জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর: [২] আলোচিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের ১৭ জন হোতার মধ্যে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার হন লক্ষ্মীপুরের সাবেক সেনা সদস্য মো. নোমান সিদ্দিকী। ওই মামলায় তিনি ২নং আসামী। বিয়ের পর থেকে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।
[৩] তিনি যা কিছু করেছেন সবই স্ত্রীর কথায় করেছেন। স্ত্রীর কথা ছাড়া কোন কাজই করেন না বলে দাবী করেন স্বজনরা। পরিবারের দাবি, সেনাবাহিনীতে চাকুরি অবস্থায় তেমন কোন অর্থ বা সম্পত্তি ছিল না। অবসরে গিয়ে অপকর্মে জড়িয়ে সম্পদ গড়েছেন নোমান।
[৪] নোমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড চর মেহের গ্রামে। এই গ্রামের মৃত আবু তাহের মিয়ার ছোট ছেলে নোমান ছিদ্দিকী।
[৫] নোমানের বড় ভাই ইউনিয়নের রামদয়াল বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী মোঃ ফারুক ও ভগ্নিপতি মেছবাহ উদ্দিন জানান, নোমান সিদ্দিকী উপজেলার চর মেহের আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৯৮ সালে সেনা বাহিনীতে সাধারন সৈনিক (জিডি) হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ১৯ বছর সেনাবাহিনীতে চাকুরী করে অবসর গ্রহণ করেন।
[৬] চাকুরী জীবনে জাতীয় সংঘের অধিনে লাইব্রেরিয়াতে শান্তি মিশনে দায়িত্বপালন করেন। ২০০৭ সালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা শহরের বিদ্যুৎ কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিনের মেয়ে সাফিয়া সুলতানা স্বর্নাকে বিয়ে করেন। স্ত্রী সাফিয়া সুলতানা স্বর্না ঢাকার মিরপুরে শিক্ষা অধিদপ্তরে চাকুরী করতেন। বর্তমানে তিনি একজন গৃহিনী। বিয়ের পর থেকে পরিবারের কারো সাথে তার তেমন কোন সম্পর্ক নেই। তার বাবা আবু তাহের মিয়া জীবিত থাকা অবস্থায় মাঝে-মধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসলেও বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে বাড়িতে আসেন না। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন। তার নামে যত সম্পত্তি রয়েছে তার চেয়ে বেশি সম্পত্তি স্ত্রীর নামে পাবনার ঈশ্বরদীতে থাকতে পারে বলে দাবি করেন তারা। তিনি যা কিছু করেছেন সবই স্ত্রীর কথায় করেছেন। স্ত্রীর কথা ছাড়া কোন কাজই করেন না বলে দাবী করেন তারা।
[৭] জানা যায়, নোমান সিদ্দিকীর স্ত্রী সাফিয়া সুলতানা স্বর্না। তিনি সাবেক ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর আত্মীয় হন।
[৮] সরেজমিনে নোমান সিদ্দিকীর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে সাইট ওয়ালের একটি টিনের ঘর ও ভাঙা একটি টিনসেট ঘর রয়েছে। সাইট ওয়াল টিনের ঘরটি তার বাবা নির্মাণ করেছে। তারা তিন ভাই এই ঘরের বসবাস করেন। বাড়ির পশ্চিমে মেঘনা নদী। বাড়ির পরিবেশ জীর্ণশীর্ণ। গ্রামের তার কোন সম্পত্তির হদিস পাওয়া যায়নি।
[৯] স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী জানান, নোমান সিদ্দিকী তার প্রতিবেশী। দেশে তার একটি মাছ চাষের পুকুর ছাড়া আর কোন সম্পত্তি আছে বলে তার জানা নেই। নোমানের এত সম্পদ ও জাল জালিয়াতির কথা তিনি এর আগে কখনো শুনেননি। ভাই বোন ও ভগ্নিপতিদের কারো সাথেই তার সম্পর্ক ভালো ছিলনা।
[১০] গ্রামের স্কুল শিক্ষক সাহাব উদ্দিন ও প্রবীণ সমাজ সেবক আফতাব উদ্দিন জানান, ঈদে নোমান ছিদ্দিকী বাড়িতে আসলে ২-৩দিন থেকে চলে যেতেন। কারো সাথে তেমন মিশতেন না। তবে স্বাভাবিক চলেফেরা করতেন। গ্রামে তেমন কিছু করেনি। তার বাবা মৃত আবু তাহের ছিলেন সাধারণ মানুষ। তিনি কৃষি কাজ করতেন। তারা তিন ভাই। বড় ভাই মো. ওমর ফারুক রামদয়াল বাজারে ফার্মেসি ব্যবসা করেন, মেঝো ভাই মো.সালা উদ্দিন সেনাবাহিনীতে ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছে। নোমান সিদ্দিকী ভাইদের মধ্যে ছোট।
[১১] তার ভাই ওমর ফারুক জানান, পারিবারিকভাবে নোমানের সাথে পরিবারের কারও যোগাযোগ নেই। বিয়ের পর থেকে সে ঢাকায় থাকেন। তার তিন সন্তান রয়েছে। তার বাবা মারা যাওয়ার আগ থেকে পারিবারিক সম্পর্ক বিছিন্ন রয়েছে। কখনো বাড়িতে আসলে সে একা থাকতেন। পরিবারের কারো সাথে কথা বা যোগাযোগ করেন না। গ্রামের তার তেমন কোন সম্পত্তি নেই। যা কিছু রয়েছে বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি। এছাড়া তার ব্যাপারে তোমন কিছুই জানানেই তাদের। তবে টিভির ও পত্রিকার খবরে সে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকায় তাকে গ্রেপ্তার হয়েছে।
[১২] উল্লেখ্য, পিএসসি প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে সারাদেশে পুলিশের অভিযানে ১৭জন মুল হোতা গ্রেপ্তার হন। তাদের মধ্যে গাড়ির ড্রাইভার আবেদ আলীর কাছ থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে বেচা-বিক্রি করতেন নোমান সিদ্দিকী। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিক থেকে অবসরে গিয়ে বনে যান ও গড়ে তোলেন অঢেল টাকা ও সম্পদের মালিক। সম্পাদনা: এ আর শাকিল
প্রতিনিধি/এআরএস
আপনার মতামত লিখুন :