মোশায়ারা আক্তার জলি, দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি : কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা চাঁদার দাবিতে প্রকাশ্যে প্রবাসী স্বপন ভূঁইয়া (৩৫) নামের এক যুবককে দুই দফা পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তাকে পেটানোর ১৪দিন পর বুধবার (১৩ নভেম্বর)রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
গত ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় উপজেলার জগতপুর ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামে এ মারধরের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। নিহত প্রবাসী স্বপন ভূঁইয়া উপজেলার ওমরপুর গ্রামের সোবহান ভূঁইয়ার বড় ছেলে।এ ঘটনার পর বুধবার(১৩ নভেম্বর)সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তার লাশবাহী গাড়ি নিয়ে তিতাস থানায় বিক্ষোভ করেছেন স্বজনেরা।
জানা যায়,স্বপন দীর্ঘদিন কাতারে ছিলেন। তিনি দেশে এসে সম্প্রতি নতুন করে সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।স্বজনদের অভিযোগ, চাঁদার জন্য স্থানীয় ‘কিশোর গ্যাং’ তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু স্বজনেরা।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় দোকানদার জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন,ওই দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় আসিফ,নাজমুল,রহিম,বাবু,দিপু,রোকন,রাকিব,সাইদুলসহ ২০/৩০জন কিশোর ছেলে স্বপনকে মারতে মারতে আমার দোকানের সামনে নিয়ে আসে। স্বপন মার খেয়ে দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তারাও পিছে পিছে দৌড়ে গিয়ে ধরে এনে আবারও তাকে ভীষণ মারধর করে।এরপর স্বপন অজ্ঞান হয়ে গেলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাকে আমার দোকানের সামনে ফেলে রেখে চলে যায়।
নিহত স্বপনের স্ত্রী ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মরিয়ম বেগম জানান, আট মাস আগে স্বপন কুয়েত থেকে দেশে ফেরার পর স্থানীয় ‘কিশোর গ্যাং’ এর লিডার আসিফ ও নাজমুল তার স্বামীর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। কিন্তু স্বপন দিতে রাজি হননি। এতে উত্তেজিত হয়ে গত ৩১ অক্টোবর রাত ১০টায় তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে একটি কনফেকশনারী দোকানের সামনে দুই দফায় পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তাকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় স্বপনকে উদ্ধার করে তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।পরে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার তিনি মারা যান।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মরিয়ম বেগম বলেন, একমাত্র ছেলেকে কীভাবে লালন-পালন করবেন? ছেলের লেখাপড়ার খরচ কে দেবে? তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার স্বামী। তিনি স্বামীর হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি করেছেন।
নিহত স্বপনের বোন আয়েশা আক্তার বলেন, তার নিরপরাধ ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।তার ভাই হত্যার বিচার দাবি করেছেন। চাঁদার দাবিতে ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনি নিজে বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ বলেন,নিহতের বোন আয়েশা আক্তার বাদী হয়ে কিশোর গ্যাং নেতা আসিফকে প্রধান আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।মামলায় ২৫জনের উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
মোশায়ারা আক্তার জলি
আপনার মতামত লিখুন :