জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি : লালমনিরহাটের মোস্তাফিতে একটি কোল্ড স্টোরেজে হত্যা মামলার আসামী, মাদক কারবারি ও চিহ্নিত আওয়ামীলীগের দোষরের সাথে চায়ের আড্ডার ছবি সংগ্রহ করতে গেলে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় ছাত্র-জনতা ও বিএনপিসহ এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করলে পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হন প্রতিবাদকারীরা। এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানার ওসি ও ডিবির ওসির প্রত্যাহারের দাবিতে ৫ ঘন্টাব্যাপী লালমনিরহাট-রংপুর অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী। এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও ডিবির ওসি ফিরোজ কে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) লালমনিরহাট সদর থানার ওসি ও লালমনিরহাট ডিবি পুলিশের ওসিকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করার বিষয়টি লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার(৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করে তারা।
অবরোধকারীদের দাবি লালমনিরহাট পুলিশের পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম , সদর ওসি আব্দুল কাদের ও ডিবি পুলিশের ওসি ফিরোজ হোসেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী কর্মী ও মাদককারবারী আখের আলীর সাথে চায়ের আড্ডায় বসায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ সময় চায়ের আড্ডার ছবি ধারণের চেষ্টা করলে হট্টগোলের সৃষ্টি হয় এবং পুলিশ ওই তিন যুবককে আটক করে।
আটককৃতদের ছাড়াতে উপস্থিত জনতা দাবি তুললে পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করে। পরে খবর পেয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক সাত্তারসহ বেশকিছু বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপরেও চড়াও হয় পুলিশ এবং লাঠিচার্জ করে। এতে স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা সাত্তার, গোকুন্ডা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজুসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়।
গোকুন্ডা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু বলেন, হত্যা মামলার আসামীর সাথে নৈশ ভোজ ও চায়ের আড্ডার ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা শুনে আমরা (বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠন) সেখানে যাই। এ সময় পুলিশ আমাদের সাথে উগ্র আচরণ করে আমাদের উপর নির্যাতন করে। পুলিশের নির্যাতনে কয়েকজন এরই মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এমন নির্যাতন পুলিশের মাঝে আওয়ামীলীগের চরিত্র ফুটে তুলেছে বলেও দাবি তার।
লালমনিরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার বলেন, গোকুন্ডা ইউনিয়নের কুখ্যাত মাদককারবারী, আওয়ামীলীগের ক্যাডার ও হত্যা মামলার আসামী আখের আলীর সাথে আড্ডার ছবি তুলতে যাওয়া তিন যুবককে আটক ও হট্টগোলের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে আমিসহ স্থানীয় বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতাকর্মী এবং ছাত্র- জনতা গেলে পুলিশ আমাদের উপরেও লাঠিচার্জ করে। এতে আমাদের অনেকেই আহত হয়। সেনাবাহিনীর আশ্বাসে রাতে ৪ ঘন্টা পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। বুধবার বিকেলে বিক্ষোভ কর্মসূচী থাকলেও সদর থানার ওসি ও ডিবির ওসিকে ক্লোজড করায় ঘোষিত কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক জানিয়ে মুঠোফোনে লালমনিরহাট সদর থানার তদনাত ওসি বাদল বলেন, মুন্সিগঞ্জ থেকে আগত পূর্ব পরিচিতের দাওয়াতে আমরা একটি কোল্ড স্টোরেজে গিয়েছিলাম। হঠাৎ তিন যুবক ছবি তোলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় তারা তিনজনই মাদকাসক্ত। পরে তাদের আটক করলে মহাসড়ক অবরোধ করে কিছু লোকজন। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এসময় কে কোন দলের তা দেখা হয়নি বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট পুলিশের পুলিশ সুপার গতকাল চায়ের আড্ডার উপস্থিত থাকার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, গতকালের ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানার ওসি ও ডিবির ওসিকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(এ সার্কেল) ফজলুল হককে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :