ঝকঝকে হাসপাতাল, চালু আছে চলন্ত সিঁড়ি, সুপরিসর লিফট। কিন্তু দেড় হাজার কোটি টাকার বিশাল অবকাঠামোর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেই রোগীর আনাগোনা। উদ্বোধনের আড়াই বছর পার হলেও চালু হয়নি হাসপাতাল। জনবলসংকটে চালু না হওয়ায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ২৮৩ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। জুলাইয়ের মধ্যে এ হাসপাতাল সচল করতে জনবল নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে নতুন প্রশাসন।
রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর অধীনে গড়ে তোলা হয়েছে এ হাসপাতাল। রোগীদের বিদেশমুখিতা কমাতে এবং উন্নত দেশের মতো প্রথমবারের মতো সেন্টার বেইজড চিকিৎসাসেবা পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা নিয়ে নির্মিত হয়েছিল এ হাসপাতাল। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা হাসপাতালজুড়ে। হাসপাতালের কেবিনে ১৫ আর ওয়ার্ডে মাত্র ২২ জন রোগী ভর্তি। সিসিইউ, আইসিইউ কিছুই চালু হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিএসএমএমইউ সূত্র জানিয়েছেন, ভুল ব্যবস্থাপনা, জনবল নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চাহিদার ৮৯ শতাংশ কম জনবল দিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে গড়ে ওঠা বিশেষায়িত এ হাসপাতাল। অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ খরচ হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০৩ রকমের ৬ হাজার ৬১২টি চিকিৎসাযন্ত্র কেনা হয়েছে ২৮৩ কোটি টাকায়। এসব যন্ত্রপাতি ২০২২ সালের আগস্ট ও ডিসেম্বরে দুই ধাপে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ করে দক্ষিণ কোরিয়ার বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্যামসাং। যন্ত্রগুলো সেবার উপযোগী থাকলেও জনবল না থাকায় ৯০ শতাংশ এক দিনও ব্যবহার হয়নি। এসব যন্ত্রের সর্বোচ্চ মেয়াদ রয়েছে তিন বছর। ফলে ব্যবহারের আগেই শেষ মেয়াদের দুই বছর। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জনবলসংকটের সমাধান না হলে যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণে নতুন করে টাকা খরচ করতে হবে সরকারকে।
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মো. শহিদুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাসপাতাল পুরোদমে চালু হতে জনবলসংকট মূল সমস্যা। ৭৫০ বেডের হাসপাতালে জনবল লাগে ২ হাজার ৭০০-এর বেশি। কিন্তু আমাদের এখানে এখন ৩০০-এর মতো জনবল আছে। আইসিইউ, সিসিইউ, এনআইসিইউ, হেপাটোবিলিয়ারি, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সব জায়গায় জনবলসংকট। নতুন নিয়োগে অর্থ কোথা থেকে আসবে তা-ও এক বড় সমস্যা। মন্ত্রণালয় বেতনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম ধাপে ৩০০ বেড চালু করার জন্য ১ হাজার ৫৪৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে সিনিয়র চিফ কনসালট্যান্ট আট, চিফ কনসালট্যান্ট ২২, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ৩২, কনসালট্যান্ট ৫৭, মেডিকেল অফিসার ২৩১ এবং ৫৯৮ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, অন্যান্য স্টাফ ও আউটসোর্সিং থাকবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট মিটিংয়ের পর জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, গত বছরের শুরুতে বেশ কিছু নিয়োগে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিতর্কের কারণে জটিলতা তৈরি হলে থেমে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া। হাসপাতালে সেবা দিতে পাঁচ দফায় ১৬০ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে যুক্ত হয়েছেন মাত্র ৩২ জন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশিক্ষণই বন্ধ করে দিয়েছে কোরিয়া। নিয়োগ থেকে শুরু করে হাসপাতালের ফার্মেসি দরপত্রে পর্যন্ত ঘটেছে দুর্নীতি।
বিএসএমএমইউর প্রক্টর ডা. শেখ ফরহাদ বলেন, ‘৩০০ বেড চালুর সময় চারটি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হবে। ইনফার্টিলিটি, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ও কার্ডিয়াক। যেসব রোগের চিকিৎসায় রোগী বেশি বিদেশ যান তারা এখানে অত্যাধুনিক সেবা পাবেন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে যেসব বাংলাদেশি ডাক্তার আছেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অনেকে দেশে এসে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে সাড়া দিয়েছেন।’ যন্ত্রপাতির মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বছরের জুলাইতে বেশ কিছু যন্ত্রপাতির মেয়াদ শেষ হবে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকের নেতৃত্বে বিশেষ টিম বানানো হয়েছে, তারা সার্বিক বিষয় জানাবে। কিছু মেশিনের দুই বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি আছে।’ সেসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
আপনার মতামত লিখুন :