শিরোনাম
◈ শেখ রুবেলের দাবি, ভারতের মাটিতে প্রবাসী সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ (ভিডিও) ◈ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন উপদেষ্টা আসিফ ◈ ৪৫ মিনিটে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াটাই শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র : মেজর হাফিজ ◈ অন্ধকারে ব্যাটাররা, তাইজুলের ৫ উইকেটে লড়াইয়ে বাংলাদেশ ◈ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় থাকবে শিক্ষার্থীরা, পাবেন সম্মানী ◈ নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহীনুর মিয়া গ্রেপ্তার ◈ বিএনপির দুই গ্রুপ একইস্থানে সমাবেশ ডাকায় পাবনায় ১৪৪ ধারা জারি ◈ বেনাপোল বন্দরে ৫ শতাংশ শুল্কায়নে আমদানিকৃত ডিম খালাস ◈ যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩ দেশের রাষ্ট্রদূতের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল ◈ রাষ্ট্রপতি যখন সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, তখনই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিশ্চিত হয়ে গেছে: ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০২৪, ০৩:১৭ দুপুর
আপডেট : ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল : এক হাসপাতালে এক বছরেই লোপাট ১৮ কোটি টাকা

হাবিব সারোয়ার আজাদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে এক বছরেই লোপাট করা হয়েছে সরকারি বরাদ্দের প্রায় ১৮ কোটি টাকা। অডিট প্রতিবেদনে এই দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। হাসপাতালে এমন সাগরচুরির ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। 

সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে একটি অটোমেশন যন্ত্র কেনা হয়েছিল ২০১৮ সালে। এটি বাক্সবন্দি অবস্থায় আছে। কিন্তু এই মেশিনের জন্য রাসায়নিক দ্রব্য ক্রয় দেখিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে চার কোটি ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিল তোলা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের ১৯টি কম্পিউটারের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ ক্রয় ও মেরামত দেখিয়ে প্রায় ২৩ লাখ, অনুষ্ঠান, উৎসব, সভা-সেমিনারের ব্যয় ২৪ লাখ, আপ্যায়ন ২১ লাখ, পাপোশ কেনায় ১৪ লাখ, সিল ও স্ট্যাম্প প্যাড কেনায় ১১ লাখ টাকা বিল তোলা হয়েছে। 

এমন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীর কাছে এই স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন তারা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, এই হাসপাতালে শুধু ২০২২-২৩ অর্থবছরেই প্রায় ১৮ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এই দুর্নীতির সঙ্গে হাসপাতালের স্টোরকিপার সুলেমান আহমদ, হিসাবরক্ষক মো. ছমিরুল ইসলাম ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মো. আনিসুর রহমান জড়িত। 

স্মারকলিপিতে অডিট প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আরও বলা হয়েছে, ওষুধ, যন্ত্রপাতি, কেমিকেল ও লিলেন সামগ্রী ক্রয়ে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়া হয়নি। এতে চারটি কেনাকাটায় সরকারের দুই কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৬৯ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ২২ লাখ টাকার সার্জিকেল সামগ্রী কেনা হয়েছে।

এছাড়া আউটসোর্সিং জনবল থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া অনিয়মিত শ্রমিকদের মজুরি দেখিয়ে ৮১ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অধিকহারে ইউসিএল বহির্ভূত ওষুধ ক্রয় দেখিয়ে সরকারের এক কোটি ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ না করা সত্ত্বেও ঠিকাদারকে ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৭৫০ টাকা বিল প্রদান, মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন ও ব্যয় মঞ্জুরি ব্যতীত ৯৭ লাখ ৭১ হাজার ১২৭ টাকা বকেয়া বিল প্রদান, চাহিদা ছাড়া প্রায় ৪৩ লাখ টাকার প্রয়োজনের অতিরিক্ত লিলেন সামগ্রী ক্রয় করে বাক্সবন্দি রাখা হয়েছে।

প্রধান স্টোর থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিতরণকৃত লিলেন সামগ্রী গ্রহণের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন না করতে পারায় সরকারের ক্ষতি ৪৬ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭৫ টাকা। বাস্তবে বর্জ্য সংরক্ষণাগার ও অফিস সরঞ্জাম মেরামত না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের কেবিনে ভর্তিকৃত রোগীর কেবিন ভাড়া থেকে প্রাপ্ত প্রায় ২১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি।

সর্বনিু দরদাতাকে কাজ না দিয়ে কর্মকর্তারা যোগসাজশে ঢাকার ফরচুন করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে উচ্চদরে কাজ দিয়েছেন। এতে চারটি কেনাকাটায় সরকারের দুই কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৬৯ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অফিশিয়াল প্রয়োজনে এ সময়ে তিন হাজার ৭২০টি সিল ও স্ট্যাম্প ক্রয় করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সুনামগঞ্জ শহরের শফিক আর্ট, শ্যামল ফটোস্ট্যাট ও পিনাক আর্টের নামে বিল ভাউচার করা হলেও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে তারা এসব সরবরাহ করেনি।

মেসার্স সামিহা এন্টারপ্রাইজ নামে সুনামগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৬৭ লাখ টাকার বিল দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মনোহরী, অফিস সরঞ্জাম ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় বাবদ ২২ লাখ ৯১ হাজার, অফিস আসবাব ও সরঞ্জাম সরবরাহ না করলেও ১৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা, অনাবাসিক ভবনের বর্জ্য সংরক্ষণাগার ও অফিস সরঞ্জাম মেরামত না করলেও ১৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, আসবাবপত্র মেরামত না করলেও ১৫ লাখ টাকার বিল প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে স্টোরকিপার সুলেমান আহমদ ও মো. ছমিরুল ইসলাম কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। সুলেমান মিয়া বলেন, অডিট আপত্তি সব অফিসেই আছে। নথিপত্র যাচাই করে এসবের জবাব দেব আমরা। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। 

এ বিষয়ে মো. আনিসুর রহমানও বলেছেন তিনি কোনো অনিয়ম করেননি। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি আপত্তির জবাব দেব। শনিবার হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, আমি চলতি বছরের ১৩ মার্চ দায়িত্ব নিয়েছি। কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করব না বলে হাসপাতালে দায়িত্বরত সবাইকে জানানোর পর উলটো আমাকেও নানাভাবে হয়রানি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে দুদকের তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদন পাঠাব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়