শিরোনাম

প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০২:৪৩ রাত
আপডেট : ২০ অক্টোবর, ২০২৪, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

উত্তরে অকাল বন্যায় ডুবল লোকালয়: হাজার-হাজার মানুষ পানিবন্দি, আবাসন, বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট

টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তাপাড়ে অসময়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। এতে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদি পশুসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নদনদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে সকালে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, উজানে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানিপ্রবাহ কমলেও ভাটি এলাকা কাউনিয়ায় আরও বাড়তে পারে। গতকাল দুপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার সন্ধ্যায় পানি ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাত ১১টায় বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাইয়ে। এ বছর তুলনামূলক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা হয়েছে। জুলাইয়ের পর আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে অতিবৃষ্টির কারণে মৌসুম ছাড়াই দীর্ঘমেয়াদি বন্যা হয়েছে। বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ের বন্যা বড় চিন্তার কারণ।

সরেজমিন দেখা যায়, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার চরগ্রাম তলিয়ে পানিবন্দি অন্তত চার হাজার পরিবার। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, সকাল থেকে তিস্তার পানি বাড়লেও, সন্ধ্যায় নামতে শুরু করে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের আট উপজেলায় ৬০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি। লালমনিরহাট সদরের তিস্তা রেলস্টেশনের কাছে রেললাইনে পানি ওঠায় ব্যাহত হয় লালমনিরহাট-ঢাকা ট্রেন চলাচল। দুর্গত এলাকার আমন ও শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভারতের গজালডোবা ব্যারাজ উন্মুক্ত করে দেওয়ায় পানির চাপ সামলাতে ভাটিতে থাকা তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।

লালমনিরহাটের আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, চণ্ডীমারী, বাহাদুরপাড়া, আরাজি ছালাপাক ও গোবর্ধন গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। সলেডি স্পার-২ বাঁধ এলাকার পানিবন্দি বক্কর জানান, ঘরে পানি ঢুকে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমনক্ষেত ডুবে গেছে। ক্ষতি হয়েছে বেগুন আবাদের। উপজেলার গোবর্ধন হায়দারিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, গোবর্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসমাইলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানির কারণে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, অনবরত বৃষ্টি ও উজানের পানিতে তিস্তার পানি বেড়েছে। এ কারণে তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি আর না হলে এবং উজান থেকে পানি আসা বন্ধ হলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, লালমনিরহাটে ১০ হাজার পানিবন্দি পরিবারের জন্য নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৯০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিশুখাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গোখাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে আবারও ধরলা, দুধকুমার, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এ নিয়ে জেলায় চতুর্থ ধাপে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে উঠতি আমনক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীতে বিলীন হচ্ছে। গত দুই মাসে উপজেলার কাপাসিয়া, হরিপর, শ্রীপুর ও চণ্ডীপুর  ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক বিঘা ফসলি জমি এবং শতাধিক বসতঘর তিস্তায় বিলীন হয়েছে। উৎস: সমকাল।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়