শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৬ জুলাই, ২০২৪, ০৮:৩১ রাত
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খাম লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল, চন্দ্রিমা থানার ওসি প্রত্যাহার

ইফতেখার আলম, রাজশাহী: [২] খামকাণ্ডে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ শনিবার তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে আরএমপি সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। নিজ দপ্তরে বসে এক ব্যক্তির কাছ থেকে খাম নেওয়ার ভিডিও ফাঁসের পর ওসি মাহবুবের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হলো।

[৩] ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি মাহবুব আলম তার চেয়ারে বসে আছেন। টেবিলের অপর দিকে চেয়ারে বসে থাকা এক ব্যক্তি বলছেন, ‘মাহবুব ভাই, ভাই উঠব ভাই।’ জবাবে ওসি বলেন, ‘আচ্ছা।’ তখন ওই ব্যক্তি বলেন, ‘একটু কথা বলে যাই।’ ওসি তার দিকে মনোযোগ দিয়ে বলেন, ‘হুম।’ সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই, একটা ছোট ইয়ে, খাম দেন।’ ওসি তখন মুচকি হাসেন। এ সময় ওই ব্যক্তি বলেন, ‘মাহবুব ভাই, আপনি আমাকে চেনেন, জানেন, বোঝেন। আমি বিপদে পড়ছি বলেই আপনার কাছে আসছি ভাই। আমি বিপদেই পড়ি।’ তখন তৃতীয় এক কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘দাও।’

[৪] এরপর ওসি তার টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটি খাম বের করে দেন। ওসি তৃতীয় ওই ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘দিলাম ভাই, বুইঝেন। তাকে অবশ্য আগেরটাও আমি হেল্প করছি।’ ওই ব্যক্তি তখন বলেন, ‘আমি জানি, আমি মাহবুব ভাইয়ের কাছে আসলে ভাই কাজ হবে।’ এ সময় ওসি বলেন, ‘না, যথেষ্ট হেল্প করছি।’ কথা বলতে বলতে সামনে থাকা ওই ব্যক্তি ভরা খাম টেবিলে এগিয়ে দিলে ওসি সেটি নিয়ে আবার ড্রয়ারে রেখে দেন।

[৫] ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম। বিশ্বাস করেন! আমি আরেক দিন এসে ডিটেইলস বলব। তখন বুঝবেন ও আমাকে কী পর্যায়ে পেরেশানিতে নিয়ে আসছে। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না, যদি অফিশিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম আমি। সে জিএম স্যারের কাছে ৪০ জন লোক নিয়ে গেছে রিমুভ ফরম সার্ভিস করার জন্য আমার বোনের। আমি কী বোঝাব বলেন!’

[৬] তখন ওসি বলেন, ‘দুজনেরই পানিশমেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই, আমার বোনের যদি পানিশমেন্ট হয় হোক, কিন্তু এই অপরাধ; অন্যায় যে করে, আর যে সহে—দুজনে সমান অপরাধী।’ ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের এই ভিডিও এখানেই শেষ হয়।

[৭] ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর কথা হয় খাম প্রদানকারী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। রাজশাহী নগরীর এই বাসিন্দা বলেন, ‘আমার বোন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে চাকুরি করেন। সম্প্রতি তিনি কর্মকর্তার দ্বারা শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন।’ এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ওসির সঙ্গে দেখা করেন এবং কিছু নথিপত্র একটি খামে করে দেন।

[৮] ওই ঘটনা গত মাসের। এটি নিয়ে থানায় একটি মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেখানে বেশ কয়েকজন লোক উপস্থিত ছিলেন। বেশি লোক থাকার কারণে গোপন নথিপত্র একটি খামে দেওয়া হয়েছিল। সেটি কেউ ভিডিও করে ভাইরাল করেছে। ওই খামে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। আমরা তো ভিকটিম। আমরা কেন পুলিশকে টাকা দিতে যাব।’

[৯] প্রত্যাহার হওয়া ওসি মাহবুব আলম বলেন, ‘এটা গত মাসের ২০ তারিখের ঘটনা, এক নারীর শ্লিলতাহানী বিষয়ে কিছু নথিপত্র একজন খামে করে আমাকে দিয়ে গিয়েছিল। সেখানে মিডিয়াকর্মীসহ বেশ কয়েকজন উপস্তিত ছিলেন। সেটি কেউ ভিডিও করে রেখেছিল। তার এবং পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সেই ভিডিও ছড়ানো হয়েছে।’

[১০] রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘চন্দ্রিমা থানার ওসির একটি খাম লেনদেনের ভিডিও কর্মকর্তাদের নজরে এসেছে। তবে খামে কী আছে সেটি নিশ্চিত নয়। ওসি মাহবুবকে ক্লোজড করে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’ সম্পাদনা: এ আর শাকিল

প্রতিনিধি/এআরএস

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়