শাহাজাদা এমরান,কুমিল্লা : সরকার পরিবর্তনের পর এখনো কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থা পুনর্গঠিত না হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে কুমিল্লার ক্রীড়াঙ্গন। জেলার খেলাধুলার মূল চালিকা শক্তি জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জাতীয় পর্যায়েও জেলাক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে অংশ নেয় জেলাগুলো। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গুলো ভেঙ্গে দেন। সবার মতো ভেঙ্গে যায় কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটিও। একইসাথে বিভাগীয়, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং জেলা-বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটিও ভেঙে দেয়া হয়।
গত ২৭ আগস্ট অ্যাডহক কমিটি গঠনের একটি রূপরেখা প্রদান করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এতে কিভাবে ক্রীড়া সংস্থাগুলোর এডহক কমিটি গঠন করতে হবে সে নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে কমিটিগুলো ৭ সদস্যের করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কমিটিতে কারা থাকবেন তারও একটা গাইডলাইন দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহবায়ক হবেন জেলা প্রশাসক। সদস্য সচিব হবেন জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা। সদস্য থাকবেন ৫ জন। তাদের মধ্যে দুইজন হবেন সরাসরি ক্রীড়া স¤পৃক্ত ব্যক্তি। যেমন খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি।
স্থানীয় প্রেক্ষাপটে সর্বজন গ্রহণযোগ্য ক্রীড়ানুরাগী কিংবা ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে হবেন একজন সদস্য। ক্রীড়া স¤পৃক্ত সংগঠক বা ছাত্র প্রতিনিধি থাকবেন একজন। আরেকজন সদস্য হবে ক্রীড়া সাংবদিক।
প্রজ্ঞাপনের তিন মাসেও কুমিল্লার মত গুরুত্বপূর্ণ জেলার পূর্ণাঙ্গ অ্যাডহক কমিটি গঠিত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অফিস সহকারীদের দিয়েই চলছে কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার নামে মাত্র কার্যক্রম। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম কেন্দ্রিক খেলাধুলাসহ সকল কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ফলে ঘাস বড় হয়ে ও ইঁদুরের গর্তের ফলে স্টেডিয়াম ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠছে।
কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি গঠিত না হওয়ায় তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবর। তিনি ফেসবুকে এ নিয়ে দীর্ঘ পোস্ট করেন। তিনি লিখেছেন- “কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি এখনো কেন দেয়া হয়নি! কেন এখনো অনিশ্চয়তা! মূল কমিটি তাহলে কবে হবে? খেলাধুলার ইয়ার ক্যালেন্ডার কীভাবে হবে? এদিকে লোকাল খেলাধুলা বন্ধ হয়ে আছে!”। আসিফ আকবরের পোস্টটি জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম বেশ গুরুত্বের সাথে প্রচার করেছে।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা ক্রীড়া লেখক সমিতির সভাপতি আবুল হাসানাত বাবুলবলেন, দেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হবে তাই বলে ক্রীড়াঙ্গন স্থবির হতে পারে না, মাঠ খালি পড়ে থাকতে পারে না। পূর্ণাঙ্গ অ্যাডহক কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের কাজ শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হন। অ্যাডহক কমিটির কাঠামতেও জেলা প্রশাসককে আহবায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে সচল ও জীবন্ত রাখা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব। এ বিষয়ে আমি উনাকে খুব একটা উৎসাহি দেখি না। তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে দ্রæত সচল ও মাঠে খেলাধুলার কার্যক্রম শুরু করার আহবান জানান।
ক্রীড়া সংগঠক ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ম্যানাজার বদরুল হুদা জেনু বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর গত মাসগুলোতে জেলার ক্রীড়াঙ্গনে স্থবিরতা বিরাজ করছে। মাঠ খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে তরুণদের খেলাধুলার সময়টা অন্য কোন খারাপ কাজে ব্যয় করার ঝুকি বাড়ছে। এ স্থবিরতা কাটাতে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ অ্যাডহক কমিটি প্রয়োজন। অনেকদিন হয়ে গেলেও এখনো কমিটি গঠন হয়নি, এটা দুঃখজনক। এছাড়া স্টেডিয়ামকে বিপিএল ফুটবলের ১৭ তম আসরে মোহামেডান ও আবাহনীর হোম ভেন্যু করায় অসন্তোস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, স্থানীয় খেলাধুলা বাদ দিয়ে স্টেডিয়ামকে ঢাকার ফুটবল দলকে দেওয়া ঠিক হয়নি। এটি বাতিলে জেলা প্রশাসককে উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা ক্রীড়া অফিসার ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব সুমন কুমার মিত্র বলেন, “আমরা আপাতত ক্রীড়া সংস্থার দাপ্তরিক কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছি, স্টাফরা যাতে নিয়মিত বেতন ভাতা পান ও প্রতিষ্ঠানটি যাতে মারা না যায় সে চেষ্টা করছি।”
সার্বিক বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার জানান, অনেকদিন হয়েছে পূর্ণাঙ্গ অ্যাডহক কমিটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে পাঠিয়েছি। বর্তমানে এটা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সংস্থার আহবায়ক হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি। জেলার ক্রীড়া অফিসারসহ অন্যরা দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা স্টেডিয়ামের বকেয়া দোকান ভাড়া ৬ লক্ষ টাকার মত আদায় করেছি। মাঠকে চাঙ্গা করতে ক্রীড়া
সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেলে সার্বিক কাজ এগিয়ে নিতে পারবো। কুমিল্লা স্টেডিয়ামকে মোহামেডান ও আবাহনীর হোম ভেন্যু করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাদেরকে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তারা সাপ্তাহে ৩ দিন মাঠ ব্যবহার করবে। এতে স্থানীয় খেলাধুলার উপর কোন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :