ইমন মাহমুদ, ভৈরব: [২] কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ইউরোপের দেশ ইটালীতে পাঠানোর কথা বলে একাধিক পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে মানব পাচারকারী সদস্য রাসেল মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দালাল রাসেলকে আটক করেছে পুলিশ। রাসেল মিয়া পৌর শহরের তাতাঁরকান্দি এলাকার কুদ্দুছ মিয়ার ছেলে।
[৩] বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) রাতে এলাকার জনতা তাকে আটক করে পুলিশে সোপার্দ করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম।
[৪] ভোক্তভোগীরা জানায়, রাসেল তার আত্মীয় লিবিয়া বসবাসরত ইয়াকুবের মাধ্যমে যোগসাজেসে ভৈরবসহ বিভিন্ন এলাকার ২০/২৫ জন লোকের কাছ থেকে প্রথমে দুবাই পরে লিবিয়া নিয়ে সমুদ্রপথে সাগর পাড়ি দিয়ে ইটালী ডাঙ্কি দিবে বলে প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে লিবিয়া নিয়ে মাফিয়াদের সাথে কন্ট্রাক করে তাদের হেফাজতে নিয়ে বলে আরোটা টাকা লাগবে। প্রথমে ১০ লক্ষ পরে ডাঙ্কি দিতে ৫/৬/৭ লক্ষ টাকা নিয়েছে। মাফিয়াদের কথা বলে তাদের কাছে আটকিয়ে রেখে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা দাবী করে নিয়ে গেছে।
[৫] এ দিকে ভোক্তভোগীদের অভিযোগ তাদের লোকজন লিবিয়ায় অপহরণকারীদের হাতে বন্দি হয়ে আছে, আবার কেউ কেউ লিবিয়ায় জেলে আছে। অপহরণকারীরা তাদেরকে অমানসিক নির্যাতন অত্যাচার করছে মুক্তিপণের টাকা দিতে। টাকা না দিলে তাদেরকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ। ভোক্তভোগীদের মধ্যে অনেকেই তাদের সন্তানদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ঘটনার জন্য আটককৃত রাসেল মিয়া দায়ী বলে তারা অভিযোগ করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রস্ততি চলছে বলে পুলিশ জানায়।
[৬] জানা গেছে, লিবিয়া থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে ইতালী পাঠাতে যারা রাসেল মিয়াকে টাকা দিয়েছে তারা হলো ভৈরব পৌর শহরের হানিফ মিয়ার ছেলে রাসেল, একই এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া, হবিগন্জের মাধবপুর এলাকার সবুজ, কিশোরগন্জের তোফায়েল, নরসিংদির শিবপুর এলাকার এবাদুল্লাহ'র ছেলে শাকিবুল হাসান, ভৈরব পৌর শহরের জগনাথপুর এলাকার রইছ উদ্দিনের ছেলে হাছেন আলী, শহরের আমলাপাড়া এলাকার নূর ইলামের ছেলে সুমন, জগন্নাথপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার রাব্বি, তাতারকান্দি এলাকার রন্টি, রোকেল, রবিন, ইসলাম, হামিন, বাসস্টান্ড এলাকার টাইরই, ঢাকা শহরের কাঞ্চন, নিউটাউন এলাকার আরিফ আমলা পাড়া এলাকার সুমন।
[৭] উল্লেখিতরা ছাড়াও আরও ৫/৭ জন রয়েছে যারা তাকে টাকা দিয়েছে। তারা সবাই মিলে প্রায় দুইকোটি টাকা রাসেলকে দেয়ার পরও গত ৬ মাসের মধ্যে এখনও কাউকে ইতালী পাঠাতে পারেনি রাসেল। এদের মধ্য কয়েকজন লিবিয়া কারাগারে জেল খাটছে, আবার কেউ কেউ অপহরণকারীদের হাতে বন্দি আছে বলে পরিবারগুলির অভিযোগ। টাকা দেয়ার পর দীর্ঘদিন যাবত ভোক্তভোগীরা মানব পাচারকারী রাসেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলনা। বৃহস্পতিবার রাতে সে বাড়ী এলে জনতাসহ ভোক্তভোগীরা তাকে আটক করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে রাতেই থানায় নিয়ে আসে।
[৮] ভোক্তভোগী ইউনুছ মিয়া বলেন, আমার ছেলে ফারুককে ইতালী পাঠাতে রাসেলকে ২৪ লাখ টাকা দিয়েছি চারমাস আগে, এখন ছেলের খোঁজ নেই। শুনেছি অপহরণকারীদের হাতে লিবিয়ায় বন্দি। শাকিবুল হাসানের বাবা এবাদউল্লাহ বলেন, ইটালী পৌঁছানো পর্যন্ত আমার ছেলের বডি কন্ট্রাকের নামে ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেয় রাসেল। কিন্তু মাফিয়ার কথা বলে আরো ১০ লক্ষ টাকা দাবী করছে। আমি এমনিতেই নিঃস্ব। এত টাকা পাবো কই? আমার ছেলেকে কিভাবে ছাড়িয়ে আনবো কিছুই বুঝতেছি না। তাই থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
[৯] রাসেলে বাবা অভিযোগ করেছেন আমার ছেলেকে ইতালী পাঠাতে ৭ লাখ টাকা দিয়েছি কিন্ত সে এখন লিবিয়ার জেলে বন্দি। এমনিভাবে সজীব ও তোফায়েল ২২ লাখ টাকা, শাকিবুল ২৩ লাখ টাকা, হাছেন আলীসহ তিনজনে ৪০ লাখ টাকা, সুমন ১৪ লাখ টাকা, রোকেল ৮ লক্ষ টাকা, আজিজুল ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ইমন ১০ লক্ষ টাকা ও কাঞ্চন ১২ লক্ষ টাকা রাসেলকে দিলেও সে তাদেরকে লিবিয়া পাঠিয়ে বিপদে ফেলেছে বলে তাদের অভিযোগ।
[১০] অপহরণকারীরা অপহৃতদেরকে নির্যাতন করে নির্যাতনের ভিডিও পাঠাচ্ছে এদেশে পরিবারের কাছে। তারা নতুন করে কারো কারো প্রত্যেকের কাছে ১০/১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে। এত পরিমান টাকা কোন পরিবারের দেয়ার সাধ্য নেই বলে জানান ভোক্তভোগীরা। এমনিতেই ঘরবাড়ী, জমিজমা, স্বর্নালঙ্কার বা মূল্যবান জিনিষপত্র বিক্রি করে রাসেলকে টাকা দিয়েছে সন্তানকে ইতালী পাঠানো আশায়। প্রত্যাশা ছিল তাদের সন্তানরা স্বপ্নের দেশ ইতালী গিয়ে রোজগার করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে কিন্ত সেই আশা ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে মানবপাচারকারী রাসেল চক্র।
[১১] ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, মানবপাচারকারী রাসেলকে বৃহস্পতিবার রাতে জনতা আটক করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ তার নিরাপত্তার জন্য উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এখন ভোক্তভোগীরা মামলার প্রস্ততি নিচ্ছে। তারা মামলা করার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল অনেকের কাছ থেকে বিদেশের কথা বলে টাকা নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। সম্পাদনা: এ আর শাকিল
প্রতিনিধি/এআরএস
আপনার মতামত লিখুন :