শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৩ জুলাই, ২০২৪, ০১:০৭ রাত
আপডেট : ১৯ অক্টোবর, ২০২৪, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কক্সবাজারে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে জনসংখ্যা, শহর সম্প্রসারণ জরুরি

হাবিবুর রহমান সোহেল: ১৯৮১ সালে এ জেলার জনসংখ্যা ছিল ১০ লক্ষ ২৬ হাজার ১৭২। বিবিএসের সর্বশেষ শুমারি অনুয়ায়ী, এখন জেলার মোট জনসংখ্যা ২৮ লাখ ২৩ হাজার ২৬৮। গত ২৬ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জনশুমারি ২০২২ এর চুড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল তিন দশকে শহরাঞ্চলে নগরায়ন বৃদ্ধি পেলেও কক্সবাজারের আয়তন বাড়েনি। বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কক্সবাজারের উপকূলীয় উপজেলাগুলো থেকে অনেকে অভ্যন্তরীণ অভিবাসী হচ্ছেন। তাদের মধ্যে কর্মক্ষেত্র ও উন্নত জীবনের আশায় শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া শিল্পায়নের প্রভাবে ভূমি হারিয়ে অনেকে শহরাঞ্চলে ভিড় করার কারণে নানা সংকট তৈরী হচ্ছে । 

প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৮১ সালে শহরাঞ্চল  অর্থাৎ চকরিয়া, কক্সবাজার, মহেশখালী ও টেকনাফ চার পৌরসভায় বসবাসের হার ছিল ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। বর্তমানে এই হার ঠেকেছে ৪৩ দশমিক ৬২ শতাংশে। অথচ, দেশে সার্বিক শহরাঞ্চলে বসবাসের হার ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালের সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী কক্সবাজারে মোট জনসংখ্যা ২৮ লাখ ২৩ হাজার ২৬৮ জন। মোট জনসংখ্যার মধ্যে ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৬২২ জন পুরুষ এবং ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩ জন নারী। প্রতিবেদন মতে, মোট জনসংখ্যার ১৫ লক্ষ ৯১ হাজার ৬২৯ জন গ্রামাঞ্চলে ১২ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৩৯ জন শহরাঞ্চলে বাস করেন। ২০১১ সালের শুমারিতে জনসংখ্যা ছিল ২২ লক্ষ ৮৯ হাজার ৯৯০ জন। ২০০১ সালে ছিল ১৭ লক্ষ ৭৩ হাজার ৭০৯ জন। ১৯৯১ সালে ছিল ১৪ লক্ষ ১৯ হাজার ২৬০ জন এবং ১৯৮১ সালে ছিল ১০ লক্ষ ২৬ হাজার ১৭২ জন। স্বাধীনতার পর চারটি শুমারির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে,  গত ৪২ বছরে এ জেলায় ১৮ লক্ষ ৯৬ জন যোগ হয়েছেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে গণনায় নতুন যুক্ত হওয়াদের মধ্যে ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৪৪ জন পুরুষ এবং  ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ৬৫১ জন নারী। বর্তমানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ১ হাজার ১৩৩ জন। ২০১১ সালের শুমারিতে ছিল ৯২০ জন। অর্থাৎ গত ১০ বছরে প্রতি কিলোমিটারে ঘনত্ব বেড়েছে ২১৪ জন।পৌর শহরগুলোতে নগরায়ন বৃদ্ধি হলেও ১৯৯১ সালের পর  কক্সবাজার জেলার আয়তন বাড়েনি, বরং কমেছে। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে এ জেলার আয়তন ছিল ২৪৯১. ৮৬ বর্গকিলোমিটার। তবে ২০১১ ও ২০২২ সালে কক্সবাজারের আয়তন উল্লেখ করা হয়েছে ২৪৯১. ৮৫ বর্গকিলোমিটার। সেই হিসেবে শুন্য দশমিক ১ শতাংশ  জেলার আয়তন কমেছে।

প্রতিবেদন বলছে, কক্সবাজার জেলার গড় বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। জাতীয় পর্যায়ে এ হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ। লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনে পুরুষের বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৮২ শতাংশ ও নারীর ক্ষেত্রে ১ দশমিক ৯১ শতাংশ। ২০১১ সালের শুমারিতে জন্মহার ছিল ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সেই হিসেবে জন্মহার কমেছে শুন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ। 

জেলার মোট পরিবার ৫ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭৩০টি। এর মধ্যে ১ জনের পরিবার ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৮৬টি। ২ জনের পরিবার ৪৫ হাজার ৫১৯টি। ৩ জনের পরিবার ৯৩ হাজার ৪৬৪টি। ৪ জনের পরিবার ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৩০৮টি। ৫ জনের পরিবার ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৪৩০টি। ৬ জনের পরিবার ৮২ হাজার ১২৫টি। ৭ জনের পরিবার ৪২ হাজার ৪৫৬ টি। ৮ জনের পরিবার ২০ হাজার ৬৩১টি। ৯ জনের পরিবার ১০ হাজার ৩৪৫ টি। ১০ জনের পরিবার ৫ হাজার ৮৮৬টি। ১০ জনের অধিক পরিবার ৮ হাজার ৩৮০টি। 
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আবাসনহ পাঁচটি মৌলিক চাহিদা ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির নানা সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির চাপ বাড়ছে। খাদ্যের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুপেয় পানি, বিদ্যুতের ওপর চাপ বাড়ছে। অবকাঠামো উন্নয়নে চাপ আছে সেবা সংস্থাগুলোর ওপর। বিশিষ্টজনেরা মনে করেন চাপ মোকাবেলায় দরকার সবন্বিত প্রচেষ্ট।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘কক্সবাজার প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ জেলা। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উদ্ধাস্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুতুবদিয়াপাড়া, আশ্রয়ণ প্রকল্প সবকিছু পৌরসভার মধ্যে ঢুকে গেছে। মানুষ শহরমুখী হওয়া এক প্রকার চ্যালেঞ্জের।’ 

তার মতে, জনসংখ্যার আধিক্য কমানো যাবে না। বাসস্থান, অবকাঠামোগত নিশ্চিতে সুষ্ঠু কমপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য তিনি কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেছেন। 
যার মধ্যে রয়েছে- উদ্ধাস্তদের বাসস্থান নিশ্চিতকরণ;  আগামীতে কি পরিমাণ অভ্যন্তরীণ অভিবাসী শহরমুখী হচ্ছে তার ওপর নজর দেয়া; শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমানো; শহরকে সম্প্রসারণ করা এবং সরকারি সেবা উপজেলায় বণ্টন করা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা’র) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, ‘একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহরের প্রধান সমস্যা হচ্ছে জনসংখ্যা। পরিবেশ প্রকৃতি ধরে রাখতে হলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’তিনি বলেন, ‘বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে গিয়ে কক্সবাজারের কৃষি জমি, বনভূমি শেষ হয়ে যাচ্ছে। গত ১০ বছরে শহরে প্রায় ২ হাজার পাহাড় কাটা হয়েছে। নষ্ট হয়েছে সবুজায়ন। এটি সামনে আরো ভয়াবহ হবে।’ সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়