শিরোনাম
◈ পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে বদলে দেয়া হয় মেট্রোরেলের নিয়োগবিধি ◈ আসছে বছর খেলাপি ঋণ ছাড়াতে পারে পাঁচ লাখ কোটি টাকা ◈ বঙ্গবাজারে অগ্নিসংযোগ, তাপসসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ◈ (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ যে দোয়া ‘জান্নাতের গুপ্তধন’ ◈ সর্বকালের সেরা ধনী ইলন মাস্ক: ফোর্বসের দাবি ◈ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: আন্দালিভ রহমান পার্থ ◈ আমাকে স্যার বলার দরকার নেই, আমি আপনাদের ভাই: উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ◈ আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য কতটুকু সত্য? ◈ সাংবাদিক নূরুল কবীরকে বিমানবন্দরে হয়রানির অভিযোগ, তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ০৮:৫৯ রাত
আপডেট : ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কুমিল্লা গোমতীর পাড় সড়ক যেন আরেক মেরিন ড্রাইভ

শাহাজাদা এমরান,কুমিল্লা : কুমিল্লা গোমতী নদীর পাড় ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতিদিন বিকেল হতে রাত পর্যন্ত নদীর পাড়ে দর্শনার্থীদের আনাগোনা চোখে পড়ার মত। তবে শুক্র-শনিবার সহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের ঢল বেশি নামে।

জানা গেছে, ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কটকবাজার থেকে গোমতী নদী কুমিল্লা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। নদীর দুই পাশেই রয়েছে সড়ক। এরমধ্যে বিবির বাজার থেকে ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত পাকা সড়কটি বেশ প্রশস্ত। এ সড়ক দিয়ে বিবির বাজার স্থল বন্দর হয়ে ভারতের আগরতলা শহর পর্যন্ত যাওয়া যায়। 

গোমতীর পাড়ে কুমিল্লা শহর রক্ষা বাঁধের উপর নির্মিত এ পাকা সড়কই দর্শনার্থীদের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। সড়কটিতে ভারি কোন যানবাহন চলাচল না করায় দর্শনার্থীরা নির্বিঘ্নে  যাতায়াত করতে পারে। কেউ বাইকে, কেউ অটোরিকশা ভাড়া করে, আবার কেউবা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এ সড়কে ঘুরতে আসেন।

সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় নদীর বিশাল চর, সবজির ক্ষেতজুড়ে সতেজ সবুজের এক মোহনীয় দৃশ্য চোখে পড়ে। সেই সাথে রয়েছে নির্মল বাতাস। ওই সড়কের পাশে টিক্কারচর ব্রীজ এলাকায় প্রতিদিন বিকেলে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় জমে। শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম হওয়ায় টিক্কারচর ব্রীজের দুই পাশে অন্তত ১৫টি ফুচকা চটপটির ভ্রাম্যমান দোকান বসেছে। প্রতিটি দোকানে ভিড় রয়েছে। টিক্কারচর ব্রীজ থেকে বিবির বাজার সড়ক ধরে সামনে এগুতেই হাতের বামে “ক্যাফে ৩৫০০”। এখান দিয়ে নদীর চরে নামা যায়। অনেক দর্শনার্থী চরে নেমে হাঁটছেন, আড্ডা দিচ্ছেন, কেউবা ছবি-সেলফি তুলছেন। 

 দূর দুরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ গোমতী নদী দেখতে আসছে। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ আসলেই অনেক সুন্দর। নদীর পাড়ের সড়কটি কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের চাইতে কোন অংশেই কম নয়। যেহেতু শহরের পাশেই তাই আমরা এখানে চড়–ইভাতির আয়োজন করেছি। সবাই খুব পছন্দ করেছে জায়গাটা।

বিবির বাজার সড়ক ধরে আরো সামনে এগুতেই হাতের ডানে অনেকগুলো চায়ের দোকান। শ্রীমঙ্গল চা ঘর, কাশ্মীরি চা ঘর, ত্রিপুরা চা ঘর সহ অন্তত ১০টির বেশি চায়ের দোকান রয়েছে। বসেছে গ্রীল, কাবাব, বারবিকিউর দোকানও। প্রতিটি দোকান ঘিরেই দর্শনার্থীদের ভিড় রয়েছে।

ত্রিপুরা চা ঘরের উদ্যোক্তা মঈন উদ্দিন জানান, প্রতিদিন আমাদের দোকানে প্রায় ৩শ’ থেকে ৪শ’ কাপ চা বিক্রি হয়। শুক্রবার ও শনিবার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এর মধ্যে শুক্রবার ৭শ’ থেকে ৮শ’ কাপ চা আমরা বিক্রি করি। শহরের একদম কাছে হওয়ায় সময় পেলে সবাই বিকেল ও সন্ধ্যাবেলায় এখানে ভিড় জমায়।

কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, গোমতী নদীর সড়ক ও এর আশেপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করার মত। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রের মতো কোন আবাসিক স্থাপনা নেই, এ সড়কে পর্যাপ্ত যানবাহন চলাচল করে না। নারী ও শিশুদের জন্য কোন শৌচাগার নেই। সন্ধ্যার পর এখানে অবস্থান করার নিরাপত্তা ঝুকিও রয়েছে। এ সমস্যাগুলোর সমাধান করা গেলে গোমতী নদী এলাকা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আরো অনেক আকর্ষণ করবে। কুমিল্লার পর্যটক শিল্প আরো বিকশিত হবে।

সদর দক্ষিণ উপজেলা থেকে স্বামী সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন তাহমিনা আক্তার। তিনি বলেন, অনেকের মুখে শুনেছি জায়গাটা অনেক সুন্দর। এসে অনেক ভালো লাগছে। তবে এখানে কোন ওয়াশরুম চোখে পড়েনি এটা একটা সমস্যা। বিশেষ করে শিশু ও নারীদের জন্য। বিষয়ে তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্শন করেন।

শহর থেকে অটোরিকশা ভাড়া করে পরিবার সহ ঘুরতে এসেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। রফিকুল ইসলাম বলেন, আজ ছুটির দিন তাই পরিবার সহ এখানে ঘুরতে এসেছি। বাঁধের উপর হওয়ায় সড়কটি অনেক উঁচু। তাই এ সড়ক দিয়ে ঘুরলে অনেক দূর পর্যন্ত আশেপাশের সব কিছু দেখা যায়। তিনি বলেন, রাস্তা ফাঁকা পেয়ে অনেকে বেপরোয়া গতিতে বিকট শব্দে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। এটা ছাড়া এখানকার সব কিছুই ভালো লেগেছে।

এ বিষয়ে কথা হয় ট্যুরিস্ট পুলিশ কুমিল্লা জোনের ওসি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ময়নামতি জাদুঘর, শালবন বিহার, বৌদ্ধ বিহার, ম্যাজিক প্যারাডাইস, ওয়াটার পার্ক, ওয়ার সিমেট্রি ও ধর্মসাগর পাড় একালায় আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকি। তবে গোমতী নদীর পাড় ও এর আশেপাশে আমাদের কোন টহল বা নজরদারি নেই। তিনি বলেন, আমি নিজেও গোমতী নদীর পাড় সড়ক দিয়ে বিবির বাজার পর্যন্ত গিয়েছি। যেহেতু এ এলাকায় স্থানীয় দর্শনার্থীদের ভিড় দিনদিন বাড়ছে আমরা এটা নিয়ে পরবর্তী মিটিং এ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবো।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার জানান, আমরাও চাই গোমতী নদীর পাড় এলাকায় পরিকল্পিত পর্যটক স্থান হিসেবে গড়ে উঠুক। সড়কের পাশে পর্যটকদের জন্য পাবলিক টয়লেট ও বিশ্রামাগার স্থাপিত হলে এর সুফল সবাই পাবে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বা বেসরকারি ভাবে কেউ উদ্যোগ নিলে আমরা সহযোগিতা করবো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়