‘আমার স্বামী সেলিম তালুকদারের মৃত্যুর তিন দিন পর ছিল আমাদের বিবাহবার্ষিকী। আমার স্বামীর লাশই ছিল মনে হয় বিবাহবার্ষিকীর উপহার! এর চার দিন পর জানতে পারি, আমি সন্তানসম্ভবা। আজ আমি অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।’
ঝালকাঠিতে জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্মরণসভায় এ কথা বলেন সুমি আক্তার (১৯)। গত ৩১ জুলাই ঢাকার পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেলিম তালুকদার (৩৪) মারা যান। এর আগে সেলিম গত ১৯ জুলাই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। সেলিম তালুকদার নলছিটি পৌরসভার মল্লিকপুর এলাকার সুলতান তালুকদারের ছেলে।
শনিবার সকাল ১০টায় ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায় ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাওসার হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে দোয়া ও মোনাজাত হয়।
সভা শেষে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারের হাতে ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা নগদ দেওয়া হয়। ঝালকাঠি জেলায় জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ১০ জন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হন।
স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন রানাপাশা গ্রামের নিহত নাঈম ইসলামের (১৭) বাবা কামরুল ইসলাম। নাঈম গত ১৯ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে নিহত হন। নাঈমের বাবা বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলের মর্গের ডিপ ফ্রিজের মধ্য থেকে ২০ জুলাই ছেলের লাশ খুঁজে পাই। আজ আমি সন্তান হারিয়ে দিশাহারা।’
রাজাপুরের রুবেল হোসেনের বোন লিজা খানম বলেন, তাঁর ভাই ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। গত ৫ আগস্ট তাঁর ভাই আশুলিয়ায় বাসার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
পুলিশের গুলিতে দুই চোখ নষ্ট হওয়া নলছিটির কয়া গ্রামের বেলাল হোসেন (২৮) বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গত ১৮ জুলাই বিকেলে পুলিশের গুলিতে তাঁর দুটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এখনো তাঁর দুই চোখে তিনটি গুলি রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর শরীরেও ৩০টি গুলি রয়েছে। এখন অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেন, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের কাছে দেশের মানুষ চিরঋণী হয়ে থাকবেন। সব নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে।
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন নলছিটির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম, কাঁঠালিয়ার চেঁচরীরামপুরের নিহত সুজন খানের বাবা বাবুল খান, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শাহাদাৎ হোসেন, জেলা জামায়াতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারি ফরিদ হোসেন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রিফাত আহম্মেদ, জেলায় আহত-নিহতের বাছাই কমিটির সদস্য মীর এনামুল হক, ছাত্র প্রতিনিধি মো. তানজিল হাসান প্রমুখ। উৎস: প্রথম আলো।
আপনার মতামত লিখুন :