শিরোনাম
◈ মোল্লা কলেজের ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অধ্যক্ষ (ভিডিও) ◈ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নিয়ে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ◈ যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষে মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহতের দাবি কর্তৃপক্ষের ◈ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানে না যাওয়ার ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ ◈ যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ◈ বিশ্ব ১০ বছর পর প্লাস্টিক বর্জ্যের মোকাবিলায় অক্ষম হবে ◈ আখাউড়া স্হলবন্দর দিয়ে ভারতে পালাননোর চেষ্টা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আটক ◈ আইপিএলের নিলামের প্রথম দিনে ৭২ ক্রিকেটারের পেছনে খরচ সাড়ে ৬০০ কোটি ◈ কলম্বিয়াকে হারিয়ে ফুটসাল চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ◈ সবার আগে দেশ, দেশের মানুষ, জনগণের সম্পদ : সারজিস আলম

প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর, ২০২২, ০১:৫৬ দুপুর
আপডেট : ২৭ অক্টোবর, ২০২২, ০১:৫৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে আলট্রাসনোগ্রাফি, যা বললেন ডা. আয়শা আক্তার 

ডা. আয়শা আক্তার

শাহীন খন্দকার: রাজধানীর আগারগাঁওস্থ ২৫০ শয্যার টিবি ও অ্যাজমা হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে মায়ের গর্ভে ভ্রূণের ঠিকমতো বেড়ে ওঠার ব্যাপারটা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য শরীরের ভেতরের শব্দ শুনে চলমান ছবি তৈরি করা হয় যে ব্যবস্থায়, তারই নাম আলট্রাসনোগ্রাফি।

ডা. আয়শা আক্তার বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে বর্তমানে এমন সব যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃর হয়েছে, যার সাহায্যে অতি অল্প সময়ে মানব দেহের রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। তেমনি একটি যন্ত্রের নাম আলট্রাসনোগ্রাফি। এটি অতি উন্নত প্রযুক্তির রোগ নিরুপণ পদ্ধতি। যা শুধুমাত্র নিরাপদ শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়।

ডা. আয়শা আরো বলেন, আলট্রাসনোগ্রাফির শব্দ তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ১-১০ মেগাহার্টজ হয়ে থাকে। এ শব্দ সাধারণত মানুষ কানে শুনতে পায় না। এ শব্দ তরঙ্গ মানুষের শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গে প্রবেশ করানো হয় এবং প্রতিধ্বনি কম্পিউটার যন্ত্রের সাহায্যে একটি টেলিভিশনের পর্দায় ছবি আকারে প্রতিফলিত হয়। তা দেখে চিকিৎসক রোগ নির্ণয় করে থাকেন। মানব দেহের অনেক রোগই এ পদ্ধতিতে নিরূপণ করা হয়। তার মধ্যে লিভার (যকৃত), পিত্তথলী, অগ্নাশয়, প্লীহা, কিডনি, মূত্রথলী, প্রস্টেট গ্রন্থি, জরায়ু, গর্ভাশয়, থাইরয়েড গ্রন্থি, স্তন ও চোখ ইত্যাদি।

এছাড়াও মায়েদের গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের গর্ভের সন্তানের বয়স, ওজন, অবস্থান, জন্মগত ত্রুটি, সন্তানটি জীবিত না মৃত, সন্তানের সংখ্যা, সন্তান ছেলে না মেয়ে ইত্যাদি তথ্য অতি সহজে জানা যায় এর মাধ্যমে। এ ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে বর্তমানে এমন তথ্য জানা সম্ভব নয়।

সহকারি এই পরিচালক বলেন, গর্ভবতী মায়েদের জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি করা খুবই প্রয়োজন। কোন মহিলা গর্ভবতী হওয়ার ২০-২২ সপ্তাহ অথবা ২৮-৩০ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসনোগ্রাফি করা খুবই জরুরি। কারণ এ পরীক্ষা হতে প্রযোজনীয় তথ্য গুলো জানা যায় এবং কোন প্রকার অসুবিধা হলে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিরাপদ থাকা যায়।

এ পরীক্ষায় বাচ্চার মাথা এবং পায়ের হাড় মেপে সে মোতাবেক নারীর ডেলিভারীর তারিখ বা প্রসবের তারিখ বলে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যাদের মাসিকের হিসাব মনে নেই বা হিসাব রাখেন না বা যাদের মাসিক অনিয়মিত তাদের জন্য এ পরীক্ষা খুবই প্রয়োজন। গর্ভের সংখ্যা সর্ম্পকে তিনি বলেন, এ পরীক্ষার সাহায্যে গর্ভে কয়টি সন্তান বিদ্যমান তা সুন্দরভাবে জানা যায়।

প্রসবের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় গর্ভফুলের অবস্থান নির্ণয় করা খুবই দরকার। এ পরীক্ষায় যদি দেখা যায় গর্ভফুল জরায়ুর মুখের কাছাকাছি অথবা জরায়ুর মুখে ঢেকে আছে অথবা নাড়ী বাচ্চাকে পেচিয়ে আছে তাহলে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ অবস্থায় সধারণত স্বাভাবিক প্রসব আশা করা যায় না।

ডা. আয়শা বলেন, এ ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের প্রস্তুতি নিতে হতে পারে। অনেক সময় হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলে তার কারণ জানা যায় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তিনি আরো বলেন, গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান জানা জরুরি কারণ স্বাভাবিক খাড়া অবস্থায় বাচ্চা না থাকলে বিপদের লক্ষণ হতে পারে। বাচ্চা উল্টো বা কোনাকোনি থাকলে এ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। 

ফলে মারাত্নক বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তা ছাড়া পেটের পানির পরিমাণ জানা আরো জরুরি। জরায়ুতে পানিতে ভাসমান অবস্থায় বাচ্চা থাকে। কোন কারণে পানি কমে গেলে বা শুকিয়ে গেলে বাচ্চা মারা যেতে পারে। তাই আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে অনাগত সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

ডা. আয়শা বলেন, গর্ভের সন্তানের বয়স ২০-২২ সপ্তাহ হলেই এ পরীক্ষার মাধ্যমে সন্তান ছেলে না মেয়ে জানা যায়। তবে ২৬ সপ্তাহের পরে স্পষ্টভাবে জানা যায় সন্তান ছেলে না মেয়ে। অনেক সময় গর্ভধারণ জরায়ুর বাহিরে সন্তান বড় হতে থাকে। যা খুবই বিপদজনক। তা আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে জেনে সঠিক চিকিৎসা নিলে বিপদ মুক্ত হওয়া যায়।

তা ছাড়া বাচ্চার হৃদস্পন্দন কম না বেশি তা নির্ণয় করা জরুরি। বর্তমান সময়ে আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যাবহার, গ্রহণ যোগ্যতা এত ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে, অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এমন পরীক্ষাটি করে থাকেন। যা মোটেও ঠিক নয়। রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন কি-না তা নির্ধারণ করবেন চিকিৎসক।

 চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না। টিবি হাসপাতালের সহকারি পরিচালক আরো বলেন, আলট্রাসনোগ্রাফিক মেশিনের আকার ছোট, রোগীর বেডের পাশে বসেই আলট্রাসনোগ্রাফি করা যায়। রোগীর যে অঙ্গে আলট্রাসনোগ্রাফি করা হবে, সেখানে জেল প্রয়োগ করা হয়। 

এই জেল আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনের ট্রান্সডিউসারের সাথে শরীরের সংযোগ ঘটায়। ট্রান্সডিউসার হলো ছোট্ট একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যার ভেতর ইলেকট্রিক কৃস্টালের লেয়ার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক উপাদান ও সংযোগ থাকে। ট্রান্সডিউসার ইলেকট্রিক সিগনালকে আলট্রাসনিক সিগনালে রূপান্তরিত করে। প্রয়োজন অনুসারে আলট্রাসনোগ্রাফিক ট্রান্সডিউসার ১-১০০ মেগাহার্জ কম্পাঙ্কের আলট্রাসাউন্ড  তৈরি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আলট্রাসাউন্ডের সময় আমরা একটি সাউন্ড বা শব্দ ব্যবহার করি। একটি ছোট ডিভাইসের মাধ্যমে রোগীর শরীরের ভেতরে শব্দ ঢুকাই। শব্দ ঢুকিয়ে আমরা ছবি নেই। শব্দ ঢুকিয়ে বিভিন্ন ছবি দেখে এর মাধ্যমে প্যাথলজি বা রোগ নির্ধারণ করতে পারি। পরীক্ষা করার আগে একজন রোগীর নিয়ম অনুসরণ সর্ম্পকে তিনি বলেন, যদি কেউ ওপরের পেট পরীক্ষা করে, তাহলে তাকে ছয় ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হবে। 

আর যদি তলপেটের পরীক্ষা করে, তবে প্রস্রাবের পূর্ণ চাপ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে না খেয়ে থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। গর্ভকালীন অবস্থায়ও সে খেতে পারবে। কারণ, গর্ভাবস্থায় আমরা তলপেটে দেখব। তবে যদি কোনো রোগীর ওপরের এবং নিচের পেট দুটোই আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হয়, তাহলেও তাকে না খেয়ে থাকতে হবে। পাশাপাশি থাকতে হবে প্রস্রাবের চাপও। সম্পাদনা: মাজহারুল ইসলাম

এসকে/এমআই/এএ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়