মহসিন কবির: বাংলাদেশের হিন্দুরা অনেক ভালো আছে। ভারততে তারা বলেছে তাদের নিয়ে অপপ্রচার বন্ধ করতে। তারা বলেছে, বাংলাদেশে যত মন্দির পোড়ানো হয়েছে তার ১০০ ভাগ পুড়িয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।
ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার বলেছেন, বাংলাদেশে যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নাগরিকরা বিপদে পতিত হয় ও সর্বক্ষণ আতঙ্কিত থাকে। নানা আকারে প্রকারে নির্যাতিত-লাঞ্ছিত হয়। অন্যান্য সরকারের সময়েই হিন্দু জনগণ শান্তিতে জীবন নির্বাহ করেছে, বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও সমঅধিকার নিয়ে বসবাস করছে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) প্রেস ক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
বিজন কান্তি সরকার বলেন, বাংলাদেশে যত মন্দির পোড়ানো হয়েছে তার ১০০ ভাগ পুড়িয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এমনকি আওয়ামী এমপিদের নেতৃত্বে ও ইন্ধনে হিন্দু বাড়ি-ঘর পুড়ানো হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার প্রভাবে সংবাদমাধ্যমে জামায়াত-বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। ভারতীয় মিডিয়াও আওয়ামী অনৈতিক অপপ্রচারে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে সম্পৃক্ত হয়। আওয়ামী লীগ কখনও কোনো নির্যাতন দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি, বিচার করেনি।
তিনি বলেন, ভারত ও ভারতীয় জনগণের একাংশ আওয়ামী প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ে প্রকৃত বন্ধু বাংলাদেশের জনগণকে শত্রু বানিয়ে আসল শত্রু আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের প্রতি অন্ধ অনুসারী হয়েছে। ভারতীয় জনগণ, গণমাধ্যম ও দিল্লি সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, প্রকৃত বন্ধুকে চিনে নিন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৫ দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো— ১। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সকল প্রকার মিথ্যা প্রোপাগান্ডা প্রচার হতে ভারতের মিডিয়া এবং ধর্মান্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে বিরত রাখতে হবে। ২। কোনো ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠীর ভিত্তিতে নয়, প্রতিবেশী দেশের মানুষের সাথে সম্পর্কের ভিত্তি হবে মানবতা। ৩। বাংলাদেশ-ভারত উভয়ই স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। উভয় দেশের পারস্পরিক স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি সুরক্ষা ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। ৪। বাংলাদেশের কোনো নির্দিষ্ট দলের বা মতের প্রতি অযৌক্তিক আনুকূল্য প্রদর্শন হতে ভারত সরকারকে বিরত থাকতে হবে। ৫। বাংলাদেশের জনগণের সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে ভারতীয় সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদীদের সকল অপকৌশল বন্ধ করতে হবে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে অপপ্রচার চলছে বলে মনে করছেন, সনাতন ধর্মের নেতারা। তাদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবাদ সমাবেশগুলো ভোটের রাজনীতি। এ বিষয়ে দেশের সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তারা বলছেন, অপপ্রচারের ফাঁদে পা দিলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়। বিক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন পতিত সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা।
এরপর থেকেই ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের একের পর এক অভিযোগ তুলে ধরছে। এমনকি ছাত্রদের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষকে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাকেই সাম্প্রদায়িকতার রং দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
হিন্দু নেতারা বলছেন, ভারতীয় গণমাধ্যমে যে চিত্র দেখানো হচ্ছে তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনোই মিল নেই। ৫ আগস্টের পরে যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর বেশিরভাগই রাজনৈতিক। এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি সজীব কুন্ডু তপু বলেন, ‘ভারতীয় মিডিয়া অতিরঞ্জিত করে প্রচার করেছে। আমি মনে করি ৫ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট দেশ একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি পার করছিল। যেহেতু তখন পুলিশ প্রশাসন ছিল না।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারত শেখ হাসিনার পতন মেনে নিতে পারেনি। সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ যখন জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বীর আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষের আত্মত্যাগের দৃশ্যে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি, তখন ভারত এই গণ-অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেছে। ভারতের গোলামির জন্য দেশ স্বাধীন করা হয়নি।দিল্লির দাসত্ব ভেঙে দিতে সব ধর্মের মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেছেন, ‘‘আমরা বন্ধু চাই, ভারতের দাসত্ব চাই না। আমরা মিত্রতা চাই কিন্তু অধীনতা চাই না।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ভারতের অপকর্ম ও অপপ্রচার বন্ধে পুরো জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। ভারতের যে কোনো আগ্রাসন এই দেশের জনগণ জীবন ও রক্ত দিয়ে প্রতিহত করতে প্রস্তুত। ভারতকে আর ছাড় দেওয়া হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :