‘ইউনিয়ন এলপিজি অটোগ্যাস রিফুয়েলিং স্টেশন” নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত ০৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র, রামদা, লোহার পাইপ, লাঠিসোটা ও পিস্তল নিয়ে উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মারধর, ভাংচুর, প্রায় সোয়া পাঁচ লক্ষ টাকা ছিনতাই সহ হত্যার হুমকি ও দশ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে।
হামলা ও চাঁদাবাজির ঘটনায় উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের মৈশাইর এলাকার মৃত আব্দুছ সাত্তার খানের পূত্র মোঃ রতন খান (৪৯), কিরণ খানের পূত্র নাফিজ খান (২০) ও দড়িবাঘুন এলাকার আবুল হোসেনের পূত্র সেলিম (২৫) কে আসামী করে ও অজ্ঞাত ১৭/১৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীগন দীর্ঘ দিন যাবৎ উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে ম্যানেজার মাহবুব মিজির কাছে দশ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে আসছিল। চাঁদার টাকা না দিলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর করাসহ খুন করে ফেলার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক সারে সাতটায় আসামীগন ১৭/১৮ জন সন্ত্রাসী লোক নিয়ে দেশীয় অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হইয়া মৈশাইর বাজারে বাদীকে হত্যার জন্য খোঁজাখুঁজি করে। বাদীকে না পেয়ে ওইদিন রাতে আনুমানিক রাত ১০ টায় মামলার প্রধান আসামী রতন খানের নেতৃত্বে মোটর সাইকেল যোগে এসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অতর্কিতে হামলা চালায়।
হামলাকারীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের লাঠিসোঁটা ও লোহার পাইপ দিয়ে এলোপাথাড়ি মারপিট করে। এসময় রিফুয়েলিং স্টেশনের ক্যাশ কাউন্টারের ড্রয়ারে থাকা নগদ ৫ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা, তিন কর্মচারীর বেতনের ৫০ হাজার টাকা এবং তাদের ব্যবহৃত ৩টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫২ হাজার টাকাসহ মোট ৬ লক্ষ ১৯ হাজার পাঁচশত টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। হামলার পর সন্ত্রাসীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ করে রেখে যায়। দাবীকৃত দশ লক্ষ টাকা চাঁদা না দিলে প্রতিষ্ঠানের মালিক জামিল ওয়াহেদকে খুন করে লাশ ঘুম করে ফেলবে এবং রিফুয়েলিং স্টেশনটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে বলেও হুমকি দেয়। এঘটনায় প্রতিষ্ঠানের মালিক বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৯, তারিখ ১১/০২/২৫ ইং।
বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুর পর্যন্ত পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মামলার বাদী রিফুয়েলিং স্টেশনের মালিক জামিল ওয়াহেদ বলেন, হামলার ঘটনায় আমি এখনো আতঙ্কে আছি। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন কখনো হইনি। আমিসহ আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। একাধিক স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানায়, সড়কে ছিনতাই, চাঁদাবাজির ঘটনায় ওই এলাকাবাসী তাদের ওপর অতিষ্ঠ। গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আলাউদ্দিন প্রতিবেদককে বলেন, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনায় তদন্ত চলছে। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করি ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে পারবে।
আপনার মতামত লিখুন :