শুধু পানি নয়, এবার ভাতেও থাবা বসিয়েছে বিপজ্জনক আর্সেনিক। এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে, বাংলাদেশসহ এশিয়ার বহু দেশের ধানজমিতে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক জমা হচ্ছে। এটি পরবর্তীকালে চালের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রভাব ফেলছে।
সম্প্রতি ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ’ জার্নালে এ প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই উদ্বেগ বেড়েছে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞানী লুইস জিসকা ও তার সহকর্মীরা এই গবেষণা করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা চালিয়ে অন্তত ২৮ ধরনের চাল পরীক্ষা করে আর্সেনিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। তারা সতর্ক করে বলেছেন, এশিয়ার দেশগুলোই রয়েছে বিপদে। কারণ বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, তাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো দেশে চালের মধ্যে পাওয়া গেছে আর্সেনিক।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞানী লুইস জিসকা জানিয়েছেন, ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়ার আরও নানা দেশের ধানজমিগুলোর নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে অন্তত ২৮ রকমের চাল পরীক্ষা করে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইডের মাত্রা বাড়ছে, যা মাটি ও পানিকে দূষিত করছে। এছাড়া কীটনাশকের এত বেশি ব্যবহার হচ্ছে চাষের জমিতে, যা বিপদের কারণ হয়ে উঠছে। পরে ধান ও চালের মধ্যেও প্রবেশ করছে আর্সেনিক। আর্সেনিকের উপস্থিতি সেদ্ধ চালেই বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরের প্রতি কেজি ওজনে দুই মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি এই মাত্রা পেরিয়ে যায়, তখন হার্ট, কিডনি, ফুসফুসের রোগ তো হবেই, পাশাপাশি ক্যানসারের ঝুঁকিও বহু গুণে বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে দেখা দেবে স্নায়ুর জটিল রোগ।
আর্সেনিকের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ‘আর্সেনিক-থ্রি’, যাকে সাধারণভাবে ‘আর্সেনাইড’ বলা হয়। চালে এই ধরনের আর্সেনিকের মাত্রাই বেশি।
গবেষকরা সতর্ক করে বলছেন, কোনো ব্যক্তি নিয়মিত এই চাল থেকে তৈরি ভাত, চিড়া, খই, মুড়ি খেলে আর্সেনিকের প্রকোপে নানা রকম চর্মরোগের ঝুঁকিও বাড়বে। তাই ভূগর্ভস্থ পানি সেচের কাজে ব্যবহার করা বন্ধ না হলে এই বিপদ থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় নেই। উৎস: সময়নিউজটিভি।