শিরোনাম
◈ রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে মশাল মিছিল (ভিডিও) ◈ শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি অসত্য বলেননি: মানবজমিন সম্পাদক ◈ দিল্লি থেকে মীরাটের সেনানিবাসে শেখ হাসিনা? ◈ লেবানন থেকে প্রথম ধাপে দেশে ফিরলেন ৫৪ বাংলাদেশি ◈ পাস করানোর দাবিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে তালা দিলেন শিক্ষার্থীরা ◈ ১ থেকে ১৯ নভেম্বর এয়ার ইন্ডিয়া বিমানে চড়বেন না! ফের হুমকি খলিস্তানি নেতা পন্নুনের ◈ শেখ হাসিনার পদত্যাগ মীমাংসিত বিষয়, বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে ডাচ  সরকারের কারিগরি সহায়তার প্রতিশ্রুতি  ◈ অজ্ঞাতস্থান থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারির বিবৃতি, যা বললেন ◈ মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তনের হাওয়া: সৌদিকে পর্যবেক্ষক রেখে ইরান-রাশিয়া-ওমান যৌথ নৌ-মহড়া

প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট, ২০২৪, ০২:১৯ রাত
আপডেট : ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বন্যাকবলিত কুমিল্লা ও ফেনীতে খাবার সংকট

দেশের নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে। তবে উজানের ঢল ও পাশর্^বর্তী জেলার পানি নেমে আসায় লক্ষ্মীপুরে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল বুধবারও জেলার নিম্নাঞ্চালে চার-পাঁচ ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। জেলার ৫ উপজেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে দিশাহারা পড়েছে। নোয়াখালীতেও টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। এখনো জেলার ৮টি উপজেলার ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। অন্যদিকে, ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। তবে জেলার তিন উপজেলায় চরম খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কিছু এলাকায় পানি সামান্য কমলেও বাড়ি ফেরা সম্ভব হচ্ছে না বানভাসি মানুষের। এ জেলায়ও দুর্গত এলাকার মানুষ খাবার ও ওষুধের তীব্র সংকটে রয়েছে। ঢাকায় নিজস্ব প্রতিবেদক এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ-

সব নদীর পানি কমতে শুরু করেছে : গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী রেজা জানান, নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমে এসেছে। এবারের

আকস্মিক এ বন্যায় এ পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে কুমিল্লায়। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা নেই। তিনি জানান, দেশের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে; যার মধ্যে কুমিল্লায় ১২, ফেনীতে ২, চট্টগ্রামে ৫, খাগড়াছড়িতে ১, নোয়াখালীতে ৬, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১ ও কক্সবাজারে তিন জন মারা গেছেন। মৌলভীবাজারে ২ ব্যক্তি এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আক্রান্ত ১১ জেলায় মোট ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৪টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৮ লাখ ২২ হাজার ৭৩৪ জন। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে মোট ৬১৯টি মেডিক্যাল টিম সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ বরাদ্দ ১ কোটি বাড়িয়ে ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা করা হয়েছে।

কেএম আলী রেজা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সংগৃহীত মোট ৮৮ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, কাপড় ও পানি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (ডিডিএম) মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ডিডিএম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মেডিক্যাল টিম ও অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গতকাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে জানানো হয়, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী জেলার সীমান্ত অঞ্চল এবং ভারতের ত্রিপুরায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। ওই অঞ্চল এবং উজানের নদীর পানি কমছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে সেখানে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় মনু, খোয়াই, ফেনী, মুহুরি, গোমতী, তিতাস নদীর পানি কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস নেই।

লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে উজানের ঢল ও পাশর্^বর্তী জেলার পানি অনবরত প্রবেশ করায় কয়েক দিন ধরেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গতকালও ৪-৫ ইঞ্চি পানি বেড়েছে, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এদিকে আশ্রয়ের খোঁজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটছেন বানভাসিরা। আশ্রয় সংকটের পাশাপাশি বানভাসিরা ভুগছেন ওষুধ, সুপেয় পানি ও খাবার সংকটে। দুর্গম এলাকায় পানি বেশি হওয়ায় সদর উপজেলার পৌরসভার সাহাপুর, রাজিবপুর ও বশিকপুর ইউনিয়নের বালাইশপুর গ্রামবাসী কোনো ত্রাণসামগ্রী পায়নি বলে অভিযোগ করেন মানুষ।

নোয়াখালী : নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এখনো অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নতুন করে মানুষ ওঠার জায়গা নেই। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। মঙ্গলবার রাতের ভারী বর্ষণে পানি আরও আধা ফুট বেড়ে যায়। জেলার অনেক দুর্গম এলাকায় ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে জানান বাসিন্দারা। স্থানীয়রা জানায়, গতকাল বিকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলাশহর মাইজদীসহ সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এবং বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিলে বন্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে অন্য উজেলায় উন্নতি হয়েছে। বেগমগঞ্জের শরীফপুরের আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্রামের মানুষ বেশি কষ্টে আছে। চলাচলের পথ দুর্গম হওয়ায় আমরা ত্রাণও পাচ্ছি না। কবিরহাটের কালামুন্সি উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ইকবাল মাহমুদ বলেন, এখানে ছোট একটি কক্ষে ৬টি পরিবার গাদাগাদি করে থাকছে। এর মধ্যে অনেকে নতুন করে আসছেন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার জন্য। কিন্তু থাকার জায়গা নেই। কোম্পানীগঞ্জের রানা নামের এক যুবক জানান, আমার বাবা হার্টের রোগী। বসতঘরে পানি উঠে যাওয়ায় সেখানে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। বসুরহাট বাজারে বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য ঘুরছি। এখন বাসা পাওয়াও কঠিন।

ফেনী : ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। তবে অনেক এলাকায় ভোগান্তি কমেনি। অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো মানুষ রয়েছেন। এর মধ্যে সোনাগাজী উপজেলায় চরচান্দিয়া ও চরদরবেশ ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রামে চরম খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া দাগনভূঞার সিন্দুরপুর ইউনিয়নে পৌঁছানো যাচ্ছে না খাবার। সেখানকার মানুষ চরম খাদ্য সংকটে ভুগছেন। একই অবস্থা ফেনী সদরের ধলিয়া মোটবী, পাঁছগাছিয়া, লেমুয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ফেনী শহরের প্রধান সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও এখনো বহু এলাকার মানুষ পানিবন্দি। নাগরিক সুবিধার একদম কিছুই চালু হয়নি। এক সপ্তাহ পরও নেই বিদ্যৎ, ইন্টারনেট ও গ্যাস সংযোগ। আগে যেখানে ঘরের ছাদ পর্যন্ত পানি ছিল, সেখানে এখন কোমর পর্যন্ত। ফেনী শহরের পূর্ব ও পশ্চিম উকিল পাড়া, পেট্রোবাংলা, পাঠানবাড়ি, একাডেমিসহ অনেক এলাকার মানুষ এখনো পানিবন্দি। এদের অনেকে কোনো ধরনের ত্রাণ সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি কিছুটা কমলেও কয়েক দিনের মধ্যে বাড়িতে ফেরা সম্ভব হবে না ভানবাসি মানুষদের। আশ্রয়কেন্দ্র ও গোমতী নদীর তীরে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। জেলায় বন্যাকবলিত হয়ে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৬১ হাজার। ৭২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮১ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এখন প্রকট হয়ে উঠেছে খাদ্য ও ওষুধের সংকট। বন্যার্তদের জন্য বেসরকারিভাবে দেওয়া ত্রাণসামগ্রী পর্যাপ্ত থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে তা পৌঁছায় না বলে অভিযোগ অনেকের। জেলার দক্ষিণাঞ্চলের ছয় উপজেলা- চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, লালমাই, সদর দক্ষিণে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি। এসব এলাকায় খাবারের জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। এর মধ্যে মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। অপরিবর্তিত রয়েছে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি।

রাঙামাটি : জেলার কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে নিচু এলাকা ও হ্রদ তীরবর্তী বাড়িঘর ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলার বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজন এখনো বাড়ি ফিরে যেতে পারেননি। আর বরকল, নানিয়ারচর, কাউখালী ও বিলাইছড়ি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট তিনদিন ধরে কয়েক দফা খুলে দিয়ে পানি ছাড়া হয়। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় পানি ছাড়ার পরও হ্রদের পানির স্তর প্রায় অপরিবর্তিত থাকছে।

মৌলভীবাজার : জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেমেছে নদ-নদীর পানি। তবে হাওর পরিবেষ্টিত নিম্নাঞ্চলের পানি কমছে একটু ধীর গতিতে। ফলে সেখানে পানিবন্দি আছেন এখনো অনেক মানুষ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়