শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:৫০ দুপুর
আপডেট : ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৫৯০ কোটি টাকা লুট করতেই ফ্ল্যাটে হানা!

তথ্য ছিল যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারীর ফ্ল্যাটে ৫৯০ কোটি টাকা রয়েছে। ওই টাকা লুট করতেই ২০টি বস্তা নিয়ে দুটি মাইক্রোবাস যোগে হানা দেন ২০ জনের একটি দল। তাদের হাতে ছিল অত্যাধুনিক ওয়াকিটকি, খেলনা পিস্তল। এক জনের কাছে ছিল গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের নকল আইডি কার্ড। ওই ফ্ল্যাটে টাকা মজুত থাকার খবর পেয়ে সেখানে হানা দিয়েছিল তারা। রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানিয়েছে গোয়েন্দা পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার ১২ জন।

তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং জড়িত অন্য দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের কর্মকর্তারা। গত শুক্রবার রাতে নগরীর খুলশী এলাকার একটি বহুতল ভবনের আটতলায় এই ডাকাতির চেষ্টা হয়। খবর পেয়ে খুলশী থানা-পুলিশের সদস্যরা গিয়ে হাজির হন সেখানে। ১২ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসেন থানায়। বাকি আট জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানান, তাদের কেউ সাবেক ব্যাংকার, কেউ বালু সরবরাহকারী আর কেউ জমি বেচাকেনায় জড়িত। গ্রেফতার আসামিদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ কোটি কোটি টাকার সন্ধানে যাওয়ার তথ্য জানতে পারে।

এ ঘটনায় বাড়ির মালিক যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারী বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলা করেন। গ্রেফতার ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে আসে পুলিশ। তারা হলেন মো. ওয়াজেদ রাকিব (৩৬), মো. হোসাইন (৪২), মো. রোকন (৩৯), মো. ওসমান (৪০), রুবেল হোসেন (২৫), মহি উদ্দিন (৪৫), আবদুস সবুর (৩৭), মো. ইয়াকুব (৩৫), মোজাহের আলম (৫৫), হারুন অর রশিদ (৩৬), আবদুল মান্নান (৩৫) ও শওকত আকবর (২৮)।

নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার ১২ জনকে তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যমুনা অয়েলের সাবেক কর্মকর্তার বাসায় ৫৯০ কোটি টাকার তথ্য পেয়ে তারা সেখান থেকে টাকাগুলোর জন্য গিয়েছিলেন। এ জন্য তারা ২০টি বস্তাও নিয়ে গিয়েছিলেন। ডাকাত দলের পরিকল্পনায় যারা ছিলেন, তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। পলাতকদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা ওই ফ্ল্যাট থেকে কয়েকটি বস্তা নামাতে দেখেছেন তারা। যারা পালিয়েছেন তারাই এসব বস্তা নিয়ে গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে ওই বস্তায় নগদ টাকাই ছিল। তবে পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে।

জানা গেছে, পেশায় বালু সরবরাহকারী ওয়াজেদ রাকিব পুরো ঘটনার পরিকল্পনাকারী। ৭ জানুয়ারি ওয়াজেদ জানতে পারেন, ওই বাসায় ৫৯০ কোটি টাকা রয়েছে। ওয়াজেদ বিষয়টি মো. মালিক ও ওয়াসিমের সঙ্গে আলাপ করেন। পরে তারা হোসাইনকে যুক্ত করেন। হোসাইন তার পরিচিত বিভিন্ন সংস্থার লোকজনের সঙ্গে বিষয়টি আলাপ করেন। তারা তিনজনই জমি বেচাকেনার ব্যবসা করেন। পরিকল্পনামতো হোসাইন তার পরিচিত একটি বাহিনীর একজনের সঙ্গে কথা বলেন। সেই ব্যক্তি মীরসরাইয়ের আলম ও শওকতকে ঠিক করে দেন। এরপর দফায় দফায় তারা নগরীর হালিশহরে বৈঠক করেন। আলমই খেলনা পিস্তল, ওয়াকিটকিগুলো সংগ্রহ করেন। আলম সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) নকল পরিচয়পত্রগুলো তৈরি করেন আলম। তাদের মধ্যে মহিউদ্দিন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা।

পরিকল্পনামতো গত শুক্রবার দুটি মাইক্রোবাসে করে ২০ জনের দল খুলশী এলাকায় যমুনা অয়েলের সাবেক কর্মকর্তার ফ্ল্যাটে যান। ওই সময় তারা নিজেদের ডিজিএফআই সদস্য পরিচয় দেন। বাসার নিরাপত্তাকর্মীদের বেঁধে রেখে ফ্ল্যাটে ঢোকেন। ওই সময় যমুনা অয়েলের কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন আনসারী বাসায় ছিলেন না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন। মূলত বাসা ফাঁকা কোন দিন ছিল, তা আগে থেকেই তথ্য নিয়েছিলেন ডাকাতির চেষ্টায় জড়িতরা।

পুলিশ জানায়, তিনটি ফ্ল্যাট নিয়ে ডুপ্লেক্স বাসা তৈরি করেছেন গিয়াস উদ্দিন। পাঁচ কক্ষের এ বাসায় প্রতিটি কক্ষ অত্যাধুনিক ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট লক করা। আটতলার ফ্ল্যাট দিয়ে প্রবেশ করে নয়তলায় যাওয়া যায় অনায়াসে। নয়তলার তিনটি কক্ষ ও আটতলার দুটি কক্ষের দরজায় ডিজিটাল লক লাগানো। প্রতিটি লক খুলতে ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রয়োজন হয়। ডাকাত দল আটতলার মূল দরজা ভেঙে প্রবেশ করে ভেতরের সিঁড়ি দিয়ে নয়তলায় উঠে দুটি কক্ষের ডিজিটাল ফিঙ্গার লক ভাঙার চেষ্টা করে। বাসায় মোটা অংকের টাকা থাকার বিষয়ে গিয়াস উদ্দীন আনসারীর কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতদল ফ্ল্যাটটি থেকে কোনো টাকা নিতে পারেনি। ফ্ল্যাটমালিক তাদের জানিয়েছেন, খরচের জন্য বাসায় দুই লাখ টাকা রেখেছিলেন। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ড শেষে আজ মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়