অনেক পরিশ্রম ও নিয়ম মানার পর ওজন কমেছে; কিন্তু ভুঁড়ি কমছে না অনেকের। খাওয়া কমিয়েছেন, নিয়মিত ব্যায়ামও করছেন; তবুও কমছে না ভুঁড়ি। এমনটা কেন হয়?
পেটের মেদ কমাতে হলে আপনাকে সত্যিকার অর্থে এক স্বাস্থ্যকর জীবনধারার চর্চা করতে হবে। কী খাবেন, কী খাবেন না, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। কেবল পরিমাণে কম খাওয়াই সমাধান নয়। অল্প খাবারেও অনেক বেশি ক্যালরি থাকতে পারে। তা ছাড়া কোন ধরনের ব্যায়াম করলে পেটের মেদ কমবে, তা–ও জানা থাকতে হবে। জীবনধারার অন্যান্য দিকও ঠিক রাখতে হবে। এমনটাই বলছিলেন ডা. তাসনোভা মাহিন।
খাবার: তেল-চর্বি, মিষ্টি ও শর্করাজাতীয় খাবার কম খেতে হবে, এ তো সবারই জানা। তবে আধুনিক শহুরে জীবনধারায় অনেকেই প্রক্রিয়াজাত খাবার খান। এ অভ্যাস মেদ ঝরানোর অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই হোল গ্রেইন বা গোটা শস্য থেকে তৈরি করা খাবার বেছে নিন। লাল চাল, লাল আটা, ওটস, ছাতু, কর্নফ্লেক্স খেতে পারেন। ইনস্ট্যান্ট খাবার, অর্থাৎ ঝটপট রান্না করা যায়, এমন খাবার খাবেন না। তেল ছাড়া পরোটা খাচ্ছেন? এই ভুল একদমই করবেন না। এতে প্রচুর ক্যালরি থাকে। আকারে খুব বড় না হলেও শিঙাড়া, সমুচা, পুরি, পেটিস প্রভৃতিতেও প্রচুর ক্যালরি থাকে। এসব একেবারেই বাদ দিন। সস, কেচাপ, মেয়োনিজও বাদ দিতে হবে। ফলমূল, শাকসবজি খাবেন নিয়মিত। নানা রকম ফলমূল ও শাকসবজি খাবেন। বৈচিত্র্য আনবেন পদে। তাহলে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ধরে রাখা সহজ হবে। তবে মিষ্টি ফল খুব বেশি খাবেন না। আলু ও মিষ্টি আলুও কম খাবেন।
পানীয়: মাত্র এক চা-চামচ চিনিই ভুঁড়িটাকে ‘টিকিয়ে’ রাখার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। একই কারণে কোমল পানীয়, মিষ্টি শরবত বা জুসও খাবেন না। বাদামি চিনি, গুড় বা মধুও নয়। পানিশূন্যতার কারণে আপনি ক্ষুধার্ত অনুভব করতে পারেন। সেই ক্ষুধা মেটাতে চট করে ফাস্ট ফুড বা ভাজাপোড়া খাবার খেয়ে ফেলতে পারেন। তাই পানি খাবেন পর্যাপ্ত।
ব্যায়ামের ধরন: আপনি হয়তো ব্যায়াম করছেন, কিন্তু তা ভুঁড়ি কমাতে কার্যকর হচ্ছে না। এমন ব্যায়াম করুন, যাতে আপনার দেহের পেশি বেশ নাড়াতে হয়। দৌড়ান, সাইকেল চালান, সাঁতার কাটুন কিংবা হুলা হুপ ঘোরান কোমরের চারপাশে। লাফঝাঁপ করে খেলাধুলা করতে পারলে তো দারুণ হয়। দড়িলাফের চর্চাও করতে পারেন। এভাবে দেহের নানা অংশের মেদ কমে। ওজন তোলার ব্যায়াম করা ভালো। ঘাম ঝরিয়ে এ ধরনের ব্যায়াম করুন। এমনভাবে ব্যায়াম করুন, যাতে আপনার হৃৎপিণ্ডের গতি বাড়ে, বাড়ে শ্বাসপ্রশ্বাসের গতিও। ভুঁড়ি কমানোর জন্য আপনার ব্যায়ামের সময়ও বাড়াতে হতে পারে।
ঘুম ও মন: আপনি হয়তো সবই করছেন, কিন্তু মুঠোফোন স্ক্রল করতে করতে রাত তিনটা বাজিয়ে দিচ্ছেন। ওদিকে আবার অফিসের তাড়ায় উঠে পড়ছেন সাতটায়। এভাবে কিন্তু ভুঁড়ি কমানো মুশকিল। রোজ কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুমান। ভালো ঘুম না হলে মেদ ঝরানো কঠিন। রোজ নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান। ব্যায়াম করলে আপনি ক্লান্ত হবেন। সহজে ঘুমও আসবে। মানসিক চাপে থাকলেও মেদ ঝরাতে পারবেন না। আমরা যখন চাপে থাকি, তখন আমাদের দেহে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এর প্রভাবে মেদ জমে। তাই মনকে প্রফুল্ল রাখুন। মনের চাপ কমান। তাতে ঘুমের সমস্যাও মিটবে। সব মিলিয়ে মেদ ঝরানো সহজ হবে।
ধূমপান: আপনি যদি ধূমপান করেন, তাহলে মেদ ঝরাতে মুশকিলে পড়বেন। ধূমপান করলে রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ বাড়ে। দেহের বিভিন্ন অংশে মেদ জমে থাকে। তাই অবশ্যই ধূমপান বর্জন করুন।