শাহাজাদা এমরান,কুমিল্লা : কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে নদী খালে আড়াআড়ি বাঁধ ও বাঁশের তৈরী এক ধরনের বেড়া দিয়ে বাঁধ দিয়ে বেশাল জাল বসিয়ে রাখায় পানি নামতে তৈরী হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। বন্যা পরিস্থিতির প্রায় দেড়মাস পার হলেও দীর্ঘ জলাবদ্ধতার কারনে ভোগান্তিতে পড়েছে এ এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। নিম্ম এলাকাতে বন্যার পানি স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রুপ নিয়েছে। কিছু এলাকায় এখনো হাটু সমান পানি দিয়ে রাস্তায় চলাচলা করছে সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীরা পানি দিয়ে পায়ে হেঁটেই প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করছে।
মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত নদী খালে দেয়া এসব বাঁধ অপসারনের দাবি জানিয়েছেন এ এলাকার বাসিন্দারা। জানা যায়, উপজেলার ডাকাতিয়া নদী ও শাখা খালসমূহে অবৈধভাবে আড়াআড়ি বারা বাঁধ (বাঁশের তৈরী এক ধরনের বেড়া) দিয়ে দীর্ঘকাল থেকে বেশাল জালের মাধ্যমে মাছ ধরে আসছে স্থানীয় কিছু মৎসজীবি ও জেলেরা। এতে পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এ জনপদে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। নদী খালে বাঁশের তৈরি বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করায় বর্ষার পানি বড় বড়
নদী ও সাগরে যায় ধীর গতিতে।
পানির স্রোতে বাঁধা সৃষ্টির কারণে জেলার অপেক্ষাকৃত উচুঁ এলাকাগুলোর বর্ষার পানি নেমে জলাঞ্চল নামে খ্যাত মনোহরগঞ্জের বিস্তীর্ণ জনপদে জমে থাকে। পানির প্রবাহে এ বাঁধার ফলে বর্ষায় পলি জমে ডাকাতিয়া নদী সহ ঐ অঞ্চলের সবগুলো নদী-খাল প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। এতে নদীর ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারনে অল্প বৃষ্টিপাতেই এখানে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলাস্থ ডাকাতিয়া নদী ও শাখা খালসমূহে প্রায় শতাধিক আড়াআড়ি বাঁধ রয়েছে। সেখানে বেশাল জাল বসিয়ে ধরা হচ্ছে মাছ। মাছ আটকানোর জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরী এসব বেড়া নদী খালে আড়াআড়িভাবে দিয়ে রাখায় পানি অপসারনে প্রধান বাধা বলে জানিয়েছেন
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা তৌহিদ হাসান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, নদী, খাল ও উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দেয়া ও অবকাঠামো নির্মাণ করে মাছ শিকার করা ১৯৫০ সালের মৎস সুরক্ষা ও সংরক্ষন আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। তিনি বলেন এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী খালে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে বেশাল জালের মাধ্যমে মাছ শিকার করছে। এভাবে মাছ শিকার করায় ছোট বড় সকল প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে, এতে ডিমওয়ালা মাছ জালে উঠায় বংশবিস্তারে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে আবার ছোট মাছগুলো বড় হওয়ার আগেই ধরা পড়ছে এ সকল জালে । তাছাড়া নদী-খালে এ ধরনের সৃষ্ট বাঁধে পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ সকলবাঁধ উচ্ছেদে উপজেলা মৎস অধিদপ্তর বিভিন্ন সময়ে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার কথা জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে জলাবদ্ধতা তৈরী কোভাবেই কাম্য নয়। ডাকাতিয়া নদী ও শাখা খালসমুহে থাকা বাঁধ নিজ দায়িত্বে উঠিয়ে নেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। সর্ব সাধারনের অবগতির জন্য সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। জনস্বার্থে নদী-খাল থেকে এসব বাঁধ, কচুরিপানা অপসারন ও ডেঙ্গু বিষষয়ক সচেতনতায় মাইকিং করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে সেনাবাহিনী ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নিয়োজিত ট্যাগ অফিসার, শিক্ষার্থী ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন এর সদস্যদের নিয়ে কার্যক্রম শুরুর কথা জানান তিনি। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহনের কথাও জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :