শিরোনাম
◈ সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির শঙ্কা, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যা জানাগেল ◈ নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেফতার ◈ আ’লীগ নেতাদের কুমিল্লা সীমান্তে বৈঠকের গুঞ্জন ◈ নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার : সংখ্যানুপাতিক ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক ◈ নিজ বাসা থেকে কণ্ঠশিল্পী মনি কিশোরের মরদেহ উদ্ধার, পুলিশের ধারণা ৪-৫ দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে ◈ লালন মেলায় চুরি হওয়া ১৬ মোবাইলসহ যুবক আটক ◈ বেতন গ্রেড না বাড়ালে টিকা নয়, আল্টিমেটাম স্বাস্থ্যকর্মীদের ! ◈ টাঙ্গাইলে পিঁপড়ার ডিমের কেজি ১৫০০ টাকা ◈ ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস, রাবি ছাত্রদলের ২ নেতাকে অব্যাহতি ◈ পোশাকশিল্পে স্বস্তি ফিরছে, নতুন অর্ডার আসছে

প্রকাশিত : ১৮ জুলাই, ২০২৪, ০৯:২৫ রাত
আপডেট : ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৫ ঘণ্টার সংঘর্ষে কুমিল্লার কোটবাড়ি রণক্ষেত্র, আহত শতাধিক

শাহজাদা এমরান, কুমিল্লা: [২] সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে কুমিল্লায় পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিলেন পুলিশের সঙ্গে কোটা বিরোধী আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর পৌনে ১টার দিকে মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি এলাকায় শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ থেমে থেমে চলে সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত।  দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার এই সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকা। 

[৪] এ ঘটনায় আহতদের সংখ্যা শতাধিক। শিক্ষার্থী ছাড়াও আহতদের মধ্যে পুলিশ ও বিজিবি সদস্য এবং কয়েকজন সাংবাদিক রয়েছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ৩৫ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। সেখানে ১৩ জন ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গেছে। 

[৫] এদিন দুপুরে পূর্বঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অনবরত রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবি ও র‌্যাবের সদস্যরা। 

[৬] নাম প্রকাশ না শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ৫ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে অন্তত ৬০০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনার সময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশ ও বিজিবির দু'টি গাড়ি। সংঘর্ষের কারণে মহাসড়কের ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী লেনে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় চালক ও যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।  

[৭] সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের কোটবাড়ি বিশ্বরোডের দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়কে শিক্ষার্থীরা মিছিল করছে। মিছিলে সহপাঠীদের হত্যার বিচার দাবি করছেন তারা। পুলিশ এসে টিয়ারসেল ও গুলি ছুঁড়লে তারা পাশের গ্রামে ঢুকে পড়ে। পুলিশ সরে গেলে আবার মহাসড়কে উঠে বিক্ষোভ করে। এভাবেই চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।    

[৮] সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিক্ষোভে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ, জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় 'বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আমি কে, তুমি কে, রাজাকার রাজাকার' ‘দিয়েছিতো রক্ত, আরো দেবো রক্ত,' ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দিবো না,' আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই,' ‘মেধা না কোটা, মেধা মেধা,' ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

[৯] নাম প্রকাশ করার শর্তে কুমিল্লা পুলিশের এক কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের মহাসড়ক থেকে ছত্রভঙ্গ করতে অন্তত ৬০০ রাউন্ড গুলি করা হয়েছে। পরে গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় কুমিল্লা কোতোয়ালি থানা থেকে মজুত করা গুলি আনতে হয়। বেশিরভাগই চালানো হয়েছে ফাঁকা গুলি। পুলিশ চেয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যেন মহাসড়ক থেকে সরে যায়। 

[১০] কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, আমরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছি। পুলিশ নির্বিচারে আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। আজকে পুলিশের নির্মম আচরণ দেখেছি আমরা। পুলিশের হামলায় আমাদের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে কয়েকজন। পুলিশের এতো বাধার পরও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে। আমরা পৌনে ৬টার দিকে আজকের মতো কর্মসূচি শেষ করে ক্যাম্পাসে ফিরেছি  যত বাধাই আসুক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

[১১] কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর ভূঁইয়া বলেন, কোটবাড়ি এলাকায় অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে। শিক্ষার্থীদের ইটের আঘাতে আমাদের বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনার বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

[১২] বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ছাত্র, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যসহ ৫৩ জন আহত রোগী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। আহতদের মধ্যে বিজিবি দুজন সদস্য হলেন শাহীন ও নাহিদ। পুলিশের তিনজন সদস্য হলেন- কনস্টেবল সাইফুল, এসআই মনির, এএসআই আফজাল হোসেন। এদের মধ্যে সাইফুলের অবস্থা গুরুতর। বাকি সকলেই শিক্ষার্থী। 

[১৩] ময়নামতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদার জানান, মহাসড়কে পুলিশ সদস্যরা টহলরত রয়েছে। যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ায় এখন যান চলাচল স্বাভাবিক। এদিকে, কোটা আন্দোলনে আহত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সব শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) কুবির রেজিস্ট্রার অফিস থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

[১৪] এতে বলা হয়, উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব শিক্ষার্থী আহত হয়েছে, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ভার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহন করবে। অপরদিকে, কুমিল্লা কোটবাড়ি এলাকা ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার চান্দিনা, দাউদকান্দিসহ বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের জেলার দেবিদ্বার ও মুরাদনগর এবং ব্রাহ্মনপাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। সম্পাদনা: এ আর শাকিল

প্রতিনিধি/এআরএস

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়