ফয়সাল চৌধুরী, কুষ্টিয়া: [২] কুষ্টিয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পিছু হটে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাত থেকে আট টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় চোরহাস মোড়। আজ বুধবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিট থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত শহরের চৌরহাস মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুরো সহর জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
[৩] এর আগে দুপুর তিনটার দিকে শহরের মজমপুর গেট থেকে একটি মিছিল নিয়ে চৌড়হাস মোড়ে অবস্থান নেন কোটা আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এই সময় তারা একটি বাসে গ্লাস ভাঙচুর করে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে মজুমপুর গেটে পৌঁছালে পুলিশে অনুরোধে কোটা আন্দোলনকারীরা চৌড়হাস মোড়ে অবস্থান নেই।
[৪] প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে দিকে আন্দোলনকারীরা কোটাকোটা সংস্কারের দাবিতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের মজমপুর গেটে অবস্থান করে। সে সময় তারা একটি বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে। তারা সেখানে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে অবস্থান নেন। মজমপুর গেটে প্রায় এক ঘন্টা অবস্থান করে। ছাত্রলীগের একটি মিছিল মজমপুর গেটে পৌঁছালে পুলিশে অনুরোধে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মজমপুর গেট থেকে চোড়হাস মোড়ে অবস্থান করে। সেখানে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। এই ঘটনার পরে অন্যদিকে লাঠিসোঠা নিয়ে পৌরসভার ভেতরে সংগঠিত হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে তারা এনএস রোড প্রদক্ষিণ করেন। বিকেল ৫টার দিকে তারা ৩০ থেকে ৪০ টা মোটরসাইকেল ও হাতে লাঠি নিয়ে চৌড়হাস মোড়ের দিকে যাত্রা করেন। এ সময় পুলিশের তিনটি ব্যারিকেট উপেক্ষা করে কোটা আন্দোলনের সমাবেশে হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সাউন্ড বোমা সাদৃশ্য বস্তু নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। পরে কোটা আন্দোলনের ধাওয়ার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় ছাত্রলীগ। এই সময় বেশ কিছু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আহত হন।
[৫] এ সময় তাদের রেখে যাওয়া ৭টি মোটরসাইকেল ও স্থানীয় লোকজনের একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যার আগমুহূর্তে আরেকবার হামলার চেষ্টা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেই যাত্রায় তাদের রুখে দেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।
[৬] এরপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দিতে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চৌড়হাস মোড় থেকে মজমপুর গেটে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মজমপুর গেটের রেল লাইনের উপর একটি ট্রেন পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা ট্রেনটি আটিকে রাখে। এ সময় পাথর নিক্ষেপ করে ট্রেনটির কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে । এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন ট্রেনের যাত্রী আহত হন। এই সময় কুষ্টিয়া- ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া- ইশ্বরদী মহাসড়ক প্রায় আড়াই ঘন্টা অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। এতে দুই মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে রাত সোয়া আটটার দিকে পুলিশ ধাওয়া দিলে ঘটনাস্থল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ।
[৭] চৌড়হাস মরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফারুক হোসেন বলেন, আমরা অটোরিকশায় চৌড়হাসের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমাদের ওভারটেক করে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরই দেখি তারা পিছু হটছে। এরপর ঘটনাস্থলে এসে দেখলাম সড়কে পড়ে থাকা মোটরসাইকেলে আগুন জ্বলছে।
[৮] মজমপুর গেটের একজন বলেন, মিছিলের শুরুতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মজমপুর থেকে এনএস রোডে যাওয়ার সময় ক্যামেরা বের করায় অনেক ব্যবসায়ীর দোকান লক্ষ্য করেও হামলা চালান। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
[৯] সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, আমরা এখনো মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত আছে।
এসবি২