শিরোনাম
◈ গণমামলা আর গণআসামির নেপথ্যে চাঁদাবাজি? ◈ সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার জেরে তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি - যা জানা যাচ্ছে ◈ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বজ্রসহ শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস ◈ গ্যাস সঙ্কটে ১৬২০ কোটি টাকার এলএনজি আমদানি করছে সরকার ◈ সাংবাদিকতার দায়িত্ব ও নৈতিকতা-বিষয়ক আইন হওয়া প্রয়োজন : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা ◈ প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে: এনবিআর  ◈ জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত সরকারের, আমরা প্রতিহত করবো: নুরুল হক (ভিডিও) ◈ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরুরি নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের শ্রেণিমুখী করতে ◈ সেনাবাহিনীকে হামলার বদলা নিতে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন মোদি

প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:৩২ বিকাল
আপডেট : ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাকার রিকশায় আসছে লিথিয়াম ব্যাটারি

ডেস্ক রিপোর্ট : ব্যবহৃত লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও যানবাহন রূপান্তরে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। জাস্ট ট্রানজিশনের উপর গুরুত্বারোপ করে ব্যবহৃত লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির পরিবর্তে ব্যাটারিচালিত রিকশায় বাধ্যতামূলকভাবে লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব চার্জিং স্টেশনে ১০ লক্ষ নতুন চাকুরির সুযোগ ঘটবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। সোমবার গুলশানের নগর ভবনে ‘ দুষণমুক্ত ন্যায্য নগর গঠনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা’ শীর্ষক এক নীতিনির্ধারণী সংলাপে এ ঘোষণা দেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), ইয়ুথনেট গ্লোবাল এবং আরও ৩৫টি নাগরিক সংগঠন যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োহন করে।

তিনি বলেন, “ব্যবহৃত লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির নিরাপদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আমরা সমন্বিত উদ্যোগ নেব। পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য নতুন বৈজ্ঞানিক নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যেখানে লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে।” তিনি আরও জানান, বর্তমানে ঢাকার সড়কে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর কাঠামো, নিরাপত্তা এবং অনুমোদন কোনো কিছুই মানসম্মত নয়। অধিক বিদ্যুৎ খরচ হওয়া এবং ব্যবহৃত ব্যাটারির কারণে এগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। “আমরা দ্রুত রূপান্তর নিশ্চিত করবো, যাতে শহরের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা পায়,” বলেন তিনি।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, উচ্চমানের লিথিয়াম ব্যাটারি না হলে এগুলোর বিস্ফোরণ, আগুন ধরে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া, লিথিয়ামের পুনঃপ্রক্রিয়াজনিত প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও কোনো স্পষ্ট গাইডলাইন না থাকায়, এটি লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির মতো পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, নিরাপদ এবং টেকসই ব্যাটারি প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং এর পুনঃপ্রক্রিয়াজনিত প্রক্রিয়া নিয়ে আরও গবেষণা এবং পরিকল্পনা করা জরুরি। তবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, যদি সঠিকভাবে রূপান্তরিত করা যায়, তবে এই খাতটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাবে।

সংলাপে পরিবেশ ও জলবায়ু আন্দোলনের কর্মী, পরিকল্পনাবিদ ও গবেষকরা অংশ নেন। বিশেষজ্ঞরা মত দেন, নতুন বৈজ্ঞানিক নকশার রিকশায় সোলার প্যানেল যুক্ত করা গেলে শহরের বিদ্যুৎ চাহিদা কমবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে। তবে এর পাশাপাশি সচেতন ও প্রশিক্ষিত চালক তৈরি এবং সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানোর ওপরও গুরুত্ব দেন তারা।

গবেষণা তথ্য তুলে ধরে সংলাপে জানানো হয়, দেশে ব্যবহৃত প্রায় ৮৬ শতাংশ লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি অনানুষ্ঠানিকভাবে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত হয়, যা সীসা দূষণের বড় উৎস। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই অনানুষ্ঠানিক পুনঃপ্রক্রিয়াজনাতকরণ বন্ধ না হলে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য শহরের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে ন্যায্য নগর গড়তে কাজ করছে ডিএনসিসি। তিনি জানান, “ঢাকার অধিকাংশ আবাসিক ভবনের উচ্চতা প্রায় সমান। তাই ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। যদি সঠিক পরিকল্পনা হয়, তাহলে ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসিয়ে নিজেদের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো এবং বাড়তি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব।”

শহরের আবাসিক ভবনগুলোর ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনে উৎসাহ দিতে হোল্ডিং ট্যাক্সে কর রেয়াত দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। এ জন্য রুফটপ সোলার ব্যবহারকারীদের হোল্ডিং ট্যাক্সে ৫ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, “ঢাকা একটি অপরিকল্পিত নগরী। এখানে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন।”

পলিসি ডায়লগের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের পরিবেশ এখন চরম সংকটে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত কর্মক্ষমতা সূচক ২০২৪ অনুযায়ী, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৫তম। এই সংকট থেকে উত্তরণের অন্যতম পথ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার।”

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিপুল সম্ভাবনা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য সেক্টরভিত্তিক পরিকল্পনা ও ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

ইয়ুথনেট গ্লোবালের সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, “দূষণমুক্ত ও ন্যায্য নগর গড়তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকল্প নেই। ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি মাস্টার প্ল্যান ও ঢাকা ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান পর্যালোচনা করে ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে।”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়