শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৭:৫৪ বিকাল
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চাঁদা না পেয়ে পাহাড়ে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করায় পিসিসিপি'র প্রতিবাদ 

আহমেদ বেলাল : চাঁদা না পেয়ে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার চারটি উপজেলায় একটি বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানির ২১টি টাওয়ারে হামলা চালিয়ে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করেছে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।

উক্ত ঘটনায় তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র সন্ত্রাস বিরোধী ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটি।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথবিবৃতিতে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন কায়েস ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবীব আজম এ প্রতিবাদ জানান।

ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী হামলায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন উপজেলাগুলো হলো— খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা এবং রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলা। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির ২১ টি মোবাইল টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় বর্তমানে কোম্পানিটির কয়েক লাখ গ্রাহক চরম বিপাকে পড়েছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং প্রশাসনিক কাজকর্মে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে।

গত ২২ জানুয়ারি ভোররাতে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, মানিকছড়ি ও মাটিরাঙ্গায় ১১টি মোবাইল টাওয়ারের পাশাপাশি রাঙামাটির নানিয়ারচর সহ বিভিন্ন এলাকায় ১০টি টাওয়ারে সমন্বিত হামলা চালায় ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। তারা সার্ভার রুম ভাঙচুরসহ টাওয়ারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এর পাশাপাশি বেশকিছু যন্ত্রপাতিও লুট করে নিয়ে যায় তারা। পরবর্তীতে গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে মোবাইল টাওয়ার সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হলেও ২/৩ দিনের ব্যবধানে সমস্ত টাওয়ারে আবারও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, মিটার ভাংচুর ও লুটপাট করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। এতে ওইসব এলাকার  নেটওয়ার্ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়াসহ তাদের নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে স্থানীয় জনগণ।

পাহাড়ের তথাকথিত উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী আঞ্চলিকদলগুলোকে চাঁদা হিসেবে প্রতিমাসে ৭০ লাখ  টাকা পরিশোধ করে কোম্পানীটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ এর পক্ষ থেকে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি চাঁদা দাবির পাশাপাশি এককালীন ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এতো বিপুল পরিমাণ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসীরা রাঙামাটির নানিয়ারচর ও খাগড়াছড়ি জেলার সদর, দীঘিনালা, মহালছড়ি, পানছড়ি, কবাখালীসহ কয়েকটি এলাকায় সর্বমোট ২১টি টাওয়ার লাইন কেটে দেওয়া, ব্যাটারি লুট করে নেওয়াসহ জেনারেটর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে।

এতে করে সার্বিকভাবে অন্তত ১০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে রবি ও তার অংশীদার কোম্পানীগুলো। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিরাপত্তার জন্য অশনি সংকেত। এককালীন ৫ কোটি আর প্রতি মাসে ৩৪ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে বেসরকারী মোবাইল অপারেটর রবি'র অন্তত ২১টি নেটওয়ার্ক টাওয়ার নষ্ট করে দিয়েও ক্ষান্ত হয়নি প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চুক্তি বিরোধী আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ।

নির্ধারিত সময়ে চাঁদা পরিশোধ না করায় গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাঙামাটি থেকে টাওয়ার ঠিক করতে যাওয়া পাহাড়ি সম্প্রদায়ের এক টেকনিশিয়ানকেও তুলে নিয়ে গেছে ইউপিডিএফ। তার বাড়ি রাঙামাটি শহরেই, তিনি তিন সন্তানের জনক। 

একমাসে অন্তত ২১টি টাওয়ারে হামলা চালানোর পর  রবি'র টেকনিশিয়ান অপহরণ করার মাধ্যমে হিংস্রতার পরিচয় দিল ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসীরা।

নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানিটির একজন প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসীরা সম্প্রতি টাওয়ার অপারেটরদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছে। তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করা হলে তারা 

টাওয়ারে এই হামলা চালায়। বর্তমানে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো মোবাইল কানেক্টিভিটি ছাড়াই রয়ে গেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন আমরা জানতে পেরেছি, দাবি মানা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য এলাকায়ও এ ধরনের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এই চলমান চাঁদাবাজি এবং হুমকি মোবাইল টাওয়ার অপারেটরদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ।

এই ঘটনা শুধুমাত্র পাহাড়ি অঞ্চলে শান্তি ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষুন্নই করে না, বরং চাঁদাবাজি ও সহিংসতার হাতিয়ার হিসেবে ডিজিটাল অবকাঠামোকে কাজে লাগানোর একটি বিপজ্জনক নজিরও স্থাপন করেছে— এমনটাই দাবি করছে পিসিসিপি নেতৃবৃন্দরা। 

এতবড় একটি সন্ত্রাসী ঘটনায় সকল মহল ও সুশীল নামধারী চেতনা বাজরা নীরব থাকায় ধিক্কার জানায় পিসিসিপি।

চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ পাহাড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তাই পিসিসিপি'র নেতৃবৃন্দরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানান, ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় পিসিসিপি পাহাড়ের সকল সন্ত্রাসী বিরোধী ছাত্র-জনতাকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অচল করে দিবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়